প্লেয়ার্স ড্রাফটই সব নয়। এরপরও খেলোয়াড় নেওয়ার সুযোগ আছে। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের স্থানীয় ক্রিকেটার নেওয়ার কাজটা মূলত ড্রাফট থেকেই হয়ে যায়। ড্রাফটের তালিকা থেকে নেওয়া হয় কিছু বিদেশি ক্রিকেটারও। আজ সোনারগাঁও হোটেলে হওয়া বিপিএলের সেই প্লেয়ার্স ড্রাফটের পর সব ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের কথায়ই খুঁজে পাওয়া গেলে পছন্দমতো খেলোয়াড় নিতে পারার তৃপ্তি।
সফল ড্রাফটের আনন্দ রংপুরের
ড্রাফট শেষে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির পরিচালক শানিয়ান তানিম বলেছেন, ‘এবারের ড্রাফট সফল। আমরা যেভাবে খেলোয়াড় নিয়েছি, আমার মনে হয় রংপুর রাইডার্স পূর্ণাঙ্গ একটা দলই গড়তে পেরেছে।’
বিপিএলের সময় আরও দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট এসএ টি-টোয়েন্টি ও বিগব্যাশও চলবে। বিদেশি খেলোয়াড় পেতে তাই একটু কষ্টই হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। এ ক্ষেত্রে রংপুরের নীতিটা হলো পারতপক্ষে অল্প কিছু ম্যাচের জন্য বিদেশি খেলোয়াড় নেবে না তারা।
শানিয়ান বলেছেন, ‘যেহেতু আরও দুটি টুর্নামেন্ট হচ্ছে, বিদেশি খেলোয়াড় পাওয়ার ক্ষেত্রে সূচিটা একটু কঠিন। গতবারও কষ্ট হয়েছে। তবে এবার যাঁরা পুরো টুর্নামেন্টে থাকবেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমন খেলোয়াড়ই আমরা নেব।’
গত বছরের তুলনায় বিসিবি এবার বিপিএল নিয়ে অনেক গোছানো বলে মনে হচ্ছে তাঁর। শানিয়ানের আশা, বিপিএল এবার থেকেই ভালো হতে শুরু করবে।
তামিমকেই নেতা মানছে বরিশাল
ড্রাফট থেকে নেওয়া ক্রিকেটারদের হিসাবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালই বেশি তারকাদীপ্ত। তামিম ইকবাল তো আছেনই, পুরোনো দুই তারকা মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহকেও ধরে রেখেছে বরিশাল। ‘এ’ শ্রেণির আরও দুই ক্রিকেটার জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন এবং রিশাদ হোসেনকেও নিয়েছে তারা।
ড্রাফট শেষে ফরচুন বরিশালের মালিক মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি ভালো দল গঠন করতে। এ বছর চারজন অধিনায়ক আমাদের দলে রয়েছেন। আমরা চেষ্টা করেছি গতবারের একটা প্রতিচ্ছবিও যেন দলে ফুটে ওঠে। গতবার যারা ছিল প্রায় সবাইকে আমরা নিয়েছি।’
এবারও তামিমই দলকে নেতৃত্ব দেবেন জানিয়ে মিজান বলেছেন, ‘তামিম ইকবালের সফল প্রচেষ্টায় এই দল গঠন করা। আশা করব উনি মাঠে নেতৃত্ব দিয়ে আপনাদের একটা ভালো বিপিএল উপহার দিতে পারবেন।’ পরে আবার বলেছেন, ‘তামিমকে ফরচুন বরিশালের মালিক বলতে পারেন, উনিই ফরচুন বরিশালের নেতা।’
সিলেটের ‘মেন্টর’ও হবেন মাশরাফি
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে রেখেই ড্রাফট থেকে ১১ জন স্থানীয় ক্রিকেটার নিয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে মাহীন মাজহার বলেছেন, ‘আমরা কৌশলগতভাবে একটা ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের একটা অগ্রাধিকার তালিকা ছিল। সেই তালিকা ধরে যে খেলোয়াড়দের আমাদের নেওয়ার কথা ছিল একজন বাদে আমরা মোটামুটি দলটা সেভাবেই গড়তে পেরেছি। আমরা সন্তুষ্ট।’
মাশরাফির ব্যাপারে তাঁর কথা, ‘গত বছর হয়তো সেভাবে খেলতে পারেননি (মাশরাফি), কিন্তু এর আগের বছর আমাদের অনেকগুলো জয় এনে দিয়েছেন। আশা করছি তিনি খেলার মতো অবস্থায় থাকলে দলের সঙ্গে থেকে মেন্টরের দায়িত্বও পালন করবেন। খেলার অবস্থা থাকলে খেলবেন। আমরা সেটাই চাই।’
সিলেটের মালিকানা নিয়ে কিছু সমস্যার কথা শোনা গেলেও মাহীন মাজহারের দাবি, এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই। তাঁরা পেশাদারভাবেই দল চালাবেন।
চিটাগংয়ে ফেরার আনন্দ
বিপিএলের প্রথম দুই আসরের পর অনেকটা রাজনৈতিক কারণেই টুর্নামেন্টটা থেকে দূরে সরে যেতে হয় চিটাগং কিংসকে। এবার আবার তারা ফিরেছে।
ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক সামির কাদের চৌধুরী আজ প্লেয়ার্স ড্রাফট শেষে তৃপ্তি নিয়েই বলেছেন, ‘আশা করি আমাদের দলটা চট্টগ্রামবাসীর পছন্দ হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি একটা ভালো ভারসাম্যপূর্ণ দল দাঁড় করাতে।’
