হাথুরুসিংহের কাছে ‘স্বাস্থ্যকর’ ড্রেসিংরুমের প্রত্যাশা বিসিবির
দুই দিন আগেও যে খচখচানিটা ছিল, সেটি অনেকটাই উধাও বলে মনে হলো। বাংলাদেশের ক্রিকেটে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে নামটি যেন আর ততটা অস্বস্তিকর নয়। গতকাল বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে দ্বিতীয় দফায় হাথুরুসিংহের আনুষ্ঠানিক প্রথম দিন শেষে নির্বাচকেরা হাসিমুখে ঘরে ফিরলেন। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান নির্ভার হয়ে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকার বাইরে গেলেন। বিসিবি সভাপতি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।
গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মিরপুরের বিসিবি কার্যালয়ে একের পর এক বৈঠক করে গেছেন হাথুরুসিংহে। শুরুটা ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুসের সঙ্গে একক সভা দিয়ে। এরপর বসেছেন মিনহাজুল আবেদীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটির সঙ্গে। বেলা আড়াইটায় হাথুরুসিংহে এলেন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে, যেখানে অনেক বছর পর একটা জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনের উপলক্ষ হলেন তিনি। কোচ এরপর আরেক দফা গেছেন বিসিবি কার্যালয়ের দোতলায়। এবার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান সকাশে, সঙ্গে ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুস ছাড়াও ছিলেন প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী এবং তিন নির্বাচক।
দিনের মূল আকর্ষণ যদিও সংবাদ সম্মেলনই ছিল, কিন্তু সেখানে কথাবার্তা তো সবই আনুষ্ঠানিক। এর বাইরে ওই যে দোতলায় দফায় দফায় বসা, তাতেই বিসিবির সঙ্গে হাথুরুর ভাবের আসল আদান-প্রদানটা হয়ে গেছে। কোচের কাছে বিসিবির বার্তা পরিষ্কার—২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই সব গোছাতে হবে। সেটি মাঠে এবং ড্রেসিংরুমেও। বিসিবি কর্মকর্তাদের ভাষায়, ‘স্বাস্থ্যকর’ একটা ড্রেসিংরুমই প্রথম চাওয়া হাথুরুর কাছে।
এমনিতে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের পরিবেশে খুব একটা অশান্তি নেই। অন্তত ওই চার দেয়ালের মধ্যে শৃঙ্খলায়ও সমস্যা নেই তেমন। তবে একসঙ্গে থাকলে যা হয়, কারও কারও মধ্যে বোঝাপড়ায় সমস্যা হতেই পারে। যে সমস্যা অনেক সময় ডালপালা মেলে দলের অন্যদেরও আক্রান্ত করে ফেলে, অস্বস্তিকর করে তোলে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ। সে রকম কিছু সমস্যা বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমেও থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। হাথুরুসিংহে যেহেতু সিনিয়রদের ভোট নিয়েই পুনর্বার এসেছেন, বিসিবি মনে করে, সে রকম কোনো বিভেদের ফাটল থাকলে তিনিই পারবেন সেটি দূর করতে। আলোচনায় এই প্রসঙ্গ ওঠার পর হাথুরুসিংহেও নাকি আশ্বস্ত করেছেন, ওসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। তিনি সব ঠিক করে ফেলবেন।
এই দফায় হাথুরুসিংহে ক্রিকেটারদের মনোজগৎ নিয়েই কাজ করতে চান বেশি। সে জন্য বিসিবির কাছে বিশেষ একজন ক্রীড়া মনোবিদের নাম যেমন প্রস্তাব করেছেন, তেমনি নিজেও নিতে চান ‘মেন্টর’–এর ভূমিকা।
বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে গত সাড়ে পাঁচ বছরের ব্যবধানে হাথুরুসিংহের প্রধান শিক্ষা, জাতীয় পর্যায়ে এসে হাতে-কলমে শেখানোর খুব বেশি কিছু নেই। কোচের কাজ এখানে মূলত ক্রিকেটারদের মানসিকতায় ইতিবাচক ধারা বইয়ে দেওয়া। তাঁদের মানসিকভাবে উজ্জীবিত রাখা। হ্যাঁ, মাঠের খেলা নিয়েও তিনি কাজ করবেন। সেখানে ব্যাটিং-বোলিংয়ের সমান গুরুত্ব দিতে চান ফিল্ডিংয়েও। আলোচনায় হাথুরু নাকি বলেছেন, ফিল্ডিংয়ে উন্নতি আনতে ক্রিকেটারদের প্রত্যেককে পরিপূর্ণ অ্যাথলেট হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা থাকবে তাঁর।
বয়সের কারণেই হোক কিংবা মাঝের উত্থান-পতনে জীবনকে নতুন করে দেখার অভিজ্ঞতায় হোক, হাথুরুসিংহেকে আগের মতো একরোখা মনে হচ্ছে না বিসিবির। বরং অনেকটাই যেন মানিয়ে নেওয়ার মনোভাব দেখা যাচ্ছে তাঁর মধ্যে। সঙ্গে যোগ হয়েছে কোচিং–দর্শন নিয়ে চিন্তাভাবনার বদল, যেটাকে বিসিবিও স্বাগত জানাচ্ছে।
বিশেষ করে হাথুরুসিংহে যখন আশ্বস্ত করতে পেরেছেন, সাড়ে পাঁচ বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটে না থাকলেও এই সময়ে ঘটে যাওয়া এ দেশের ক্রিকেটের সবই তাঁর নখদর্পণে। নতুন ক্রিকেটার যাঁরা এসেছেন, তাঁদের কার কোন সংস্করণে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি বা কম, পুরোনোদের কাছ থেকেই–বা আর কতটা পাওয়ার আছে—এসব বিষয়ে বিসিবি ও নির্বাচকদের হিসাবের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে হাথুরুসিংহের হিসাব। তাঁকে তাই সত্যিকার অর্থেই নতুন করে কিছু বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন দেখছে না বিসিবি। উল্টো মনে হচ্ছে, তিনি সব বুঝেই রিলে রেসটা দৌড়াতে এসেছেন। বিসিবি শুধু নতুন করে তাঁর হাতে ব্যাটনটাই তুলে দিল।
সেই ব্যাটন নিয়ে তিনি আজ থেকেই দৌড়াতে শুরু করবেন, যেটার শুরু সকাল ১০টায় ক্রিকেটারদের সঙ্গে সভায়। ‘স্বাস্থ্যকর’ ড্রেসিংরুমের প্রসঙ্গটাও হয়তো সেখানেই তুলবেন হাথুরুসিংহে।