সেমিফাইনালের ইতিহাস নেই বলেই আফগানিস্তান ‘ভয়ংকর’
বিশ্বকাপে প্রথমবার সেমিফাইনালে উঠেছে আফগানিস্তান। ১৬ বছর আগেও ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগের পঞ্চম বিভাগে খেলত তারা। তখন আফগানিস্তানকে খেলতে হতো জাপান, সিঙ্গাপুরের মতো দলের সঙ্গে। এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে রশিদের দল খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
সেই দক্ষিণ আফ্রিকা, যাদের কাছে সেমিফাইনালে ওঠা অনেকটা অভ্যাসের মতো। যদিও সেমিফাইনাল থেকে ফাইনালে যাওয়া কিংবা ট্রফি জেতাই তাদের জন্য অনেক দূরের পথ। আফগানিস্তানের জন্য বিষয়টি একেবারেই উল্টো। প্রথমবার সেমিফাইনালে ওঠা দলটির কোচ জোনাথন ট্রটও সংবাদ সম্মেলনে সেদিকে ইঙ্গিত করেই কথা বলেছেন। এই কোচের দাবি, কোনো সেমিফাইনালে কোনো ইতিহাস না থাকাতেই আফগানিস্তান ভয়ংকর।
আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে শুধু ১৯৯৮ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিই জিততে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে তাদের গল্প বেশ মর্মান্তিক। কখনো প্রকৃতির বাধা, কখনো স্নায়ুচাপে নিজেদের ভুলে বাদ পড়তে হয়েছে বিশ্বকাপ থেকে। বড় টুর্নামেন্টে এসে চাপের মুহূর্তে ভেঙে পড়াটা ‘বদভ্যাস’ বানিয়ে ফেলায় জুটেছে ‘চোকার্স’ অপবাদ।
ট্রটের দলের অন্তত এই চিন্তা নেই। সংবাদ সম্মেলনে ট্রট বলেছেন, ‘কোনো ক্ষতচিহ্ন বা ইতিহাস ছাড়াই আমরা সেমিফাইনালে যাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য নতুন এক জায়গা। আমরা সেমিফাইনাল খেলব, সবটা দেওয়ার চেষ্টা করব। আগের কোনো ধারণা নেই, সেমিফাইনালে আগের বছরগুলোতে সফলতা বা ব্যর্থতার কোনো ইতিহাস নেই। আমাদের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ, হারানোর কিছু নেই, এটাই সেমিফাইনালে ভয়ংকর দল বানিয়েছে (আফগানিস্তানকে), অবশ্যই প্রতিপক্ষের ওপর চাপ বেশি থাকবে।’
এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই ম্যাচেই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারের বিশ্বকাপেও দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছে টানা সাত ম্যাচে। যদিও প্রতিটি ম্যাচেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হয়েছে তাদের। প্রথম পর্বে নেপাল, নেদারল্যান্ডস, বাংলাদেশের বিপক্ষেও অনেকটা হারতে হারতে জিতেছে তারা। সুপার এইটেও এইডেন মার্করামের দলকে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আফগানিস্তানও সেমিফাইনালে উঠেছে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে টপকে সুপার এইটে ওঠা আফগানিস্তান প্রথম ম্যাচেই বড় ব্যবধানে ভারতের কাছে হারে। তবে এরপর দুই ম্যাচে তারা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের বিপক্ষে।
ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ট্রট আফগানিস্তানের দায়িত্ব নেন ২০২২ সালের জুলাইয়ে। দলের সঙ্গে তাঁর রসায়ন কেমন, সেটা বোঝা গেছে সেমিফাইনালে ওঠার পর তাঁকে ঘিরে উদ্যাপনের সময়। তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আফগান ক্রিকেটাররা। দল ও নিজের দায়িত্ব নিয়ে ট্রট বলেছেন, ‘যখন দায়িত্ব নিই, এত প্রতিভা দেখে অবাক হয়েছিলাম। তবে সবকিছুর মধ্যে একটা অনভিজ্ঞতা ছিল, কীভাবে খেলবে, চিন্তা করবে, কোনো অবকাঠামো ছিল না। আমি শুধু এখানে-সেখানে কিছু যোগ করার চেষ্টা করেছি। কোনো পর্যায়ে আমি কারও ডানা কাটার চেষ্টা করিনি। আমি শুধু তির-ধনুকটিকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি, যেন তারা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে, ম্যাচ জিততে পারে এবং আরও দূর নক্ষত্রে চোখ দিতে পারে।’