তাইজুলের মধ্যে নিজেকে দেখেন হেরাথ
সিলেট টেস্ট শেষে তাইজুল ইসলাম যখন ম্যাচসেরার পুরস্কারটা নিয়েছেন, রঙ্গনা হেরাথ তখন অস্ট্রেলিয়াগামী বিমানে। বিসিবির সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় মেলবোর্নে পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছিলেন দুই বছর বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করা সাবেক বাঁহাতি স্পিনার।
বিমানে থাকায় তাইজুলের ম্যাচসেরা হওয়ার মুহূর্তটা সরাসরি দেখা হয়নি। তবে মেলবোর্নে বসে মিরপুর টেস্ট শেষে তাইজুলকে সিরিজসেরার পুরস্কার নিতে দেখেছেন। দেখে প্রিয় ছাত্রের অর্জনে গর্ববোধ করেছেন এই লঙ্কান কিংবদন্তি।
তাইজুলের অর্জনে হেরাথের গর্বিত হওয়ার অন্য কারণও আছে। দুজনই বাঁহাতি স্পিনার, এটা একটা কারণ। হেরাথের খেলোয়াড়ি জীবনের সঙ্গেও তাইজুলের অনেক মিল!
সেটা কী রকম? গত পরশু অস্ট্রেলিয়া থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে হেরাথই তা ধরিয়ে দিলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। মুরলি যাওয়ার পর আমার সুযোগ এসেছে। বাংলাদেশে সাকিব থাকা মানেই দুজন খেলোয়াড় থাকা। তাইজুলও সে জন্য নিয়মিত সুযোগ পায়নি। এর মধ্যেই তাইজুল যা সুযোগ পেয়েছে, তা কাজে লাগিয়েছে। আমিও অনেকটা তেমন। আমরা সুযোগ পেলেই তা দুহাতে লুফে নিয়েছি। সেদিক থেকে দুজনের মধ্যে মিল আছে।’
হেরাথ ক্যারিয়ারের প্রথম ৭-৮ বছর কাটিয়েছেন মুত্তিয়া মুরালিধরনের ছায়ায়। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির বিদায়ের পর শ্রীলঙ্কার একাদশে নিয়মিত হয়েছেন। মুরালির মতোই পালন করেছেন শ্রীলঙ্কার স্পিন আক্রমণকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব। অবসর নিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উইকেট (৪৩৩ উইকেট) নেওয়া বাঁহাতি বোলার হিসেবে। হেরাথের বিশ্বাস, বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে তাইজুলের ভূমিকাও ক্রমশ আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে। তাঁর কথা, ‘আমি নিশ্চিত, তাইজুল বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।’
এই ভবিষ্যদ্বাণী করার কারণটাও বলেছেন হেরাথ, ‘তাইজুল নিয়মিত খেলার সুযোগ পায় না। কিন্তু যখনই সে সুযোগ পেয়েছে, পারফর্ম করেনি এমন ম্যাচ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এখন যেটা তার বোলিংয়ে যুক্ত হয়েছে, সেটা হলো আত্মবিশ্বাস। নিজের সামর্থ্যে, লাইন-লেংথে আত্মবিশ্বাস থাকা যেকোনো স্পিনারের সবচেয়ে বড় সম্পদ। সঙ্গে ম্যাচের কৌশলগত জ্ঞান তো আছেই। সব মিলিয়ে সে এখন দারুণ ছন্দে আছে।’
ক্যারিয়ারের সেরা সময় বলতে যা বোঝায়, তাইজুলের সম্ভবত এখন সেই সময়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁতে দরকার আর মাত্র ৮ উইকেট। ২০২১ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ টেস্ট খেলে তাঁর ৭৮ উইকেট। ৫ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন, একবার ম্যাচে ১০ উইকেট। এই সময়ে বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ কে ছিলেন, তা তো জেনেই গেছেন। তাইজুলের এমন সাফল্যের রহস্য হেরাথেরই তাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারার কথা। তিনি কি বিশেষ কিছু করেছেন?
উত্তরে কৌশলগত জ্ঞান বাড়ানোর বিষয়টিও আলাদা করে বললেন হেরাথ, ‘বড় কোনো পরিবর্তন আনতে হয়নি। কিন্তু বোলিংয়ের ছোটখাটো বিষয়গুলো তো ধরিয়ে দিতে হয় মাঝেমধ্যে। ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেল নিয়ে কাজ করা হয়। এসব তো খুবই কমন ব্যাপার। এ ছাড়া আর কিছু নয়। বেশির ভাগ সময়ই আমাদের কথা হয় খেলার কৌশলগত দিক নিয়ে। এসব ক্ষেত্রে তাইজুলের মস্তিষ্ক তীক্ষ্ণ।’
ব্যাটসম্যানদের মন পড়ার দক্ষতায় মেহেদী হাসান মিরাজকেও হেরাথের পছন্দ। টেস্টের পাশাপাশি বাকি দুই সংস্করণের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা মিরাজকে বাকিদের থেকে আলাদা করে। হেরাথের মুখেই শুনুন, ‘সে প্রায় সময়ই তিন সংস্করণের ক্রিকেট খেলছে। সে এখন জানে, কীভাবে এক সংস্করণ থেকে আরেক সংস্করণের বোলিংয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। ব্যাটসম্যানের মন নিয়ে খেলার যে দক্ষতা, সেটা সে খুব ভালো পারে।’
মিরাজ জাতীয় দলে থাকায় আরেক অফ স্পিনার নাঈম হাসান নিয়মিত খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। কিন্তু যখনই সুযোগ পাচ্ছেন, তা দুই হাতে লুফে নিচ্ছেন। দক্ষতা তো বটেই, নাঈমের লড়াই করে যাওয়ার মানসিকতাও হেরাথকে মুগ্ধ করেছে, ‘এক-দেড় বছর পর পর খেলা, মাঝে ঘরোয়া লিগে দাপট দেখানো সহজ কথা নয়। আমি জানি এটা কতটা কঠিন। তবু যে নাঈম বিশ্বমানটা ধরে রাখতে পারছে, এটা বিরাট ব্যাপার।’
এই স্পিন–ত্রয়ীর সঙ্গে সাকিবের নামটাও যোগ করুন। বাংলাদেশের এই স্পিন বিভাগের সঙ্গে আবারও কাজ করার ইচ্ছা হেরাথের। বিসিবির সঙ্গে চুক্তি বাড়ানো নিয়ে কথাও হচ্ছে। তাঁর সঙ্গে কথাও শেষ হলো এ দিয়েই, ‘বিসিবির সঙ্গে কথা হচ্ছে। দেখা যাক, হয়তো আবার দেখা হবে।’