ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫৭.৪ ওভারে ২১৮ (ক্রলি ৭৯, বেয়ারস্টো ২৯, ডাকেট ২৭, রুট ২৬; কুলদীপ ৫/৭২, অশ্বিন ৪/৫১, জাদেজা ১/১৭)।
ভারত ১ম ইনিংস: ৩০ ওভারে ১৩৫/১ (জয়সোয়াল ৫৭, রোহিত ৫২*, গিল ২৬*; বশির ১/৬৪)।
ভারত ৮৩ রানে পিছিয়ে
ড্যান লিবকা অস্ট্রেলিয়ান কৌতুক-লেখক। ধর্মশালায় দ্বিতীয় সেশনের খেলা চলার সময় এক্সে পোস্ট করলেন, ‘যদি যশপ্রীত বুমরা এ ইনিংসে উইকেট না পায়, তাহলে আমি ধর্মশালা যাব এবং (সংশ্লিষ্ট) সবার সঙ্গে কথা বলব (এ ব্যাপারে)।’ একটু পর স্টুয়ার্ট ব্রড লিবকার ওই পোস্টের নিচে রিপ্লাই দিলেন, ‘তোমার ভ্রমণের খবরাখবর জানাবে কিন্তু।’
বুঝতেই পারছেন, বুমরা শেষ পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে উইকেট পাননি। এ টেস্ট দিয়েই বিশ্রাম কাটিয়ে দলে ফিরেছেন বুমরা, ধর্মশালার উইকেট ব্যাটিং-সহায়ক হলেও সকালে ছিল ভালো মুভমেন্ট। তবে সে সময়টা বুমরাকে দেখেশুনে পার করেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু সে পর্যন্তই।
কুলদীপ যাদবের ৫ উইকেট, শততম টেস্ট খেলতে নামা রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৪ উইকেটে আরেকবার নাটকীয় ধসের কবলে পড়া ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে মাত্র ২১৮ রানে। এরপর রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সোয়াল তাদের আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন-এমন কন্ডিশনে ব্যাটিংটা কীভাবে করতে হয়। স্বপ্নের মতো এক সিরিজ কাটানো জয়সোয়াল স্টাম্পিং হওয়ার আগে খেলেছেন ৫৮ বলে ৫৭ রানের ইনিংস, দিন শেষে রোহিত অপরাজিত ৫২ রানে। প্রথম দিনই ভারত ব্যবধান নামিয়ে এনেছে ৮৩ রানে।
টসে জিতে ব্যাটিং নিতে দুবার ভাবেননি স্টোকস। ওপেনাররা আরেকবার ভালো শুরু এনে দেন ইংল্যান্ডকে, ডাকেট ইনিংসের ১৮তম ওভারে কুলদীপের প্রথম শিকার হওয়ার আগে প্রথম উইকেটে ওঠে ৬৪ রান। প্রথম সেশনে ওলি পোপের উইকেটও ওবশ্য হারায় ইংল্যান্ড। কুলদীপকে প্রায় দৌড়ে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন পোপ, মিস করে হন স্টাম্পিং। হায়দরাবাদে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির পর রান করাই যেন ভুলে গেছেন তিনি।
মাঝে বেশ লম্বা একটা সময় ইংল্যান্ডের বড় দুশ্চিন্তা ছিল টপ অর্ডার। ক্রলি ও ডাকেট এখন ভালো শুরু এনে দিচ্ছেন নিয়মিতই, কিন্তু এ সিরিজে মিডল অর্ডারে বারবার গড়বড় হয়ে যাচ্ছে তাদের। ক্রলি পেয়েছেন সিরিজের চতুর্থ ফিফটির দেখা। অবশ্য এবারও সেটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি। কুলদীপের ফুললেংথ থেকে টার্ন করে ভেতরে ঢোকা বলে তিনি বোল্ড হন ৭৯ রান করে, ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ৩ উইকেটে ১৩৭। শততম টেস্ট খেলতে নামা জনি বেয়ারস্টো যখন কুলদীপের চতুর্থ শিকার, তখনো ইংল্যান্ডের রান ছিল ১৭৫।
ওই ১৭৫ রানে দাঁড়িয়েই ইংল্যান্ড হারায় জো রুট ও বেন স্টোকসের উইকেটও। রুট এলবিডব্লু হন রবীন্দ্র জাদেজার বলে, স্টোকসকে এলবিডব্লু করে নিজের পঞ্চম উইকেটটি পান কুলদীপ। ক্যারিয়ারে ৫০ উইকেটও হয়ে গেছে তাঁর, প্রথম ভারতীয় বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার হিসেবে এ মাইলফলক ছুঁলেন তিনি। ইংল্যান্ডকে তাদের দুর্দশা থেকে মুক্তি দেওয়ার দায়িত্বটা এরপর তুলে নেন অশ্বিন। ইনিংসে চতুর্থ ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০ পেরিয়ে ৩০-এর আগেই থামেন বেন ফোকস, শোয়েব বশিরের সঙ্গে নবম উইকেটে যিনি তোলেন ৩৫ রান।
ভারত এরপর যখন ব্যাটিংয়ে নামল, ধর্মশালার উইকেটকে মনে হচ্ছিল একেবারেই আলাদা। আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করা ভারতের আক্রমণের ধার যেন বেড়েছে আরও। ২১তম ওভারেই রোহিত ও জয়সোয়ালের জুটিতে আসে ১০০ রান। সুনীল গাভাস্কারের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এক সিরিজে ৭০০ রান করার পথে জয়সোয়াল ফিফটি পূর্ণ করেন মাত্র ৫৬ বলে। শোয়েব বশিরের প্রথম ওভারেই এ বাঁহাতি মারেন ৩টি ছক্কা। মার্চেই এক পঞ্জিকাবর্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ ছক্কা মারা ব্রেন্ডন ম্যাককালামের (৩৩) রেকর্ডের আরও কাছে চলে এসেছেন জয়সোয়াল (২৬)।
শেষ পর্যন্ত বশিরকে সামনে এসে খেলতে গিয়ে জয়সোয়াল স্টাম্পিং হলে ভাঙে ১০৪ রানের জুটি। শুবমান গিল অবশ্য নেমে মারেন ২টি করে চার ও ছক্কা, অন্যদিকে ৭৭ বলে ফিফটি পান রোহিত। দুজন নিশ্চিত করেন, কঠিন এক দিনের আভাস পেয়েই আজ রাতে ঘুমাবেন স্টোকসরা।
লিবকা অবশ্য দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগেই মেলবোর্ন থেকে ধর্মশালার দীর্ঘ ফ্লাইটের সূচির একটা স্ক্রিনশট পোস্ট করেছেন। তিনি ধর্মশালা পৌঁছানোর আগেই শেষ হয়ে যেতে পারে এ টেস্ট, জানিয়েছেন সে শঙ্কার কথাও। প্রথম দিনে যা অবস্থা, তাতে ভারত খুব একটা সময় নেবে বলে মনেও হচ্ছে না।