এসে গেল মালিঙ্গা মিউজিক প্লাস
স্রেফ বোলিং অ্যাকশনের কারণেই খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে অনেকের চেয়ে ব্যতিক্রম ছিলেন তিনি। যে ডেলিভারি অ্যাকশনকে ‘স্লিঙ্গিং’ বলা হয়। তবে শুধু ব্যতিক্রমী অ্যাকশন আর উইকেট নেওয়াতেই নিজের নাম সীমাবদ্ধ রাখেননি লাসিথ মালিঙ্গা।
টানা ইয়র্কার মারতে পারা এবং সংক্ষিপ্ত সংস্করণে কার্যকারিতায় নিজেকে তুলে নিয়েছেন সফল পেস বোলারদের অনন্য উচ্চতায়। মালিঙ্গা বিশেষভাবে আলাদা নেতৃত্বের সাফল্যেও। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে বিশ্বকাপ হাতে তোলা অধিনায়ক মাত্র দুজন—অর্জুনা রানাতুঙ্গা (১৯৯৬ ওয়ানডে বিশ্বকাপ), আরেকজন মালিঙ্গা (২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ)।
২০২০ সালে খেলা ছেড়ে দেওয়া সেই মালিঙ্গা এখন অন্যদের শেখান। কোচিং করান ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। তবে ৪০ বছর বয়সী এই শ্রীলঙ্কানের জীবন এখন ক্রিকেট ছাড়িয়ে আরও বিস্তৃত। মালিঙ্গা এখন গীতিকারও!
গীতিকার মালিঙ্গার প্রথম দেখা মেলে গত আগস্টের শেষ দিকে। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পায় তাঁরই লেখা গানের একটি মিউজিক ভিডিও। সিংহলিজ ভাষার ‘পালামুয়ারাতা’ শিরোনামে সেই গানে এক মডেলের সঙ্গে মালিঙ্গা নিজেই অংশ নেন। চ্যানেলটির বয়স দুই বছরের বেশি। কিছুদিন আগে আরেকটি চ্যানেল খুলেছেন মালিঙ্গা। এটির নাম মালিঙ্গা মিউজিক প্লাস। নামেই স্পষ্ট, গানের জন্যই এই চ্যানেল। গত ১০ দিনে এখানে ৩টি গান প্রকাশ পেয়েছে। তিনটিই মালিঙ্গার লেখা।
গানের জগতে যে ভালো মনোযোগই দিয়েছেন, সেটি জানিয়েছেন পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনের এক পোস্টে। গত সপ্তাহের ওই পোস্টে মালিঙ্গা লিখেছেন, ‘প্রবল আবেগকে ধারণ করে ইয়র্কারে পটু হয়ে ওঠার যাত্রাটা দারুণ। এবার আমি নতুন প্যাশনে অক্লান্ত। গীতিকার লাসিথ মালিঙ্গাকে নিয়ে কী ভাবছেন আপনারা?’
এরই মধ্যে মালিঙ্গার লেখা ১৪টি গান নিয়ে ‘লাইফ’ নামে একটি অ্যালবাম বেরিয়েছে। সবই শ্রীলঙ্কার সিংহলিজ ভাষায়। এর মধ্যে ‘দুরা দাক্কে না’ (বহুদূরে) নামের গান হিন্দিতেও তৈরির কাজ চলছে। দ্য টেলিগ্রাফকে এই গানের বিষয়ে মালিঙ্গা বলেন, ‘হিন্দি ভার্সন নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কার অন্যতম প্রতিভাবান একজন শিল্পী এটি গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি নিশ্চিত, গানটি প্রকাশিত হলে শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি ভারতের মানুষও পছন্দ করবে।’
মালিঙ্গার মধ্যে গান লেখার ভাবনা এসেছে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখতে গিয়ে। বইয়ের লেখা কীভাবে তাঁকে গানের দিকে টেনে নিয়ে গেল, সেটি জানিয়েছেন এভাবে, ‘আমার অভিজ্ঞতা ও বোলিং কৌশল নিয়ে একটা বই লিখছি, যাতে নবীন ফাস্ট বোলাররা শিখতে পারে। যখন বইটা নিয়ে কাজ করছি, তখন হুট করেই মনে হলো, মানুষ তো জীবনে অনেক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়। কিছু অভিজ্ঞতা জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। তো, এসবই লিখে ফেললাম গানে গানে।’
শুরুটা হুট করে হলেও এখন নাকি সুযোগ পেলেই গান লিখবেন মালিঙ্গা। গানের কথা আবর্তিত থাকে সাধারণ মানুষ ও তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে, ‘যখনই সময় পাব, যা মনে আসবে লিখে ফেলব। এসব জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়েই লেখা হবে। মানুষ যখন আমার গানে তাদের জীবনের কাছাকাছি কিছু খুঁজে পাবে, ব্যাপারটা চমৎকারই হবে।’
ক্রিকেট না গান লেখা—কোনটা বেশি কঠিন, এমন প্রশ্নে অবশ্য দ্বিধাহীন উত্তরই দিয়েছেন, ‘ক্রিকেটই কঠিন, এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগই নেই।’
গান লেখার পাশাপাশি মালিঙ্গা এখন ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ হিসেবেও সময় দিয়ে থাকেন।