ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ
ম্যাচের শেষ ৩ বলে হ্যাটট্রিক করে প্রাইম ব্যাংককে জেতালেন মেহেদী
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে টানা তৃতীয় জয় পেয়েছে আবাহনী লিমিটেড ও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। তৃতীয় রাউন্ডের প্রথম দিনে আজ বড় জয় পেয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। ফতুল্লায় ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ১২১ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচে দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে শেখ জামাল। বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে শাইনপুকুরের ১৬৯ রান আবাহনী পেরিয়ে গেছে ১৫.৫ ওভার হাতে রেখেই। বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে অবশ্য ৩০৫ রান করেও সিটি ক্লাবের বিপক্ষে স্বস্তিতে ছিল না প্রাইম ব্যাংক। শেষ ৩ বলে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিক করে দলকে ৩ রানে জিতিয়েছেন জাতীয় দলের স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান।
নাটক শেষে প্রাইম ব্যাংকের টানা তৃতীয় জয়
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে ১৫ রান দরকার ছিল ৬ উইকেট হাতে থাকা সিটি ক্লাবের। টিকে ছিলেন ৩৪ বলে ৬৬ রান করা অধিনায়ক সাজ্জাদুল হক। বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্পিনার মেহেদীর করা ওভারের প্রথম বলটায় লেগ বাই থেকে ১ রান নিয়ে অধিনায়ককে স্ট্রাইক দেন আশিক উল আলম। স্ট্রাইকে এসেই ফাইন লেগ দিয়ে চার পেয়ে যাওয়া সাজ্জাদুল পরের বলটায় লং অফ দিয়ে মারেন ছক্কা। শেষ ৩ বলে তখন দরকার ৪ রান, বাকি ৬ উইকেটই।
কিন্তু এরপর আর একটি রানও যোগ হয়নি সিটির স্কোরে। উল্টো হারিয়েছে ৩ উইকেট। চতুর্থ বলে মেহেদীকে আরেকবার উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে নাজমুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দেন ৩৭ বলে ৭৬ রান করা সাজ্জাদুল। ৭টি ছক্কা মারা সিটি অধিনায়ককে ফেরানোর পরের দুই বলে ইফরান হোসেন ও মঈনুল ইসলামকে এলবিডব্লু করে মেহেদী পেয়ে যান হ্যাটট্রিকই।
৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩০২ রান করে ৩ রানে হারে সিটি। আর ৩ রানের এই জয়ে টানা তৃতীয় জয় তুলে নিল প্রাইম ব্যাংক।
রান তাড়ায় শেষ দুই ব্যাটসম্যান ছাড়া সিটির সবাই করেছেন ২০ রানের বেশি। অধিনায়ক ছাড়াও ফিফটি পেয়েছেন জয়রাজ শেখ (৭৮ বলে ৫৫) ও শাহরিয়ার কমল (৮৪ বলে ৬৬)। তবে এ দুজনের ফিফটির পরও শেষ ১০ ওভারে ১১২ রান দরকার ছিল সিটির। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে সাজ্জাদুল দলকে প্রায় জিতিয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তীরে তরি ভেড়াতে পারলেন না।
হ্যাটট্রিক পাওয়া মেহেদী এর আগে পেয়েছেন আরও ১টি উইকেট। তবে ৪ উইকেট নিতে ১০ ওভারে তাঁকে খরচ করতে হয়েছে ৮৬ রান। এর আগে ওপেনার পারভেজ হোসেনের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেট ৩০৫ রান তোলে প্রাইম ব্যাংক। আজ তাঁর সঙ্গে ওপেন করেছেন অধিনায়ক তামিমই। তবে মাত্র ৬ রান করেই ফিরেছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। তামিম ফেরার পর জাকির হাসানকে নিয়ে ১৫৭ রানের জুটি গড়েন পারভেজ। আগের ম্যাচে ১৫১ রান করা বাঁহাতি আজ ১১৪ বলে করেছেন ঠিক ১০০ রান। তাঁর ইনিংসে চার-ছক্কা ৫টি করে। জাকির করেছেন ৭৭ বলে ৭৯ রান। এ ছাড়া ২৯ বলে ৪২ রান করেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। সিটির পেসার মেহেদী হাসান নিয়েছেন ৪ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
প্রাইম ব্যাংক: ৫০ ওভারে ৩০৫/৮ (পারভেজ ১০০, জাকির ৭৯, মিঠুন ৪২; মেহেদী ৪/৬৮)।
সিটি ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩০২/৭ (সাজ্জাদুল ৭৬, শাহরিয়ার ৬৬, জয়রাজ ৫৫, রাফসান ৩৬, সাদিকুর ৩৫, আশিক ২৪*; মেহেদী ৪/৮৬)।
ফল: প্রাইম ব্যাংক ৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মেহেদী হাসান।
