নাসির বললেন—এগুলো হচ্ছে ভুয়া কথা, তারকা-মারকা বলে কিছু নেই
নাসির হোসেন প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন, শুনে অনেকেরই হয়তো একটু খটকা লাগতে পারে। যাঁরা ক্রিকেটের তেমন খোঁজখবর রাখেন না—তাঁরা ভাবতেই পারেন, এত দিন পর কোত্থেকে এলেন নাসির!
‘উপহার’ পেয়ে তা গোপন করায় ২০২৩ সালের আগস্টে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দেড় বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন একসময় বাংলাদেশ দলে খেলা ক্রিকেটার নাসির। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ দিয়ে খেলায় ফিরেছেন তিনি। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে রূপগঞ্জ টাইগার্সের হয়ে ফেরার ম্যাচে ৩১ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন নাসির, পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১ বলে করেছেন ৯ রান।
মাঠের ক্রিকেটের খবর তো জানা গেল, কিন্তু নাসির মানে তো আর এটুকু নয়। এই অলরাউন্ডার যখনই যেদিকে যান, সঙ্গী হয়ে যায় বিতর্ক। তা মাঠের বাইরের নাসির এখন কেমন আছেন? মিরপুরে ম্যাচ শেষে আজ সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আমার একটা সন্তান আছে। পরিবার আছে। সুখে আছি। ভালো আছি।’
মাঝে দেড় বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকলেও নাসির আছেন নাসিরের মতোই। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর জার্সি গায়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার সময়টাতেও তাঁর কথায় আর আচরণে রসিকতা। তার মধ্যেও একটু ঝাল ঝাড়লেন হালের ‘ভিউ–লাইক সাংবাদিকতা’র ওপর, ‘যাদের নাম হয়, তাদের বদনামও হয়। এটাই স্বাভাবিক। এখন তো আমরা অনলাইন মিডিয়ায় নিজেদের টিআরপি বাড়ানোর জন্য যা-তা করে নিউজ করি। আমার মনে হয়, এরকম না করাই ভালো। কারণ, আপনাদের একটা নিউজ আর কিছু লাইকের জন্য একটা পরিবারে সমস্যা হতে পারে। এটা আপনারাও ভালো জানেন। যদি আপনাদের পরিবারের সঙ্গে হয়, তখন বুঝতে পারবেন।’
নাসিরের ব্যক্তিগত জীবন বারবারই খবরের শিরোনাম হয়েছে। অনেক সময় ক্রিকেটার নাসিরকেও আড়াল করে দিয়েছে তা। এ নিয়ে কিছুটা অভিমানও আছে নাসিরের, ‘আমি যেমন ছিলাম, ভালোই ছিলাম। খেলাধুলা নিয়ে কোনো অভিযোগ ছিল না। ইনডিসিপ্লিনড ছিলাম না। খেলাধুলায় ফাঁকি মেরেছি—তা–ও নয়। আর আমার জীবন আমি কীভাবে কাটাবো, সেটা আমার ব্যাপার। আমার জীবন তো আপনারা বলে দেবেন না। আপনি শুধু দেখবেন আমি মাঠে কেমন আছি। আমি যদি মাঠের ক্রিকেটে কোনো কিছু খারাপ করে থাকি, তখন আপনারা বলতে পারেন।’
কিন্তু তারকাদের সবকিছুই তো মানুষ অনুসরণ করে! কথাটা মনে করিয়ে দিলে আবারও সোজাসাপ্টা জবাব নাসিরের, ‘এগুলো হচ্ছে ভুয়া কথা, তারকা-মারকা বলে কিছু নেই। না খেয়ে থাকলে আপনারা কেউ এসে বলবেন না, ভাই খান। এগুলো তাই কোনো কিছু নয়। আমি যেমন আছি, ভালো আছি। আমি আপনাদের মতোই মানুষ। আমারও জীবন আছে, পরিবার আছে।’
সঙ্গে জানালেন, গত দেড় বছরের ‘নির্বাসনে’ কতটা মিস করেছেন ক্রিকেটটাকে, ‘যেই জিনিসটা মিস করছিলাম, ক্রিকেট খেলা। খুব ভালো লাগছে অনেক দিন পর ক্রিকেট খেলে। দেড় বছর বাইরে ছিলাম। বিন্দাস ছিলাম। আর কী বলব (হাসি)। পরিবারের সঙ্গে ছিলাম। ভালো ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ।’
এত দিন পর খেলায় ফিরে আজ নাকি অনেক কিছুই নতুন লাগছিল নাসিরের কাছে। সেটাই স্বাভাবিক অবশ্য। খেলার আগে লাগেজ গোছানো, ওয়ার্মআপ—সেসবও তো করলেন দেড় বছর পর। বাংলাদেশের হয়ে ১৯ টেস্ট, ৬৫ ওয়ানডে ও ৩১টি টি–টোয়েন্টি খেলা নাসির একই রোমাঞ্চ নিশ্চয়ই নিতে চাইবেন জাতীয় দলের হয়েও। হ্যাঁ, ব্যক্তিগত জীবনে ‘ভালো থাকা’ এই ক্রিকেটার এখন ক্রিকেটেও আছেন সুদিনের আশায়। জাতীয় দলে আবারও খেলার স্বপ্ন তাঁর চোখে।