আইপিএলে ইংলিশদের নিয়ে ‘উঁচু দরের’ হতাশা

স্যাম কারান, বেন স্টোকস ও হ্যারি ব্রুকছবি: টুইটার

আইপিএলের এ মৌসুমের আগে হয়েছে মেগা নিলাম। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দলের সদস্যদের দিকে বাড়তি আগ্রহ ছিল দলগুলোর, সেটি বলাই যায়। নিলামেও ছাপ পড়েছিল সেটির। এবারের নিলামে যেসব খেলোয়াড়ের দাম সর্বোচ্চ ছিল, এ তালিকায় প্রথম পাঁচজনের তিনজনই ছিলেন ইংলিশ। তবে এ তিনজনই ব্যর্থ হয়েছেন নিজের নামের (কিংবা দামের) প্রতি সুবিচার করতে।

আরও পড়ুন

স্যাম কারান (ইংল্যান্ড) (পাঞ্জাব কিংস)
নিলামে মূল্য—১৮ কোটি ৫০ লাখ

শুধু এ মৌসুম নয়, আইপিএল নিলামের ইতিহাসেই সর্বোচ্চ মূল্যের খেলোয়াড় বনে গেছেন স্যাম কারান। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের ম্যাচসেরা, টুর্নামেন্টসেরা এ অলরাউন্ডারের রেকর্ডভাঙা এমন দামে হয়তো খুব একটা অবাক অনেকেই হননি সে সময়। তবে কারানের পারফরম্যান্স কি তেমন ছিল এবার?

ইংল্যান্ডের হয়ে ছয়-সাতেই খেললেও পাঞ্জাবের হয়ে একটু ওপরের দিকেও ব্যাটিং করেছেন কারান। সেটির প্রতিফলনও অবশ্য আছে তাঁর ব্যাটিং পারফরম্যান্সে। ১৩৫.৯৬ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন, ২৭৬ রান করেছেন, আছে একটি ফিফটিও। শিখর ধাওয়ানের অনুপস্থিতিতে পাঞ্জাবকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি।

তবে মূল যে কাজ, সেই বোলিংয়ে নিষ্প্রভই ছিলেন বলা যায়। ১৪ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১০টি উইকেট, ওভারপ্রতি খরচ করেছেন ১০.২২ করে রান। যে ডেথ বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছিলেন, সেখানে ৭টি উইকেট নিলেও কারান খরচ করেছেন ১০.৫৫ করে রান।

প্লে-অফের আগেই বিদায় নিয়েছে কারানের দল পাঞ্জাব, পয়েন্ট তালিকায় ১০ দলের মধ্যে তাদের অবস্থান ছিল আটে।

আরও পড়ুন

বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড) (চেন্নাই সুপার কিংস)

নিলামে মূল্য—১৬ কোটি ২৫ লাখ

প্লে-অফ বাকি, অথচ বেন স্টোকস এরই মধ্যে ছেড়ে গেছেন আইপিএল। গ্রুপ পর্বে চেন্নাইয়ের শেষ ম্যাচের পরই দেশে ফিরে যান ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক, তাঁকে শুভকামনাও জানায় চেন্নাই। স্টোকসের এবারের আইপিএল শেষ তাই ২ ম্যাচ খেলেই। ইংল্যান্ডের সামনের গ্রীষ্মের প্রস্তুতির জন্য আগেভাগেই আইপিএল ছেড়ে যাবেন তাদের টেস্ট অধিনায়ক, সেটি অবশ্য জানা গিয়েছিল আগেই।

স্টোকস কেমন, এ সংস্করণেও তিনি কতটা প্রাসঙ্গিক—গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালেই বুঝিয়েছিলেন। মেগা নিলামে চেন্নাই তাঁর পেছনে খরচ করেছিল ১৬ কোটি ২৫ লাখ রুপি। অথচ সেই তিনিই খেলেছেন মাত্র দুটি ম্যাচ।

গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচে ৭ রান করার পর লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের বিপক্ষে আরেক ম্যাচে করেন ৮ রান। প্রথম ম্যাচে বোলিং করেননি, দ্বিতীয় ম্যাচে ১ ওভার করে দিয়েছিলেন ১৮ রান। এরপর বাকিটা সময় স্টোকস কাটিয়েছেন চেন্নাইয়ের বেঞ্চে বসেই।