আবাহনীর আফিফ-খালেদময় জয়, ম্লান লিটন
টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে আবাহনীর পেসারদের তোপে বিপদে পড়ে শাইনপুকুর। আবাহনীর জাতীয় দলের দুই পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও খালেদ আহমেদ ১০ ওভারের মধ্যেই ৩১ রানে শাইনপুকুরের প্রথম ৪ উইকেট তুলে নেন। এর মধ্যে ৩টিই নেন খালেদ। ১৪তম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান যখন ইরফান শুক্কুরকে এলবিডব্লু করেন, শাইনপুকুরের স্কোর ৪৭/৫। দলটির প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের তিনজনই ফেরেন ৭ রান করে।
সেখান থেকেই মেহেরব হাসানকে নিয়ে ৬৭ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক আকবর আলী। দুজনেই পান ফিফটি। ৪৪ বলে ৫৫ রান করে আকবর আফিফ হোসেনের প্রথম শিকার হয়ে ফিরে গেলেও মেহেরব শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ঠিক ৫০ রান করে। আকবরকে ফেরানোর পর আফিফ পেয়েছেন আরও ২টি উইকেট। ১৯ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে শাইনপুকুর ৪২.৪ ওভারে অলআউট ১৬৯ রানে। আবাহনীর খালেদ ৬ ওভারে ১৭ রানে ও আফিফ ১০ ওভারে ৪৬ রানে নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট।
আফিফ পরে ব্যাট হাতেও ২৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন। আবাহনীর হয়ে ৮৭ বলে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। এ ছাড়া চারা নামা মাহমুদুল হাসান ৫৯ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত ছিলেন। আফিফকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেটে ৭৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন বাংলাদেশ টেস্ট দলের ওপেনার মাহমুদুল। জাতীয় দল থেকে সদ্য বাদ পড়া লিটন দাস করেছেন ১৯ বলে ৫ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শাইনপুকুর: ৪২.৪ ওভারে ১৬৯ (আকবর ৫৫, মেহেরব ৫০*; খালেদ ৩/১৭, আফিফ ৩/৩৪)।
আবাহনী: ৩৪.১ ওভারে ১৭২/৩ (নাঈম ৬৬, মাহমুদুল ৫১*, আফিফ ২৫*; আরাফাত সানি ২/২২)।
ফল: আবাহনী ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আফিফ হোসেন।
দুই ব্যাটসম্যান ও দুই বোলারে শেখ জামালের বড় জয়
ফতুল্লায় ১৩ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে শেখ জামাল। সেই দলটি শেষ ৭ উইকেট হারায় ৬৬ রানে। মাঝের সময়টায় সাইফ হাসান, ফজল রাব্বি ও নুরুল হাসানদের ব্যাটিংয়েই ২৫০ পেরোয় দলটি।
তৃতীয় উইকেটে ফজলে রাব্বিকে নিয়ে ৫৭ রানের জুটি গড়া ওপেনার সাইফ ফেরেন ৩৪ রান করে। শেখ জামালের ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটা হয় এরপরই। চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক নুরুল হাসানকে নিয়ে ১২০ রান যোগ করেন ফজলে। ১০০ বলে ৭৪ রান করেছেন ২০১৮ সালে বাংলাদেশের হয়ে দুটি ওয়ানডে খেলা ফজলে। তবে অধিনায়ক নুরুল লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি করেই ফিরেছেন। ৯৭ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ১০১ রান করেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
রান তাড়ায় ১৫ রানেই ৫ উইকেট হারায় ব্রাদার্স। দলটির প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানের চারজনই ফেরেন শূন্য রানে। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে শাকিল হোসেন (২৬) ও রাহাতুল ফেরদৌস (৫৩) ৬৫ রানের জুটি গড়লেও ব্রাদার্স ৪০.২ ওভারে অলআউট ১৩৫ রানে। শেখ জামালের দুই পেসার রিপন মণ্ডল ও শফিকুল ইসলাম নেন ৪টি করে উইকেট। রিপন ১০ ওভারে ৪৪ রান দিলেও বাঁহাতি পেসার শফিকুল ৯.২ ওভারে দেন মাত্র ১২ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শেখ জামাল: ৫০ ওভারে ২৫৬ (নুরুল ১০১, ফজলে ৭৪, সাইফ ৩৪; জায়েদ ৩/৪৩, ওয়ালিদ ২/৫১)।
ব্রাদার্স: ৪০.২ ওভারে ১৩৫ (রাহাতুল ৫৩, শাকিল ২৬; শফিকুল ৪/১২, রিপন ৪/৪৪)।
ফল: শেখ জামাল ১২১ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নুরুল হাসান।