শততম টেস্টের নতুন চার
টিস্যু পেপার জোগাড় করে রেখেছেন জনি বেয়ারস্টো। চোখ মুছতে হবে যে! ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান গত পরশুই জানিয়ে রেখেছেন, যেকোনো সময় আবেগ সামলাতে না পেরে ভিজে যেতে পারে তাঁর চোখ।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন তো আবার খুলে দিয়েছেন স্মৃতির ঝাঁপি। পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারটাই নাকি চোখের সামনে ভেসে উঠছে ভারতীয় অফ স্পিনারের। অশ্বিনকে উদ্দেশ করে তাঁর স্ত্রী প্রীতি তো আবেগঘন এক খোলা চিঠিও লিখে ফেলেছেন।
ওদিকে কেইন উইলিয়ামসনও স্মৃতির ডালা খুলে দিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবার ব্যাটিং করতে নামার সময় কী করেছিলেন, সেই স্মৃতিচারণা করছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক। আগামী কয়েকটা দিন যে তাঁর ও সতীর্থ টিম সাউদির জন্য খুব আবেগময় যাবে, বলেছেন সেটিও।
এটাই স্বাভাবিক। অশ্বিন, বেয়ারস্টো, উইলিয়ামসন, সাউদিদের জন্য আগামী কয়েকটা দিন আবেগময় না হলেই বরং অবাক হতে হতো। শততম টেস্ট এমন এক মাইলফলক, যা আবেগে ভাসিয়ে নিতে বাধ্য।
সবকিছু ঠিক থাকলে আজ শততম টেস্ট খেলতে নামবেন অশ্বিন ও বেয়ারস্টো। ধর্মশালায় ভারত-ইংল্যান্ড পাঁচ ম্যাচ সিরিজের পঞ্চম টেস্টটি মিলিয়ে দিচ্ছে দুজনকে। উইলিয়ামসন ও সাউদির ‘১০০’র দেখা পেতে আর এক দিনের অপেক্ষা। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে ক্রাইস্টচার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামার কথা তাঁদের।
প্রথম টেস্টে হারলেও পরের তিনটি টেস্ট জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে ভারত। ‘মরা’ ধর্মশালা টেস্ট তবু ‘জীবন্ত’ অশ্বিন-বেয়ারস্টোর জন্য। শততম টেস্টটা অশ্বিন-বেয়ারস্টোরা যেন জয় দিয়েই উদ্যাপন করতে পারেন, সতীর্থরা তো এটা চাইবেনই। ও হ্যাঁ, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই যুগে আবার ‘মরা’ ম্যাচ কিসের!
ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট অবশ্য সবার জন্যই জীবন্ত। শততম টেস্ট খেলতে নামা দুজনের জন্য আরও বেশি। প্রথম টেস্টে হেরেছে নিউজিল্যান্ড, এই টেস্টটা জিততে না পারলে অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার সিরিজ হারের কালি লাগবে সাউদির গায়ে। অধিনায়ক হিসেবে খেলা পাঁচটি সিরিজেই অপরাজিত সাউদি সংখ্যাটাকে নিশ্চিত ছয়ে নিতে চাইছেন।
শততম টেস্ট খেলতে যাওয়া সাউদির জন্য উপলক্ষটা বড় হয়ে গেছে আরেকটি কারণেও। রস টেলর, বিরাট কোহলি ও ডেভিড ওয়ার্নারের পর মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই ১০০ ম্যাচ খেলা হবে কিউই পেসারের।
শততম টেস্ট খেলতে যাওয়া চারজনের মধ্যে সাউদির অভিষেকই সবার আগে। প্রথম টেস্ট খেলেছেন ২০০৮ সালে। সতীর্থ উইলিয়ামসনের টেস্ট অভিষেক এর দুই বছর পর। অশ্বিনের টেস্টে আবির্ভাব ২০১১ সালে, পরের বছর বেয়ারস্টোর। সাউদি-বেয়ারস্টোরা যে ‘১০০’-তে মিলে গেলেন, সেটির বড় কারণ তো অনুমেয়ই। ইংল্যান্ড টেস্ট অনেক বেশি খেলে।
সবচেয়ে কম সময়ে
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক অভিষেকের ৭ বছর ৯ মাস ১৩ দিনের মাথায় খেলতে নামেন শততম টেস্ট। ২০০৬ সালে অভিষিক্ত কুক ১০০ নম্বর টেস্ট খেলেন ২০১৩ সালে।
এই চতুষ্টয়ের মধ্যে বেয়ারস্টোর ফর্মই সবচেয়ে খারাপ যাচ্ছে। এই সিরিজের ৮ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরিও নেই, সর্বোচ্চ মাত্র ৩৮। হ্যারি ব্রুক এই সিরিজ থেকে নিজেকে সরিয়ে না নিলে হয়তো বাদই পড়ে যেতেন। বাজবল-যুগের সূচনাটাকে বর্ণিল করে দেওয়ায় বড় ভূমিকা ছিল বেয়ারস্টোর। সেই ঋণ শোধ করার দায়ও হয়তো বোধ করেছেন স্টোকস-ম্যাককালাম।
এবার বেয়ারস্টোর প্রতিদান দেওয়ার পালা। শততম টেস্টে অবশ্য এমন কোনো অনুপ্রেরণার দরকার হয় না। এই মাইলফলক ছোঁয়াটাই বেয়ারস্টোর জন্য যেমন ভালো করার প্রেরণা, অন্য তিনজনের জন্যও তা-ই।
সবচেয়ে বেশি সময়ে
শততম টেস্ট খেলতে সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক গ্রাহাম গুচের—১৭ বছর ৬ মাস ২০ দিন। ১৯৭৫ সালে অভিষিক্ত গুচ শততম টেস্ট খেলেন ১৯৯৩ সালে। এই সময়ে ৭৭টি টেস্টে ইংল্যান্ড দলে ছিলেন না গুচ।
শততম টেস্টে
সর্বোচ্চ ইনিংস
২১৮, জো রুট, ইংল্যান্ড
ইনিংস–সেরা বোলিং
৬/৫৪, মুত্তিয়া মুরালিধরন, শ্রীলঙ্কা
সেঞ্চুরি
১০ জন ব্যাটসম্যান শততম টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়েছেন—কলিন কাউড্রে, জাভেদ মিয়াঁদাদ, গর্ডন গ্রিনিজ, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, ইনজামাম-উল-হক, রিকি পন্টিং, গ্রায়েম স্মিথ, হাশিম আমলা, জো রুট ও ডেভিড ওয়ার্নার। তাঁদের মধ্যে পন্টিং করেছেন জোড়া সেঞ্চুরি। রুট ও ওয়ার্নার ডাবল সেঞ্চুরি।
ইনিংসে ৫ উইকেট
৩ জন বোলার শততম টেস্ট ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন—শেন ওয়ার্ন, মুত্তিয়া মুরালিধরন ও অনিল কুম্বলে।