শুরুতে পায়ের আঙুলের চোট, এরপর অন্য আরেকটি সমস্যার কারণে বাইরে থাকতে হয়েছিল। এরপর ফিট হয়ে উঠলেও দলে জায়গা পাননি। ডেভন কনওয়ে, মঈন আলী, মাথিশা পাতিরানা, মহীশ তিকসানার ওপরই ভরসা রেখেছে চেন্নাই। দলটির কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং বলেছিলেন, ‘ব্যাটিংয়ের বিকল্প’ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছিল স্টোকসকে। এরপর অবশ্য আর খেলানো হয়নি তাঁকে।

আরও পড়ুন

হ্যারি ব্রুক (ইংল্যান্ড) (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ)
নিলামে মূল্য—১৩ কোটি ২৫ লাখ

‘মনে হয় আমার সেঞ্চুরির হাইলাইটসটা এরই মধ্যে ২৫ বার দেখে ফেলেছি’।
গত ২ মে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন হ্যারি ব্রুক। তবে আইপিএলে যেমন মৌসুম গেছে, তাতে ব্রুক পেছন ফিরে অন্য কোনো ইনিংসের হাইলাইটস দেখতে চাইলেও ঠিক পাবেন না। সেঞ্চুরির ওই ইনিংসেই যে শেষ ব্রুকের ঝলক।

ইসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে থাকলেও ব্রুককে নিতে এবার বেশ মোটা অঙ্কই খরচ করে হায়দরাবাদ। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ব্রুক খেলেছিলেন ৫৫ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস। তবে সে ম্যাচের আগে-পরে আর একটিতেও ব্রুক ৩০ রানই পেরোতে পারেননি। তিনবার তো আউট হয়েছেন ০ রানেই। এমন ফর্মের কারণে ব্রুককে দলের বাইরেও বসিয়ে রেখেছিল হায়দরাবাদ।

নিলামে সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়া খেলোয়াড়দের তালিকায় ব্রুকের ঠিক পরেই (ছয়ে) ছিলেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। তাঁকে দলে নিতে হায়দরাবাদ খরচ করেছিল ৮ কোটি ২৫ লাখ রুপি। আগারওয়ালও অবশ্য নিষ্প্রভই ছিলেন। পুরো মৌসুমে একবার ফিফটি পেরিয়েছেন, ব্যাটিং করেছেন ২৭ গড় ও ১২৮.৫৭ স্ট্রাইক রেটে। এ দুজনকেই ব্যাটিং অর্ডারে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলিয়েছে হায়দরাবাদ, তবে সফল হয়নি সেটি।

দুজনের পেছনে হায়দরাবাদের খরচ ছিল ২১ কোটি ৫০ লাখ রুপি। দলটি মৌসুম শেষ করেছে পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচে থেকেই।

ব্যতিক্রম গ্রিন ও পুরান

ক্যামেরন গ্রিন (অস্ট্রেলিয়া), মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, ১৭ কোটি ৫০ লাখ রুপি
নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস, ১৬ কোটি রুপি

সর্বশেষ নিলামে সর্বোচ্চ মূল্যের তালিকায় দুইয়ে ছিলেন গ্রিন, চারে পুরান। প্লে-অফের আগে দুজনের যা পারফরম্যান্স, তাতে পয়সা উশুল বলতেই হবে।

বাঁচা-মরার ম্যাচে হায়দরাবাদের বিপক্ষে গ্রিন করেছেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১৫৯.৪১ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন, গড় ৫৪.৪২। পাশাপাশি বোলিংয়েও নিয়েছেন ২ উইকেট।

উজ্জ্বল লক্ষ্ণৌয়ের নিকোলাস পুরানও। সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক খেলেছেন ম্যাচজয়ী ইনিংস, মৌসুমে এখন পর্যন্ত তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৭৩.৭৮, গড় ৩২.৫৪। দুজনের দলই উঠে গেছে প্লে-অফে। ফলে সুযোগ পাবেন আরও। যদিও এলিমিনেটর ম্যাচে আজই মুখোমুখি দুজনের দল, একজনকে তাই আজ বিদায় নিতেই হবে।