যেখানে ভুল করলেন মাহমুদউল্লাহ
অন্য সবার মতো মাহমুদউল্লাহর সামনেও দুটি পথই ছিল—স্বেচ্ছায় অবসর কিংবা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঝুঁকি।
খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ার যখন পথের এই মোড়ে এসে দাঁড়ায়, তখন সম্ভবত সবার মগজ ও মন ঠিক একসঙ্গে কাজ করে না। মগজ থেকে নির্দেশ আসে, ‘সময় শেষ হয়ে গেছে তোমার, এবার বিদায় বলে দাও।’ মন বলে, ‘দেখো না আরেকটু চেষ্টা করে। টিকেও তো যেতে পারো।’
কেউ কেউ সত্যি টিকে যান আরও কিছুদিন। কেউ প্রত্যাখ্যাত হন নির্মমভাবে। মাহমুদউল্লাহর এই অমোঘ সত্য না জানার কোনো কারণ নেই। এত বছরের ক্যারিয়ার তাঁর। চোখের সামনে দেশে-বিদেশে কতজনকেই তো দেখেছেন সময় হয়ে গেছে বুঝে সম্মানসহ বিদায় নিতে। ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যাখ্যাত হতেও নিশ্চয়ই কম খেলোয়াড়কে দেখেননি।
মাহমুদউল্লাহও হয়তো জেনেবুঝেই নিয়েছিলেন ঝুঁকিটা। কিন্তু লাভ হলো না। প্রত্যাখ্যাতই হলেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল থেকে তাঁকে বাদ দিয়ে হয়তো এ বার্তাই দেওয়া হলো—এ সংস্করণে তোমার সময় শেষ।
আসলেই শেষ হয়তো। এ সংস্করণে দল নতুন করে পথচলা শুরু করার কথা বলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। সেই পথচলায় মাহমুদউল্লাহসহ আরও কেউ কেউ যে যাত্রী হতে পারবেন না, এ আভাসও মিলেছে। সেটা বুঝেই কিনা কয়েক দিন আগে তাঁর দীর্ঘদিনের সতীর্থ এবং সম্ভবত দলে তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষ মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দিয়েছেন। সেই বিদায়ে মাহমুদউল্লাহ নিজেও তো আবেগাপ্লুত হয়েছেন, সম্মান জানিয়ে ধন্যবাদ দিয়েছেন প্রিয় বন্ধুকে। কিন্তু মুশফিক কি মাহমুদউল্লাহকে এভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় বলার সুযোগটা পাবেন?
শুধু মুশফিক কেন, তাঁর আরেক সতীর্থ তামিম ইকবালও তো টি-টোয়েন্টি থেকে নিজেই বিদায় নিয়েছেন, কিংবা এর আগে মাশরাফি বিন মুর্তজার উদাহরণও ছিল। তখনকার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যখন মাশরাফিকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা শুরু করলেন, সেই ভাবনা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই ঘোষণা দিয়ে ‘ম্যাশ’ খেললেন বিদায়ী ম্যাচটা।
টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মাহমুদউল্লাহকেও। সেটাই তো একটা বড় বার্তা হিসেবে নিতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ। সঙ্গে এমন বাজে ফর্ম। সর্বশেষ ১১ ম্যাচে মাত্র ১৬.৫৪ গড়, স্ট্রাইক রেট ১০২.৮২। এশিয়া কাপের দুই ম্যাচে ২০ পেরিয়েছেন, তবে এক ম্যাচে স্ট্রাইক রেট ছিল ৯২.৫৯, অন্যটিতে ১২২.৭২। অন্যরা যে তাঁর চেয়ে খুব ভালো করেছেন, এমন নয়। কিন্তু দল যখন ঝুঁকি নেবে, তখন তো একটু তরুণদের ওপরই নেবে, ফর্ম হারানো ৩৭ বছর ছুঁই ছুঁই কারও ওপর নয়।
যখন তাঁর সময় ছিল, তখন তো দল আস্থা রেখেছে মাহমুদউল্লাহর ওপর। সেই সময়টাও বেশ দীর্ঘই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারে। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ধ্রুপদি ঘরানার। এ রকম ব্যাটসম্যানরা দলের ইনিংস গড়েন সাধারণত। কিন্তু সীমিত ওভারে সেই মাহমুদউল্লাহর ভূমিকা হয়ে গেল ফিনিশারের। ৬-৭ নম্বরে নামবেন, ম্যাচ শেষ করে আসবেন, এটাই হয়ে গেল তাঁর কাছে প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা যে মাহমুদউল্লাহ একেবারে পূরণ করেনি, তা নয়। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো সেই ১৮ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস কিংবা পরের বছর চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঝোড়ো ফিফটিতে ম্যাচসেরা হওয়াটা তাঁর সামর্থ্যের উদাহরণ হয়েই থাকবে। এ সংস্করণে তাঁর সেরা সময়টা আসলে ২০১৬ থেকে ২০১৮-এর মধ্যেই কাটিয়েছেন। ওই বছরগুলোতেই ১৪০-এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন।
তবে গত বছরখানেকের মাহমুদউল্লাহকে ঠিক আগের সেই মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মেলানো যাচ্ছিল না। বোঝাই যাচ্ছিল,২০ ওভারের খেলাটার সঙ্গে আর তাঁর জমছে না। কিন্তু ওই যে, একটা ইনিংস খেলে দিলেই তো হিসাব বদলে যাবে, এই আশা! সেই আশাতেই ছিলেন হয়তো। হলো না।
টেস্ট থেকে নিজেই অবসর নিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি থেকে পড়লেন বাদ। বাকি রইল ওয়ানডে। আপাতত সেখানেই শুধু চেনা মাহমুদউল্লাহকে খুঁজে পাওয়ার অপেক্ষা। সেই অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হলে অবশ্য প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঝুঁকিটা সেখানেও চলে আসবে।