বাউন্ডারি হিটার মাহমুদউল্লাহর খোঁজে ডমিঙ্গো
লেগ স্টাম্প হাফ ভলি বলতে যা বোঝায়, রাসেল ডমিঙ্গোর করা বলটা ছিল ঠিক তা–ই। স্ট্রাইকে থাকা মাহমুদউল্লাহ সে বলটি ফ্লিক করতে গিয়ে হলেন বোল্ড। যেকোনো মাঝারি মানের ব্যাটসম্যান এ ধরনের বলটাকে মিড উইকেট বা স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে পাঠাবেন। আর মাহমুদউল্লাহ তো বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। মিডল অর্ডার ব্যাটিংটা কী, এ দেশে সে পাঠ দেওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তিত্ব হয়তো তিনিই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি কী করে দেখিয়েছেন, সে পরিসংখ্যান তো সবার জানা।
কিন্তু মাহমুদউল্লাহ আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরে একটি লেগ স্টাম্প হাফ ভলিতে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ৩৫ বলে ১৪ রানের ইনিংসেও এমন বেশ কয়েকটি বলের পুরোপুরি ফায়দা নিতে পারেননি তিনি। তাঁর সময়টা যে খারাপ যাচ্ছে, হয়তো সেটারই প্রমাণ এটি। মাহমুদউল্লাহ, ডমিঙ্গো—দুজনই হয়তো বিষয়টি জানেন। আজ নেটে বোল্ড হওয়ার পর নেটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুজন কিছুক্ষণ কথা বললেন। ডমিঙ্গো তাঁর হাতের ডকস্টিক দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন লেগ সাইডে কীভাবে বলটা খেলা উচিত ছিল। শট খেলার সময় মাথাটা কোথায় থাকবে, সেটি নিয়েও দুজন কিছুক্ষণ কথা বললেন।
কিছুক্ষণ পর ডমিঙ্গো আরও একটি বল করলেন ঠিক একই জায়গায়, লেগ স্টাম্প হাফ ভলি। এবার মাহমুদউল্লাহ ফ্লিক শটটা খেললেন ঠিকই। কিন্তু টাইমিং হলো না। ডমিঙ্গো আবার এগিয়ে গেলেন। মাহমুদউল্লাহও এগিয়ে এলেন কোচের কথা শুনতে। শটটা মিড উইকেটে না খেলে লং অনের দিকে খেলার চেষ্টা করতে বললেন। আরও কিছু বল খেলার পর অবশেষে ডমিঙ্গোর প্রত্যাশা মেটালেন মাহমুদউল্লাহ। ফ্লিক শটটা জুতসই হওয়ার পর মাহমুদউল্লাহর অন্য রকম চেহারাটা বেরিয়ে এল। নেট ছিঁড়ে ফেলার মতো দুটি পুল শটের পর আরও কিছু লফটেড ড্রাইভ, মাহমুদউল্লাহর আক্রমণাত্মক শটগুলো চমকে দিচ্ছিল সবাইকে। ডমিঙ্গোর মুখে তখন হাসি। তিনি যেন এই বিস্ফোরক চেহারাটা দেখার অপেক্ষাতেই ছিলেন।
মাহমুদউল্লাহ নেট ছেড়েছেনও সে চেহারাটা নিয়ে। থ্রোয়ার রমজানের বল সজোরে ড্রাইভ করেই নেট থেকে দৌড়ে বের হতে দেখা গেল তাঁকে। এরপর আর একমুহূর্তও ইনডোরে থাকলেন না মাহমুদউল্লাহ। দৌড়ে ইনডোর থেকে বেরিয়ে চলে এলেন মিরপুরের মাঝমাঠে, সেখান থেকে প্যাড-হেলমেট খুলে ড্রেসিংরুমে। যেন নেট থেকে যা নেওয়ার পুরোটাই নেওয়া শেষ।
ঘণ্টাখানেক পর ডমিঙ্গো সংবাদ সম্মেলনে এসে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে নেট সেশনের প্রসঙ্গটা টেনে আনলেন, ‘আমি ইনটেনসিটি নিয়ে কাজ করছিলাম। প্রথম ম্যাচে সে রান না করে আউট না হওয়ার চেষ্টা করছিল। সে কারণেই লেগ স্টাম্প হাফ ভলি মারতে পারছিল না। সে যদি রান করার চেষ্টা করত, তাহলে সে বলটাকে চার মারতে পারত। আজ সেটা নিয়েই কাজ করছিলাম।’
তবে মাহমুদউল্লাহকে এখনো তিনি বাংলাদেশ দলের বিপদের বন্ধু মনে করেন। চাপের মুখে বাংলাদেশকে বিপদমুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতায় যথেষ্ট আস্থা ডমিঙ্গোর, ‘আমি এখনো বাংলাদেশকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের করে আনার ক্ষেত্রে মাহমুদউল্লাহর সামর্থ্যে আস্থা রাখছি।’ মাহমুদউল্লাহর ফর্ম নিয়ে যে আলোচনা, তাতেও কান দিতে রাজি নন প্রধান কোচ, ‘তার মনে হয় জিম্বাবুয়েতে ৮০ রানের ইনিংস ছিল। তার ব্যাটিং–সামর্থ্যে আমার আস্থা আছে।’