মাহমুদউল্লাহ-ফাহিম ঝড়ে ম্লান ইয়াসিরের ৯৪, দারুণ জয়ে শুরু বরিশালের

ফরচুন বরিশালকে দারুণ এক জয় এনে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহশামসুল হক

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গেট ভেঙেছে। টিকিট না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন দর্শকেরা। আজ দুপুরে এমন হাঙ্গামা দিয়েই শুরু হয়েছে এবারের বিপিএল। তবে এই নেতিবাচকতা পেছনে ফেলে মাঠের ক্রিকেটটা সত্যিকার অর্থেই পেল অসাধারণ শুরু। কাগজ-কলমে এবারের দুর্বলতম দল দুর্বার রাজশাহী ১৯৮ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের সামনে। কিন্তু তারকাসমৃদ্ধ বরিশাল ১৮.১ ওভারেই সেই লক্ষ্য পেরিয়ে তুলে নিয়েছে ৪ উইকেটের জয়।

রাজশাহীর দুই শ ছুঁই ছুঁই রানের চাপে শুরুতেই খেই হারিয়েছিল বরিশাল। ইনিংসের প্রথম বলে জিশানের অফ স্পিনে এলবিডব্লু নাজমুল হোসেন। তাসকিন আহমেদের বলে এলবিডব্লু হয়ে আরেক ওপেনার ও অধিনায়ক তামিম ইকবাল ফেরেন পরের ওভারে। কাইল মায়ার্স, মুশফিকুর রহিম, তাওহিদ হৃদয়—বিপর্যয়ে বাধ দিতে পারছিলেন না কেউই। পাহাড়সম লক্ষ্যের সামনে ৬১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত হারের দিকেই যাচ্ছিল ফরচুন বরিশাল। কিন্তু তখনই বাধার দেওয়াল তুলে দাঁড়ালেন মাহমুদউল্লাহ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে আছেন জাতীয় দলের এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সেই ফর্মটাকেই যেন টেনে আনলেন বিপিএলে। ৪ ছক্কা আর ৫ বাউন্ডারিতে ২৬ বলে অপরাজিত ৫৬। ২১৫.৩৮ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ সময়োপযোগী সঙ্গত পেয়েছেন দুই পাকিস্তানি শাহিন শাহ আফ্রিদি আর ফাহিম আশরাফের কাছ থেকে। ষষ্ঠ উইকেটে আফ্রিদির সঙ্গে মাত্র ৪.১ ওভারে ৫১ রানের জুটি, যাতে আফ্রিদির অবদান ১৭ বলে ২৭।

৩৫ বলে ৮৮ রান এসেছে ফাহিম আশরাফ ও মাহমুদউল্লাহর জুটিতে
প্রথম আলো

রাজশাহীর বড় লক্ষ্যের সামনেও তখন থেকেই ম্যাচটা আস্তে আস্তে বরিশালের দিকে ঘুরতে থাকে। ফাহিম আশরাফ এসে তো কাজটা সহজ করে দেন আরও। একদিকে মাহমুদউল্লাহ, আরেক দিকে ফাহিম আশরাফের ঝোড়ো ব্যাটিং। তাতে আর ৫ ওভার ৫ বলেই ম্যাচ শেষ।

৭ ছক্কা আর এক বাউন্ডারিতে মাত্র ২১ বলে অপরাজিত ৫৪ করা ফাহিম ম্যাচ শেষ করেছেন মৃত্যুঞ্জয়কে গ্যালারি ছাড়া করা বিশাল ছক্কায়। বল গিয়ে পড়েছে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ছাদে। শেষ ৫ ওভারে বরিশালের দরকার ছিল ৫৮ রান। মাহমুদউল্লাহ-ফাহিম মিলে এমনই তাণ্ডব চালালেন যে, জয় এসে গেল ১১ বল বাকি থাকতেই। রাজশাহীর লঙ্কান পেসার লাহিরু সামারাকুনের করা ১৭তম ওভারেই এসেছে ২৫ রান। তিন ছক্কা আর এক চারে যার ২৪-ই ফাহিমের ব্যাট থেকে।

আরও পড়ুন

এবারের বিপিএলে অন্যতম সেরা দল বরিশাল স্থানীয় ও বিদেশি তারকা ক্রিকেটারে ঠাসা। স্থানীয়দের মধ্যে অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে জাতীয় দলের নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল ছাড়াও আছেন দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ এবং তরুণ তারকা হৃদয়। বিদেশি নামগুলোও যথেষ্ট ভারী। তারকা ফাস্ট বোলার আফ্রিদির সঙ্গে আরেক পাকিস্তানি ফাহিম। আছেন আফগানিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মায়ার্সও।

৮ ছক্কায় ৪৭ বলে ৯৪ রান করেছেন রাজশাহীর ইয়াসির আলী
প্রথম আলো

তবে শক্তিমত্তায় পিছিয়ে থাকলেও শুরুটা দারুণ ছিল রাজশাহীর। দলের ২৫ রানের মধ্যে দুই ওপেনার জিশান আর হারিসকে হারালেও অধিনায়ক এনামুল আর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী মিলে বরিশালের প্রায় সব বোলারকেই মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখালেন। তৃতীয় উইকেটে তাদের ১৪০ রানের জুটিতে আর মাত্র ১ উইকেট হারিয়েই ২০ ওভারে ১৯৭ রান করে ফেলে রাজশাহী।

আরও পড়ুন

৫ ছক্কা আর ৪ বাউন্ডারিতে ১২৭.৪৫ স্ট্রাইক রেটে ৬৫ রান করে আউট হয়েছেন এনামুল। তবে ইয়াসির অপরাজিত থেকেছেন সেঞ্চুরির সুবাস নিয়ে। এনামুলের তুলনায় অনেক বেশি আগ্রাসী ছিল ইয়াসিরের ব্যাট। অপরাজিত ৯৪ রান এসেছে মাত্র ৪৭ বলে। ২০০ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে ছক্কা ৮টি, সঙ্গে ৭ বাউন্ডারি।

তৃতীয় উইকেটে ১৪০ রান যোগ করেছেন দুর্বার রাজশাহীর এনামুল হক ও ইয়াসির আলী
প্রথম আলো

এমন ব্যাটিং করেও ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়ার আফসোস থাকতেই পারে ইয়াসিরের। তবে শেষ পর্যন্ত বড় আফসোস নিশ্চয়ই ১৯৭ রান করেও হেরে যাওয়াতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দুর্বার রাজশাহী: ২০ ওভারে ১৯৭/৩ (ইয়াসির ৯৪*, এনামুল ৬৫; মায়ার্স ২/১৩, ফাহিম ১/৪২)। ফরচুন বরিশাল: ১৮.১ ওভারে ২০০/৬ (মাহমুদউল্লাহ ৫৬*, ফাহিম ৫৪*, হৃদয় ৩২, আফ্রিদি ২৭; তাসকিন ৩/৩১, মুরাদ ২/৪২, জিশান ১/৬)। ফল: বরিশাল ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মাহমুদউল্লাহ
আরও পড়ুন