আগেভাগে ইনিংস ঘোষণা করে স্টোকস কি ভুল করেছেন
ব্যাপারটা বেশ চমকপ্রদ। ৩০তম সেঞ্চুরি তুলে স্বচ্ছন্দে ব্যাট করছিলেন জো রুট। তাল মিলিয়ে ভালো সঙ্গ দিচ্ছিলেন ওলি রবিনসনও। এমন সময়ে আচমকাই দুই ব্যাটসম্যানকে মাঠ থেকে ডেকে পাঠান ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। ৭৮ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৯৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছে ইংল্যান্ড—এজবাস্টনে কাল অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে প্রথম দিনে এই ব্যাপারটা চট করে বুঝে উঠতে পারেননি অনেকেই।
ইংল্যান্ডের এমন আচমকা ইনিংস ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ইংল্যান্ডের দুই সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন ও কেভিন পিটারসেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার এক সাবেক অধিনায়কের কাছে মনে হয়েছে এটাই স্বাভাবিক। এমনকি মাঠে থাকা অস্ট্রেলিয়ান পেসার জস হ্যাজলউডের মন্তব্যও একই। ইনিংস ঘোষণা করা হবে এমনটা নাকি তাঁরা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন।
ইংল্যান্ডের গত এক বছরের খেলায় তাকালে অবশ্য বিস্ময়ের কিছু নেই। গত বছরের মে থেকে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও স্টোকস আক্রমণাত্মক ও ফলকেন্দ্রিক ক্রিকেটের যে ধারা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, ৭৮ ওভারে ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়া সেটিরই প্রমাণ।
গত এক বছরে এ নিয়ে ৪ বার ৯০ ওভার ব্যাটিংয়ের আগে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে ইংল্যান্ড। গত ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে তো ৫৮.২ ওভারেই ব্যাটিং ছেড়ে দিয়েছিলেন স্টোকস। এবার এজবাস্টনে সেটা ৭৮ ওভার পর্যন্ত গড়িয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার, দিনের শেষ বেলায় অস্ট্রেলিয়াকে কিছুক্ষণ ব্যাটিংয়ে রাখা। ৪ ওভার ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া অবশ্য উইকেট হারায়নি।
স্কোরবোর্ডে ৪০০ রান না ওঠার পরও ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ভন। নিজে নেতৃত্বে থাকলে কোনোমতেই এ সময়ে ইনিংস ঘোষণা করতেন না বলে সরাসরিই মন্তব্য করেছেন বিবিসি টেস্ট স্পেশালে, ‘আমি হলে ইনিংস ঘোষণা করতাম না। আপনি জানেন না পরে কী হতে পারে। (এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে) ইংল্যান্ড এমন বার্তা দিতে চাইছে, যা কোনো দল এর আগে করেনি। অধিনায়ক হিসেবে আমি কিছু রান যোগ করতে চাইতাম। বিশেষ করে জো রুট যেহেতু মাঠে আছে।’
ইংল্যান্ডের আরেক সাবেক অধিনায়ক পিটারসেনও মনে করেন, রান চার শর বেশি হওয়াটা দরকার ছিল। স্কাই স্পোর্টসে পিটারসেন বলেছেন, ‘এ সময়ে ইনিংস ঘোষণাটা আমার পছন্দ হয়নি। সিদ্ধান্তটা কাজে লাগবে কি না, সেটা পরে বোঝা যাবে। তবে আমি সব সময়ই বলি, টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪০০, সাড়ে ৪০০ রান তুলতে হবে। কারণ, এখানে একটা মানসিক ব্যাপার আছে। জানি না, আমি বেশিই কড়া কথা বলছি কি না। দেখা যাক, সামনে কী হয়।’
ইংল্যান্ডের দুই সাবেক অধিনায়কের সঙ্গে একমত নন পন্টিং। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক টিভি সম্প্রচারে বলেন, ড্রর বদলে ম্যাচে একটা ফল আনতেই স্টোকস ইনিংস ঘোষণা করেছেন, ‘এমন কিছুই আশা করেছিলাম। ইংল্যান্ড ওভারপ্রতি পাঁচ রানের বেশি হারে তুলছিল। যাতে শেষ বিকেলে অস্ট্রেলিয়াকে ১৫–২০ মিনিট ব্যাটিংয়ে নামানো যায়। সত্যি বলতে কি, ইনিংসের ঘোষণার ব্যাপারটা আমার ভালোই লেগেছে। এটাই হচ্ছে স্টোকস আর ম্যাককালামের অধীনে বর্তমান ইংল্যান্ডের দলের নতুন মানসিকতা। ম্যাচটাকে ফলের দিকে নিয়ে যেতে ওরা সব চেষ্টাই করে যাচ্ছে।’
প্রথম দিনের খেলা শেষে অস্ট্রেলিয়ার পেসার হ্যাজলউডও জানান, ইংল্যান্ডের সিদ্ধান্ত তাদের কাছে চমক ছিল না, ‘রুট এক শতে পৌঁছার পর যখন বড় শট খেলছিল, তখনই বুঝে গিয়েছি সিদ্ধান্ত আসছে। এই মুহূর্তে ওরা এভাবেই তো খেলে থাকে।’
প্রায় ৯ মাস পর টেস্টে ব্যাটিং করতে নামা বেয়ারস্টোর দিনশেষের কথায়ও ছিল একই সুর, ‘ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্তে ধারাভাষ্যকার আর কিছু মানুষ সম্ভবত বিস্মিত হয়েছিলেন। তবে আমাদের কাছে এটা সারপ্রাইজ ছিল না। কারণ, যেকোনো ওপেনিং জুটিতে আপনি ২০ মিনিট সময় দেওয়া মানে ব্যাপারটা তাঁদের জন্য ভালো কিছু নয়।’