মাহমুদউল্লাহ সবচেয়ে বেশিবার হ্যাটট্রিকের অংশ
এ নিয়ে মোট ছয়বার। বেচারা!
বলা হচ্ছে মাহমুদউল্লাহর কথা। বাংলাদেশের অনেক ম্যাচ জেতানোর নায়ক তিনি। বাংলাদেশকে অনেকবার ভরাডুবি থেকে বাঁচানোর নায়কও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ক্রিকেট কখনো কখনো খুব নির্মম হয়ে ওঠে। ভালো ব্যাটসম্যানকেও ভাগ্যের পাকেচক্রে নিয়ে ফেলে দুর্ভাগাদের পাশে। বোলারের হ্যাটট্রিকের অংশ হওয়ার ক্ষেত্রে মাহমুদউল্লাহ সেসব দুর্ভাগাদেরই একজন। বলা ভালো, মাহমুদউল্লাহই সবচেয়ে দুর্ভাগা। ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে মাহমুদউল্লাহই যে সবচেয়ে বেশিবার হ্যাটট্রিকের অংশ হয়েছেন!
সেটি কতবার তা শুরুতেই বলা হয়েছে। এবার পেছন ফিরে তাকানো যাক।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে আজ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ডিএলএস পদ্ধতিতে ২৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স। ১৮তম ওভারের শেষ দুই বল ও ২০তম ওভারের প্রথম বলে উইকেট নেন কামিন্স, যা এবার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক।
কামিন্সের টানা তিন বলে উইকেট নেওয়ার পথে প্রথম শিকার মাহমুদউল্লাহ। ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে কামিন্সের অফ স্টাম্পের বাইরের খাটো লেংথের ডেলিভারি পুল করতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে নেন মাহমুদউল্লাহ। বোল্ড! কামিন্সের পরের দুটি বলে মেহেদী হাসান ও তাওহিদ হৃদয়ও আউট হন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ নিয়ে ষষ্ঠবার হ্যাটট্রিকের অংশ হলেন মাহমুদউল্লাহ। আর কোনো ব্যাটসম্যানকেই এমন দুর্ভাগ্যের মুখোমুখি হতে হয়নি। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহই সবচেয়ে বেশিবার হ্যাটট্রিকের অংশ হলেন—টি–টোয়েন্টিতে তিনবার, ওয়ানডেতে দুবার ও টেস্টে একবার।
মাহমুদউল্লাহর এই দুর্ভাগ্যের শুরু ২০১৫ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। সে ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা অভিষিক্ত প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদার টানা তৃতীয় শিকার ছিলেন তিনি। চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে তামিম ইকবাল ও পঞ্চম বলে লিটন দাসকে আউট করার পর শেষ বলে মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন রাবাদা।
তিন বছর পর ২০১৮ সালে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবারও একই দুভার্গ্যের শিকার হন মাহমুদউল্লাহ। লঙ্কান পেসার দিলশান মাদুশঙ্কার তুলে নেওয়া হ্যাটট্রিকে শেষ উইকেটটি ছিলেন তিনি। ৪০তম ওভারের শেষ দুই বলে মাশরাফি বিন মর্তুজা ও রুবেল হোসেনকে তুলে নেওয়ার পর ৪২তম ওভারের প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ আউট করেন মাদুশঙ্কা।
ওয়ানডেতে দুবার হ্যাটট্রিকের অংশ হওয়ার পর টেস্টে একই দুর্ভাগ্যের শিকার হন মাহমুদউল্লাহ। ২০২০ সালে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানি পেসার নাসিম শাহর হ্যাটট্রিকে শেষ উইকেটটি ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। ওয়ানডে ও টেস্টে তিনবার হ্যাটট্রিকের অংশ হওয়ার পথে প্রতিবারই শেষ উইকেট ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
টি–টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিকের অংশ হওয়ার শুরুতে অবশ্য তাঁর উল্টো অভিজ্ঞতা হয়েছে। ২০২১ সালে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে তৃতীয় ম্যাচে ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার নাথান এলিস। এর মধ্যে প্রথম উইকেটটি ছিল মাহমুদউল্লাহর। তিনি বোল্ড হন।
এ বছর একই সংস্করণে দুবার হ্যাটট্রিকের অংশ হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। গত মার্চে সিলেটে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন শ্রীলঙ্কার পেসার নুয়ান তুষারা। এবার অবশ্য আগের ধারাতেই ফিরতে হয় মাহমুদউল্লাহকে। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে নাজমুল হোসেন, তৃতীয় বলে তাওহিদ হৃদয়কে তুলে নেওয়ার পর চতুর্থ বলে মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন তুষারা।
সে পর্যন্ত মোট পাঁচবার হ্যাটট্রিকের অংশ হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাতেই অবশ্য রেকর্ডটি আগেই গড়া হয়ে গিয়েছিল। তিন সংস্করণ মিলিয়ে আর কোনো ব্যাটসম্যান যে তিনবারের বেশি হ্যাটট্রিকের অংশ হননি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আজ ষষ্ঠবারের মতো হ্যাটট্রিকের অংশ হতে হলো মাহমুদউল্লাহকে।