সাদা বলের ক্রিকেটে লিটনকে নিয়ে প্রশ্ন
লিটন দাসকে বাদ দিয়ে ডাকা হয়েছে জাকের আলীকে। সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে।
চেহারায় একরাশ অন্ধকার নিয়ে টিম হোটেল থেকে বেরিয়ে গেলেন লিটন দাস। সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তান। কার পোর্চে অপেক্ষমাণ গাড়িতে উঠে চলে গেলেন বিমানবন্দরের দিকে।
২০২১ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বাজে ফর্মের কারণে দলে জায়গা হারিয়েছিলেন। তবে ফর্মের কারণে সিরিজের মাঝপথে বাদ পড়ে দল ছেড়ে যাওয়া লিটনের জন্য নতুন অভিজ্ঞতাই। নতুন নির্বাচকদের কাছ থেকে পাওয়া আচরণও। চট্টগ্রাম ছাড়ার আগে নির্বাচক কমিটির পক্ষে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিটনকে বুঝিয়ে বলেছেন, কেন তাঁকে রাখা হয়নি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগামীকালের শেষ ওয়ানডের স্কোয়াডে। লিটনের পরিবর্তে ওয়ানডে দলে প্রথমবারের মতো নেওয়া হয়েছে জাকের আলীকে।
লিটনকে বাদ দেওয়ার ব্যাখ্যায় বিসিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বলেছেন, ‘নতুন বলে খুবই অধারাবাহিক হওয়ার কারণে আমরা লিটন দাসকে স্কোয়াডের সঙ্গে আর রাখছি না। লিটন ছাড়াও দলের সঙ্গে ওপেনার হিসেবে আছেন এনামুল হক বিজয় ও তানজিদ হাসান তামিম। এ ছাড়া সৌম্য সরকারও ওপেনার।’
দলে আগে থেকেই অনেক ওপেনার থাকায় লিটনের পরিবর্তে আরেকজন ওপেনার নেওয়ার প্রয়োজন দেখেনি নির্বাচক কমিটি। জাকেরকে ডাকা প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক বলেছেন, ‘তিনি টি-২০ খেলেছেন এবং রান করেছেন। প্রিমিয়ার লিগেও রান করছেন। একাধিক জায়গায় খেলতে পারেন, ওপরের দিকে বা ফিনিশারের দায়িত্বও পালন করতে পারেন।’ এ ছাড়া কনকাশন বদলির কথা ভেবেও নির্বাচক কমিটির মনে হয়েছে লিটনের জায়গায় জাকের এলে দলে ভারসাম্য থাকবে।
ওয়ানডেতে লিটন অনেক দিন ধরেই অধারাবাহিক। গত ২০টি ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৬ ও ভারতের বিপক্ষে ৬৬ ছাড়া আর কোনো ফিফটি নেই। এই দুই ফিফটিও অনেকটাই মূল্যহীন, কারণ ম্যাচ দুটি বাংলাদেশ হেরেছিল।
দলে বিকল্প ওপেনার আছে। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে ওকে হয়তো স্কোয়াডের সঙ্গে রেখে দেওয়া যেত। এখন যেটা হয়েছে, এটা তাকে ডিমোটিভেটেড করতে পারে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ‘গোল্ডেন ডাক’ ও দ্বিতীয় ম্যাচে তৃতীয় বলে শূন্য রানে আউট হওয়া লিটন অর্ধশতের দেখা পাননি এর আগের ১০ ওয়ানডেতেও। ৯১ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে ১৪ বার আউট হয়েছেন কোনো রান না করেই। পরিস্থিতি যা, তাতে লিটনকে আপাতত সাদা বলের ক্রিকেটেই নির্বাচকেরা বিবেচনা করবেন কি না সন্দেহ। সিলেটে টেস্ট খেলতে যাওয়ার আগে প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে অন্তত একটি ম্যাচ খেলতে পারেন তিনি। লিটনের জন্য নির্বাচকদের পরামর্শও তা–ই। তবে নির্বাচকদের এই পরামর্শ লিটন সহজভাবে নেননি বলেই জানা গেছে। শেষ ওয়ানডে খেলার সুযোগ না পেলেও অন্তত দলের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন। আর প্রিমিয়ার লিগে খেলার ব্যাপারে তাঁর মনোভাব নাকি অনেকটা এ রকম—সাদা বলের বিবেচনায়ই যদি না থাকি, তাহলে প্রিমিয়ার লিগ খেলেই–বা কী হবে!
নির্বাচকদের কঠোর সিদ্ধান্ত লিটনের জন্য মানসিক আঘাত হয়ে আসাটা অস্বাভাবিক নয়। ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ নাজমূল আবেদীন সেটা মেনেও নির্বাচকদের সিদ্ধান্তকেই যৌক্তিক মনে করছেন। লিটনের বাদ পড়া নিয়ে কাল মুঠোফোনে তিনি বলেছেন, ‘দলে বিকল্প ওপেনার আছে। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে ওকে হয়তো স্কোয়াডের সঙ্গে রেখে দেওয়া যেত। এখন যেটা হয়েছে, এটা তাকে ডিমোটিভেটেড করতে পারে। তবে শেষ ম্যাচে ওকে যখন খেলাবেই না, নির্বাচকেরা হয়তো চেয়েছেন মিডল অর্ডারের শক্তি বাড়াতে। একই সঙ্গে কনকাশন বদলির কথাও তাঁরা বলেছেন। সব মিলিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিকই মনে হচ্ছে।’
লিটনের খারাপ ফর্ম থেকে বের হতে না পারার কারণটা মূলত মানসিক বলে মনে হয় ফাহিমের, ‘শর্ট ফাইন লেগ, স্কয়ার লেগ, মিড উইকেট—এ রকম সব ক্যাচিং পজিশনেই ওর জন্য ফিল্ডার রাখে প্রতিপক্ষ। এটা ওর মানসিক অবস্থা চিন্তা করেই করে ওরা। ভালো ফর্মে থাকলে যে বলটা সে নিচে বা গ্যাপে খেলত, সেটাকেই এখন সে অ্যাক্রস দ্য লাইন খেলছে।’ ফর্মে ফিরতে নতুন নতুন টেকনিক নিয়ে অনেক বেশি ভাবা, তা প্রয়োগ করা নিয়ে বেশি ভেবে বোলারের সুইং, গতির দিকে নজর রাখতে না পারা—লিটনের নিজেকে হারিয়ে খোঁজায় এসবও কারণ বলে মনে হয় ফাহিমের।
তাহলে কীভাবে নিজেকে ফিরে পেতে পারেন লিটন? নাজমূলের সহজ–সরল পরামর্শ—সোজা পথে চলা। মানে নিজের খেলা নিয়ে বেশি চিন্তা করে বিষয়টাকে আরও বেশি জটিল বানিয়ে না ফেলে যেভাবে খেলে তিনি একজন ভালো ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেছিলেন, সেই মানসিকতায় ফিরে যাওয়া।
লিটন কি তা পারবেন? সামনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ টি–টোয়েন্টির হোম সিরিজ, এরপর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সাদা বলের এই সংস্করণে থাকছেন তো তিনি?