মাঝে টুর্নামেন্টে না থাকলেও বিপিএলে আবার ফিরতে পেরে বেশ রোমাঞ্চিত সামির কাদের, ‘আমরা ১০ বছর পর অংশ নিচ্ছি। এই ১০ বছরেও আমরা চেষ্টা করেছি খেলতে। যেকোনো কারণেই হোক দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা সম্ভব হয়নি। এবার খুব আগ্রহ নিয়ে ফেরত এসেছি। আশা করি সবার আশা পূরণ করতে পারব।’
ড্রাফটের বাইরে চিটাগং সরাসরি চুক্তি করেছে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে। সাকিবকে দলে নেওয়া প্রসঙ্গে চিটাগং কিংসের মালিকের ব্যাখ্যা, ‘আমরা যখন শুনেছি উনি বাংলাদেশে খেলার অনুমতি পাচ্ছেন, এরপর রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি তাদের সঙ্গে কী অবস্থা। তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে আমরা সাকিবের সঙ্গে চুক্তি করেছি।’ ড্রাফট থেকে খেলোয়াড় নেওয়াতেও সাকিবের পরামর্শ ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
চিটাগং কিংস এবার কোচের দায়িত্ব দিয়েছে তাদের সাবেক অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার শন টেইটকে। ড্রাফটে উপস্থিত থাকা টেইট রোমাঞ্চিত নিজের দলে কোচ হয়ে ফিরতে পেরে, ‘অনেক বছর আগে আমি চিটাগং কিংসের হয়ে খেলেছি। এবার কোচ হিসেবে এসে ভালো লাগছে। খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে এটা আমার তৃতীয় বিপিএল হবে। আশা করি ভালো একটা টুর্নামেন্ট হবে।’
খুলনাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন মিরাজের
গত বিপিএলে প্রথমবারের মতো ফরচুন বরিশাল খেলে বিপিএল শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার আবার ফিরেছেন খুলনার হয়ে তাদের প্রথম বিপিএলে খেলা জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার। খুলনা সেবার রানার্সআপ হলেও খুলনা টাইগার্সকে নিয়ে এবার মিরাজের আশা—এবার তাদেরও শিরোপার স্বাদ পাইয়ে দেবেন তিনি।
ড্রাফট থেকে নেওয়া খেলোয়াড়দের নিয়ে তৃপ্ত মিরাজ বলেছেন, ‘আমরা দল নিয়ে অনেক সন্তুষ্ট। আফিফ, নাসুমসহ ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে। আমরা চেয়েছি স্থানীয় ক্রিকেটার যেন ভালো থাকে। সেদিক দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল হয়েছে। আশা করি ভালো খেলে চ্যাম্পিয়ন হব।’
খুলনার মালিক ইকবাল আল মাহমুদও বলেছেন প্রায় একই কথা, ‘দল নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করে এখানে এসেছি প্রথম ছয়টা কল সেভাবেই নিতে পেরেছি।’ খুলনা এখন দেখবে কোথায় তাদের ঘাটতি। সেটা মাথায় রেখেই বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি করবে তারা। ‘এটা কথা দিতে পারি এ বছর আমাদের দলটা ভালো হবে, লড়াই করার মতো দল হবে’—বলেছেন ইকবাল আল মাহমুদ।
থাকতেই এসেছে ঢাকা ক্যাপিটালস
মালিক শাকিব খানের কারণেই বিপিএলের নতুন দল ঢাকা ক্যাপিটালস নিয়ে সবার কিছুটা বাড়তি আগ্রহ কাজ করছে। ড্রাফটের খেলোয়াড়দের নিয়ে কেমন দল গড়ল ঢাকা, এমন প্রশ্নে প্রশ্নকর্তাকে মজা করে পাল্টা প্রশ্নই করেছেন নায়ক শাকিব খান, ‘আপনার কী মনে হয়েছে? নাম্বার ওয়ান হয়েছে তো? ব্যস!’
প্রথমবার বিপিএলের আবহে আসা ঢাকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এই সুপারস্টার গোছানো প্লেয়ার্স ড্রাফট আয়োজনের জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁর আশা এবারের নতুন বিপিএল টুর্নামেন্টটাকে পৌঁছে দেবে নতুন উচ্চতায়। মাঠের লড়াইও হবে আনন্দের।
ঢাকা ক্যাপিটালস নতুন দল হলেও তাদের প্রতিষ্ঠান রিমার্ক হারলান সব সময়ই বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাশে আছে বলে জানিয়েছেন শাকিব। বলেছেন, ক্রিকেটকে ভালোবেসে বিপিএলে তাঁরা থাকতেই এসেছেন, ‘আমরা ক্রিকেটকে ভালোবাসি। আমরা সব সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থান চেয়েছি। বাংলাদেশের সিনেমা যেমন আমাদের, বাংলাদেশের ক্রিকেটও আমাদের।’
খুশি দুর্বার রাজশাহীও
ড্রাফট শেষের সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না বিপিএলের আরেক নতুন দল দুর্বার রাজশাহীর কেউ। তবে পরে মুঠোফোনে দল নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের মালিকানাধীন দলটির ম্যানেজার ও জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার মেহরাব হোসেন, ‘আমরা যাদের যাদের ডাকতে চেয়েছি, দুজন ক্রিকেটার ছাড়া মোটামুটি তাদের সবাইকেই নিতে পেরেছি।’ ঘাটতি যেটুকু আছে, সেটাও বিদেশি ক্রিকেটারদের দিয়ে মিটিয়ে ফেলা যাবে বলে তাঁর বিশ্বাস।