ফতুল্লা স্টেডিয়ামে অনেক দিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় না। সর্বশেষ হয়েছে সেই ২০১৪ সালে। পুনেতে বসে হঠাৎ ফতুল্লার কথা কেন? কারণ, কাল দুপুরে পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে যাওয়ার দীর্ঘ পথটা ফতুল্লায় যাওয়ার স্মৃতি মনে করিয়ে দিল। যাচ্ছি তো যাচ্ছিই, পথ আর শেষ হয় না। যানজটের দিক থেকেও পুনে বলতে গেলে ঢাকার ছোট ভাই। বেশি মিল খুঁজে পেলাম হয়তো সে কারণেই।
এর আগে কখনো পুনেতে আসিনি। শহর কেমন, মাঠ কোথায়—কোনো ধারণাও ছিল না। বিশ্বকাপে আসার আগে হোটেল বুক করতে গিয়ে দেখি, মাঠের আশপাশে কিচ্ছু নেই। পরিচিত ভারতীয় সাংবাদিকের শরণাপন্ন হওয়ার পর জানতে পারলাম, স্টেডিয়াম শহর থেকে অনেক দূরে, মুম্বাই-পুনে হাইওয়ের পাশে একটা বিরান ভূমিতে। যেতে-আসতে যে বিড়ম্বনা, তাতে সারা বিশ্ব ঘুরে ফেলা ওই সাংবাদিক রায় দিয়ে দিলেন, ‘পুনেতে ম্যাচ কাভার করার মতো কষ্ট আর হয় না।’
সেই কষ্টের কিছুটা নমুনা কাল হাতেনাতেই পেয়ে গেলাম। বাংলাদেশের অনুশীলন পর্ব শেষ করে হোটেলে ফিরতে উবার ডাকব। ইন্টারনেট কাজই করছে না। মূল গেটের নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে জানলাম, সমস্যাটা আমার নেটওয়ার্কের নয়। নিরাপত্তার কথা ভেবে জ্যামার বসানো হয়েছে। ইন্টারনেট কাজ করবে না। তাহলে হোটেলে ফিরব কীভাবে? একজন বুদ্ধি দিলেন, ‘অটোতে মোকাই চক চলে যাও। সেখানে গিয়ে উবার ডাকো।’
পুনেতে আসার পর কালই প্রথম বলতে গেলে হোটেল থেকে বেরিয়েছি। মোকাই চক কোথায়, কোনো ধারণাই নেই। তারপরও কী আর করা! যা আছে কপালে বলে বেরিয়ে পড়লাম। স্টেডিয়ামের বাইরে উৎসুক জনতার ভিড়। বাহ্, বাংলাদেশ দল এখানে ভালোই জনপ্রিয় দেখছি। সাকিবদের একনজর দেখার জন্য এত মানুষ! খুব দ্রুতই ভুল ভাঙল। মুখে মুখে উচ্চারিত কোহলি-রোহিত-বুমরাহ শুনেই বুঝে গেলাম এই ভিড় বাংলাদেশ দলের জন্য নয়। একটু পরেই ভারত অনুশীলন করতে আসবে। জনতা তারই অপেক্ষায়।
অটো পেতেও অনেক ভোগান্তি। গরমে-ধুলায় অবস্থা মোটামুটি শোচনীয়। তার ওপর ক্ষুধায় পেট জ্বলছে। সকালে নাশতা করে বেরিয়েছি। এরপর সারা দিন সেখানে আর কিছু পড়লে তো! অটোতে ওঠার সময়ই প্রায় পাঁচটা বাজে। খাওয়াটাওয়া তখন মাথায় উঠেছে, কোনোমতে হোটেলে ফিরতে পারলে বাঁচি।
মোকাই চক এসেও দেখি, আমার ফোনের এয়ারটেল নেটওয়ার্কে অন্য সবকিছু করা গেলেও উবারের অ্যাপ কাজ করছে না। আমার অবস্থা দেখে অটোচালকের হয়তো মায়া হলো। তাই নানা রকম বিকল্প ব্যবস্থার খোঁজ দিতে লাগলেন। এর একটা অটোতেই চলে যাওয়া। আরেকটা উপায় বাস। কিন্তু দুটিতেই সময় অনেক বেশি লাগবে। হাতে অত সময় নেই। কী করি, কী করি!
হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল। অটোচালককে বললাম আমাকে একটা মুঠোফোনের দোকানে নিয়ে যেতে। সেখানে কেউ যদি একটা উবার ডেকে দিতে পারে! মুঠোফোনের দোকানদার উবার ডেকে দিতে না পারলেও হটস্পট বানিয়ে আমার উবার অ্যাপটা কার্যকর করে দিতে পারলেন। মিনিট দশেক অপেক্ষার পর একটা গাড়ি পেয়েও গেলাম।
মাঠ থেকে বেরোনোর প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা পর হোটেলে। ভেবেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে, এই মাঠে এবারই আরও দুদিন যেতে হবে। ১১ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটাও তো এখানে। তখন আরও একাধিক দিন। এত জায়গা থাকতে এই পুনেতেই কেন বাংলাদেশ দলকে দুবার আসতে হবে!