মাশরাফির নেতৃত্বে সিলেট প্রথমবার ফাইনালে
শেষ ১৮ বলে রংপুর রাইডার্সের প্রয়োজন ছিল ৩৩ রান, বাকি ৭ উইকেট, ক্রিজে দুই থিতু ব্যাটসম্যান রনি তালুকদার ও নুরুল হাসান। মুশফিকুর রহিম এর আগে বেশ কিছুক্ষণ মাঠের বাইরে ছিলেন। ১৮তম ওভার শুরুর আগে মুশফিকের ফিল্ডিংয়ে ফেরার সময় একটা বিরতি পড়ল খেলায়, তাতেই যেন ছন্দপতন হলো রংপুরের। সে ওভারে তানজিম হাসানের বলে ক্যাচ দিলেন নুরুল, উইকেটকিপারের মিস ফিল্ডিংয়ে রান নিতে গিয়ে রানআউট রনি। লুক উডের করা পরের ওভারে নেই মেহেদী হাসান ও ডোয়াইন ব্রাভোও। যে ম্যাচটা হাত থেকে প্রায় বেরিয়ে গিয়েছিল সিলেট স্ট্রাইকার্সের, সেটিই তারা জিতল ১৯ রানের ব্যবধানে! রংপুরকে বিদায় করে দিয়ে প্রথমবারের মতো বিপিএলের ফাইনালে গেল সিলেটের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি, মাশরাফি বিন মুর্তজা বৃহস্পতিবার নামবেন পঞ্চম ফাইনাল খেলতে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।
১৮৩ রানের লক্ষ্যে নামা রংপুরের শুরুটা ভালো ছিল না, পাওয়ারপ্লেতে ৩৭ রান তুলতেই তারা হারায় স্যাম বিলিংস ও আগের ম্যাচের নায়ক শামীম হোসেনকে। তবে নিকোলাস পুরানের ১৪ বলে ৩০ রানের ক্যামিওতে সেসব পুষিয়ে দেয় রংপুর। এরপর তাদের টানেন রনি তালুকদার ও নুরুল হাসান। প্রথম ২৩ বলে মাত্র ২৩ রান করেছিলেন রনি, ২৯ রানে জীবনও পান। এরপর ফিফটি পূর্ণ করেন ৪০ বলে। শেষ ৬ ওভারেও রংপুরের প্রয়োজন ছিল ৬৩ রান। রংপুর পরের মোমেন্টামটা পায় রুবেল হোসেনের করা ১৫তম ওভারে, যেটিতে চারটি চারে আসে ১৭ রান।
রনি ও নুরুল রংপুরকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন জয়ের পথেই, ১৮তম ওভারেই বদলে গেল গল্পটা।
প্রথমে নুরুলের আউটে ভাঙল রনির সঙ্গে ৫২ বলে ৮২ রানের জুটি। আউট হয়ে ফেরার পথে ডাগআউটে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও করতে দেখা যায় নুরুলকে, রংপুরের চাপ তখন স্পষ্ট। এরপর তো ফিরলেন ৫২ বলে ৬৬ রান করা রনিও। উডের জোড়া আঘাতের পর শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৮ রান, রুবেল হোসেনকে প্রথম দুই বলে দাসুন শানাকা দুই চার মারলেও আর রান নিতে পারেননি, শেষ বলে হন বোল্ড।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেটের পারফরম্যান্স এবার ছিল বেশ ভালো, যারা আগের ম্যাচে পড়েছিল ব্যাটিং বিপর্যয়ে। এবার কমবেশি অবদান রাখেন সবাই। এক মুশফিকুর রহিম ছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন সবাই। ওপেনিং জুটিতে তাদের ভালো একটা ভিত এনে দেন নাজমুল হোসেন ও তৌহিদ হৃদয়। পাওয়ারপ্লেতে ওঠে ৪৪ রান, যদিও সে সময় কোনো ছক্কা আসেনি।
ইনিংসের প্রথম ভাগের চেয়ে পরের ভাগে নিয়ন্ত্রণ বেশি ছিল নাজমুলের, থিতুও হয়েছিলেন। মেহেদী হাসানের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরতে হয় এই বাঁহাতিকে, রিভিউ করার পরও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারেননি তিনি। গত ম্যাচে পাঁচে আসা মাশরাফি এবার উঠে আসেন ৩ নম্বরে, আবারও রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। মুখোমুখি প্রথম বলেই ছক্কা মারার পর ১৬ বলে ২৮ রানের ইনিংসের পথে তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসান ও রায়ান বার্লের সঙ্গে তিনটি জুটিতে ৩৫ বলে ৬৭ রান যোগ করেন সিলেট অধিনায়ক। ৬ রানে অবশ্য দাসুন শানাকার হাতে জীবন পেয়েছিলেন।
মাঝে ১০ রানের মধ্যে রায়ান বার্ল, মাশরাফি ও মুশফিকুর রহিমের উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল, আবারও কিছু রান কম করার আক্ষেপে পুড়তে হবে সিলেটকে। থিসারা পেরেরা ও জর্জ লিন্ডা অবশ্য শেষটা করেন ভালোভাবেই, দুজন মিলে ২৫ বলে করেন ৪২ রান। শেষ ৪ ওভারে সিলেট তোলে ৪১ রান, শেষ ৭ ওভারে আসে ৮১ রান।
গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচ হেরেছিল সিলেট, দুটিই ছিল রংপুরের বিপক্ষে। এবার তেমন কিছু আর হতে দিলেন না মাশরাফিরা।