সেই ভুঁড়িওয়ালাই এখন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের ‘রাজা’
ভানুকা রাজাপক্ষে নাদুসনুদুস মানুষ। খেতে খুব পছন্দ করেন। দেখলেই সেটা বোঝা যায়। এশিয়া কাপ চলাকালে টিম হোটেলে গেলেই রাজাপক্ষের সঙ্গে দেখা হতো। দুপুর হতে না হতেই বাইরে থেকে অর্ডার দেওয়া খাবার নিতে হোটেলের লবিতে আসতেন এই শ্রীলঙ্কান মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। একটা ব্যাপার নিশ্চিত, আগে থেকে না চিনলে হাফপ্যান্ট ও টি-শার্ট পরা অবস্থায় কেউ-ই তাঁকে ক্রিকেটার বলবেন না।
আধুনিক ক্রিকেটাররা আজকাল যেমন দেখতে, সেটার সঙ্গে রাজাপক্ষের কোনো মিল নেই। তাঁর ভুঁড়ি আর মেদবহুল মুখমণ্ডল দেখে আর যা–ই হোক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই।
কাল এশিয়া কাপের ফাইনাল শেষে রাজাপক্ষে সংবাদ সম্মেলনেও এসেছেন ঠিক একইভাবে, শরীর দুলিয়ে। গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি। মুখভর্তি হাসি। হাতে ফাইনালের ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি। নিজের শরীর নিয়ে কোনো জড়তা নেই, বরং সাফল্য–উজ্জ্বল একজন গর্বিত ক্রিকেটারের প্রতিচ্ছবিই যেন রাজাপক্ষে।
রাজাপক্ষের মেদ-ভুঁড়ি নিয়ে এত কথা বলার একটা কারণ আছে। এক বছর আগে রাজাপক্ষের এই ভুঁড়িই পছন্দ হচ্ছিল না শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটকর্তাদের। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করার পরও স্কিনফোল্ড টেস্টে পাস না করায় তাঁকে দলের বাইরে রাখা হয়। তাই হুট করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে বসেন রাজাপক্ষে। এই বাঁহাতির বয়স মাত্র ৩০। এরপর বোর্ডের অনুরোধে ১০ দিন পর আবার অবসর ভেঙে খেলায় ফেরেন।
স্কিনফোল্ড টেস্টে ক্রিকেটারের শরীরের মেদ হিসাব করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই স্কিনফোল্ড টেস্ট পছন্দ হয়নি রাজাপক্ষের। গত আইপিএলের সময় এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘আমাকে অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে। কারণ, শ্রীলঙ্কান বোর্ড আমাকে বলেছে অবসর ভেঙে ফিরতে। আমার স্কিনফোল্ড টেস্টে সমস্যা ছিল, যার কারণে আমি নিজ দেশের হয়ে খেলতে পারছিলাম না। আমি বোর্ডের যে ফিটনেসের চাহিদা ছিল, সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না।’
এই ফিটনেস টেস্ট নিয়ে রাজাপক্ষে শুরু থেকেই সমালোচনা করে আসছেন। গত বছর জুলাইতে যখন তাঁকে স্কিনফোল্ড টেস্টের কারণ দেখিয়ে জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া হয়, তখন তিনি সংবাদমাধ্যমে বোর্ডের সমালোচনা করে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। পরে বোর্ডও তাঁকে পাঁচ হাজার ডলার জরিমানা করে। তখনকার কোচ মিকি আর্থারও রাজাপক্ষের আচরণ, পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এরপরই গত জানুয়ারিতে এল রাজাপক্ষের অবসর নেওয়ার ঘটনা।
সেই রাজাপক্ষেই এখন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ‘রাজা’। এশিয়া কাপের ফাইনালের রাতে পাকিস্তানের আগুনে বোলিংয়ে ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কাকে তিনি ৬ উইকেটে ১৭০ রানে নিয়ে যান। চাপের মুখে মেরে খেলার স্পর্ধা দেখিয়ে রাজাপক্ষে খেলেছেন ৪৫ বলে ৭১ রানের স্মরণীয় ইনিংস। ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি শ্রীলঙ্কার রানটাকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবস্থায়। আর তাতেই ধরা দেয় কাঙ্ক্ষিত শিরোপা।
এই ইনিংসের সূত্র ধরেই কাল সংবাদ সম্মেলনেও এসেছে রাজাপক্ষের অবসরের প্রসঙ্গটি। এর আগে রাজাপক্ষের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি ইনিংস ছিল ৭৭ রানের। কিন্তু এশিয়া কাপের ফাইনালে দলের বিপদে পাকিস্তানি বোলিংয়ের বিপক্ষে এই ৭১ রানের ইনিংসকেই রাজাপক্ষে অন্য সেরা বলেছেন, ‘অবশ্যই। অসাধারণ মুহূর্ত ছিল ম্যাচের ওই সময়টা। এটা আমার অন্যতম সেরা ইনিংস।’
টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই রাজাপক্ষে লঙ্কান ক্রিকেটের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার কথা বলছিলেন। কাল এশিয়া কাপ জেতার পরও একই কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি, ‘আমরা পুরো বিশ্বকে দেখাতে চাই, আমাদের সামর্থ্য কতটুকু। আগে আমাদের দলের মধ্যে একটা আক্রমণাত্মক মানসিকতা ছিল। অতীতে আমরা দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দিয়েছি। এই দল নিয়ে আমরা তেমনই কিছু মুহূর্ত তৈরি করতে চাই।’