করোনার টিকা নেওয়াতেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন শেন ওয়ার্ন, দাবি স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের
ক্রিকেট মহাকাশ থেকে গত বছরের ৪ মার্চ আচমকা অঝোর বৃষ্টি নামে। অবিশ্বাসের ঘোরে বন্দী হয়ে পড়েন সবাই। খেলাটির অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র, লেগ স্পিনশিল্পের সবচেয়ে নিখুঁত শিল্পী শেন ওয়ার্ন সেদিন সবাইকে চমকে দিয়ে মৃত্যুদূতের ফ্লিপারে হন বোল্ড। সেটাও জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়া থেকে ৭ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ থাইল্যান্ডের কোহ সামুই দ্বীপে। সেখানে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন।
মৃত্যুর সময় কোহ সামুইয়ের সামুজানা ভিলাস রিসোর্টের একটি কক্ষে একাই ছিলেন ওয়ার্ন। থাইল্যান্ডের ফরেনসিক পুলিশ আলামত সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁর ঘরের মেঝে, তোয়ালে ও বালিশে রক্তের দাগ পেয়েছিল। কিংবদন্তি লেগ স্পিনারের স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে তাই পরিবার ও ভক্তদের মনে সন্দেহ জেগেছিল। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে আসার পর থাইল্যান্ডের পুলিশ বিভাগ নিশ্চিত করে, ৫২ বছর বয়সী ওয়ার্নের মৃত্যুতে কোনো রহস্য নেই। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়াতেই নাকেমুখে রক্ত এসেছিল।
ওয়ার্ন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, এটা ঠিক। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা মনে করতেন, বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনই ওয়ার্নকে শেষ করে দিয়েছে। কারণ, ধূমপান ও মদ্যপান ছাড়া থাকতেই পারতেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০১ উইকেটের মালিক।
এত দিন পর স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা যে বিস্ফোরক দাবি তুলেছেন, সেটা চমকে দেওয়ার মতোই। এক বিশেষ গবেষণায় জানা গেছে, করোনার টিকা নেওয়ার কারণে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ওয়ার্ন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ হৃদ্রোগবিশেষজ্ঞ অসীম মালহোত্রা ও অস্ট্রেলিয়ার পেশাদার চিকিৎসক সমিতির সভাপতি ক্রিস্টোফার নেইল এ দাবি করেছেন। এর পেছনে যুক্তিও দেখিয়েছেন তাঁরা।
মালহোত্রা ও নেইল গবেষণা করে জেনেছেন, করোনার এমআরএনএ (বার্তাবাহী রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) টিকা নিলে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা দ্রুত বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাঁদের হৃৎপিণ্ডে অল্পবিস্তর সমস্যা এখনো ধরা পড়েনি, তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা বেশি।
মৃত্যুর ৯ মাস আগে ওয়ার্ন করোনার যে টিকা নিয়েছিলেন, সেটা ছিল এমআরএনএ ধরনের। এই টিকাই তাঁর হৃদ্রোগ বাড়িয়ে দিয়েছিল। গবেষক মালহোত্রা বলেছেন, ‘একজন সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার মাত্র ৫২ বছরে আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, এটা সচরাচর হয় না। তবে এটাও ঠিক যে ওয়ার্নের জীবনযাত্রা যে রকম ছিল, সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাঁর ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি ছিল, নিয়মিত ধূমপান করতেন। সম্ভবত তাঁর ধমনিতে দেয়ালের মতো কিছু তৈরি হয়েছিল, যা পথটা রুদ্ধ করে দিচ্ছিল। আমার দুজন রোগীর ক্ষেত্রে সেটা দেখেছি, আমার বাবা কীভাবে মারা গেছেন, সেটাও দেখেছি। ফাইজারের এমআরএনএ কোভিড টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার পর কয়েক মাস ধরে হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা ক্রমশ বাড়ছিল।’
অসীম মালহোত্রার মতে, শুধু ওয়ার্নের ক্ষেত্রে নয়; বিশ্বজুড়ে বহু মানুষের ওপর এমআরএনএ করোনা টিকার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে মৃত্যুর হারও বেড়েছে, ‘এ ধরনের করোনা টিকা নেওয়ার পর হৃৎপিণ্ডের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ে, তা অভাবনীয়। বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বজুড়ে আমরা যে বেশি মৃত্যুর খবর পাচ্ছি, সেটার পেছনে এটার হাত আছে।’
আরেক গবেষক ক্রিস্টোফার নেইল দ্রুত এমআরএনএ করোনা টিকার ব্যবহার বন্ধে কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, ‘অবিলম্বে এ ধরনের করোনা টিকার ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া উচিত। যাতে আরও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হন, অকালমৃত্যু না হয়।’
নেইল আরও বলেছেন, ‘তথ্য–উপাত্ত যাচাই করে দেখেছি, যে সব কারণে মানুষ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয় তার ২০ শতাংশ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়। যাদের বয়স ৫২ বছরের বেশি, তাদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোভিড টিকাকে সন্দেহজনক ওষুধ বিবেচনা করা হয়েছে। এসব রিপোর্টের বেশিরভাগ চিকিৎসকরাই তৈরি করেছেন। হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞসহ অনেকেই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন।’