‘আজকালকার ছেলেপেলে’ কনস্টাসের কাছে রিভার্স স্কুপই নিরাপদ
তখন স্যাম কনস্টাসের রান ২। টেস্ট ক্যারিয়ারে খেলছেন ১১তম বল। বোলারের নাম যশপ্রীত বুমরা। অভিষিক্ত কনস্টাস খেললেন রিভার্স স্কুপ। ব্যাটে–বলে হলো না। আইপিএলের দল রাজস্থান রয়্যালসের এক্স পেজ থেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনার ভিডিও নিয়ে পোস্ট। ক্যাপশনে লেখা—‘আজকালকার ছেলেপেলে! সঙ্গে বিদ্রূপাত্মক ইমোজি।
ততক্ষণে ধারাভাষ্যকক্ষেও কিছু জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হয়ে গেছে। একবার ভাবুন তো! এই রিভার্স স্কুপ খেলতে গিয়ে স্যাম কনস্টাস আউট হয়েছেন! ব্যাপারটা তখন কেমন হতো? কনস্টাস নিজে আসলে এমনটাই ভেবে রেখেছিলেন। তবে সম্ভাব্য নেতিবাচক পরিণামের কথা মাথায় থাকার পরও এই শটকেই নিরাপদ ভেবেছেন অস্ট্রেলিয়ার ১৯ বছর বয়সী অভিষিক্ত ওপেনার।
‘আজকালকার ছেলেপেলে’ কনস্টাসের এই ঝুঁকির ফল কী? অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেকে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটি (৫২ বলে)। বুমরার এক ওভারে নিয়েছেন ১৮ রান, যা টেস্টে বুমরার করা সবচেয়ে খরুচে ওভার। এর আগে বুমরার করা ম্যাচের সপ্তম ওভারে ১৪ রান নেওয়ার পথে দ্বিতীয় বলে রিভার্স স্কুপে মেরেছেন ছক্কা। রিভার্স স্কুপে ছক্কা দেখার মতোই ঘটনা। তবে বুমরার বলে মাঠের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো ধরনের ছক্কাও কম দর্শনীয় নয়।
আজকের আগে বুমরা সর্বশেষ ছক্কা হজম করেছেন ২০২১ সালে। মাঝের তিন বছরে টেস্টে টানা ৪৫৬২ বলে কোনো ছক্কা হজম করেননি ভারতের ১ নম্বর বোলার।
প্রথমবার টেস্ট খেলতে নামা কনস্টাসের আগে টেস্টে বুমরা সর্বশেষ ছক্কা হজম করেছেন ২০২১ সালে। মাঝের তিন বছরে টেস্টে টানা ৪৫৬২ বলে কোনো ছক্কা হজম করেননি ভারতের ১ নম্বর বোলার।
শুধু ওই একটা শটই নয়, কনস্টাস তাঁর দাপুটেপনা দেখিয়েছেন আরও কয়েকটি শটেও। ইনিংসের ১৩.১ ওভারের মধ্যেই ছুঁয়ে ফেলেছেন ফিফটি।
৬০ রান করে দিনশেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কনস্টাস বলেছেন, বুমরার বলে রিভার্স স্কুপের নেতিবাচক সম্ভাবনা তাঁর মাথাতেই ছিল। তবে নিজের অনুশীলনের ওপর আস্থাও ছিল, ‘আমার মনে হয়, (ওই শটে) আউট হলে দেখতে বাজে লাগত। তবে ওই শটটা নিয়ে অনেক কাজ করেছি, আমার মনে হয় আমার জন্য এটাই নিরাপদ শট। এটাই হয়তো নবীন ও কাঁচা বয়সের সৌন্দর্য। আমি শুধু সেরা উপায়ে বোলারদের প্রতি চাপ তৈরি করতে চেয়েছি এবং কিছু রান করতে পেরে ভালোই লাগছে।’
এক ওভারে ১৮ রান খরচ করলেও দিনটা বুমরার খারাপ যায়নি। আউট করেছেন উসমান খাজা, ট্রাভিস হেড ও মিচেল মার্শকে। সময়ের সেরা বোলারের বিপক্ষে কনস্টাসের পরিকল্পনা কী ছিল, ‘আমার মনে হয় আমি উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেয়েছি, প্রথমবার তাঁর মুখোমুখি হয়েছি, অ্যাকশনের সঙ্গেও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। অবশ্যই, সে আমাকে কয়েকবার পরাস্ত করেছে, ভাগ্য ভালো থাকায় বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু এটা দারুণ এক লড়াই ছিল।’
কনস্টাস বুমরা প্রসঙ্গ এখানেই থামাননি। তিনি আরও বলেছেন, ‘সে কিংবদন্তি। আমি তাকে একটু চাপে ফেলার চেষ্টা করেছি, যা আজ কাজে লেগেছে। কিন্তু সেই ৩ উইকেট নিয়েছে, ম্যাচের ছন্দ ঘুরিয়েছে। নিজেকে আমি সব সময় চ্যালেঞ্জ করি, সেরাটা বের করে নেওয়ার চেষ্টা করি। তার সঙ্গে লড়াই করে চেষ্টা করেছি, তার লাইনটাকে এলোমেলো করতে।’
যে শট নিয়ে এত কথা, সেই রিভার্স স্কুপ পরিকল্পিতই ছিল বলে জানিয়েছেন, ‘অবশ্যই পূর্বপরিকল্পিত ছিল। বিশেষ করে এই গতির বলে। মাথাটা সোজা রাখার চেষ্টা করেছি, ব্যাটে আসার আগপর্যন্ত বলে চোখ রেখেছি। হ্যাঁ, কাজে লেগেছে, ফিল্ডিং পরিবর্তন করতে হয়েছে, যা ভালো ছিল। এরপর বল নিজের জোনে তাদের বোলিং করাতে বাধ্য করেছি।’