দৌড়াও! কোহলি দৌড়াও!

দৌড়ে রান নেওয়াতেও কোহলি সবার ওপরেএএফপি

‘রান! ফরেস্ট রান!’ অস্কারজয়ী সিনেমা ‘ফরেস্ট গাম্প’–এর বিখ্যাত সংলাপ। সমবয়সী কিংবা বয়সে একটু বড়দের কাছে ফরেস্ট মাস্তানির শিকার হলে তাঁকে এ কথাটি বলত জেনি। ফরেস্টের শৈশবের বন্ধু পরবর্তী সময় ফরেস্ট যাঁকে খুব ভালোও বেসেছে। ক্রিকেটে কোহলির ওপর মাস্তানি করার মতো বোলার কোথায়! আনুশকা শর্মাকে তাই গ্যালারি থেকে জেনির মতো বলতে হয় না, রান! কোহলি রান!

আরও পড়ুন

তবে কখনোই যে বলতে হয়নি, সেটিও বলা যাচ্ছে না। রানআউটের শঙ্কা থাকলে আনুশকা নিশ্চয়ই মনে মনে এমন কোনো কথাই জপ করেন। কোহলিও তাঁকে খুব একটা হতাশ করেননি। ৬১৬ ইনিংসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৫২৭ ডিসমিসালের মধ্যে রানআউট হয়েছেন মাত্র ২২ বার। ৩৬ বছর বয়সী কোহলির ফিটনেস আগাগোড়াই খুব ভালো। শরীরটা এখনো একহারা, ছুটতে পারার দম অসামান্য। কাল দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সেমিফাইনালের কথাই ধরুন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতকে ৬ উইকেটে জেতানোর পথে নিজে খেলেন ম্যাচ জেতানো ৯৮ বলে ৮৪ রানের ইনিংস। তার মধ্যে বাউন্ডারি থেকে এসেছে মাত্র ২০ রান—৫টি চার। বাকিটা সিঙ্গেলস ও ডাবলসে। ৫৬টি সিঙ্গেলস ও ডাবলস ৪টি। কোহলির ফিটনেস এখনো কত ভালো এবং দৌড়ে রান নেওয়ার প্রতি এ বয়সেও তাঁর কতটা ব্যগ্রতা, তা এই পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার। তবে দৌড়াতে দৌড়াতে কোহলি কোথায় পৌঁছে গেছেন, তা নিজেও হয়তো টের পাননি।

৩৬ বছর বয়সেও অসামান্য ফিটনেস কোহলির
এএফপি

ফরেস্ট গাম্প সিনেমায় ফরেস্ট দৌড়াতে দৌড়াতে নিজের রাজ্য আলাবামা পেছনে ফেলেছিলেন। দুই বছর ধরে দৌড়ানোর পথে বিখ্যাত হতে হতে হঠাৎ একদিন দৌড় থামিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখেন, তাঁর পেছনে প্রচুর অনুসারী! কোহলিও সম্ভবত ক্যারিয়ার শেষে হয়তো দেখতে পারেন, তাঁর দৌড়ে রান নেওয়ার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে উঠেছেন অনেক খুদে ক্রিকেটার। কেন? অন্তত ওয়ানডেতে দৌড়ে রান নেওয়ায় কোহলির সমকক্ষ যে কেউ নেই এবং সেই প্রমাণ দিচ্ছে পরিসংখ্যান।

আরও পড়ুন

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ চলাকালীন গতকাল টিভিতে পরিসংখ্যানটি দেখানো হয়। ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ সময় পর্যন্ত সিঙ্গেল (১ রান) নেওয়ায় কোহলিই সবারও ওপরে। ২০০০ সালের আগে সব ম্যাচের বল বাই বলের হিসাব নেই।

কোহলি তাঁর ১৭ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩০১ ম্যাচে ২৮৯ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে এখন পর্যন্ত ৫,৮৬৮টি সিঙ্গেল নিয়েছেন। আর মাত্র দুজন ক্রিকেটার তাঁর সঙ্গে ‘ফাইভ থাউজেন্ডস সিঙ্গেল’–এর ক্লাবে আছেন—কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কালকের ইনিংসে মাত্র ৫টি চার মারেন কোহলি
এএফপি

শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি সাঙ্গাকারার ওয়ানডে অভিষেক ২০০০ সালের ৫ জুলাই। আর সিঙ্গেল নেওয়ার এই হিসাব রাখা শুরু হয়েছে ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। অর্থাৎ সাঙ্গাকারার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সব ম্যাচই হিসাবে নেওয়া হয়েছে—৪০৪ ম্যাচে ৩৮০ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫,৬৮৮টি সিঙ্গেল নিয়েছেন সাঙ্গাকারা।

জয়াবর্ধনের ওয়ানডে অভিষেক ১৯৯৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৪৮ ম্যাচে ব্যাট করেছেন ৪১৮ ইনিংসে। কিন্তু ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অবসর নেওয়ার আগপর্যন্ত ৪০৯ ম্যাচে ৩৮১ ইনিংসে ব্যাট করে ৫,০৪৬টি সিঙ্গেল নিয়েছেন জয়াবর্ধনে।

এই তালিকার শীর্ষ পাঁচে বাকি দুজন ভারতের কিংবদন্তি মহেন্দ্র সিং ধোনি ও দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি জ্যাক ক্যালিস।

সাবেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ধোনির ওয়ানডে অভিষেক ২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর। ৩৫০ ওয়ানডেতে ২৯৭ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ সর্বোচ্চ ৪,৪৭৪টি সিঙ্গেল নিয়েছেন ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক।

সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে স্বীকৃত ক্যালিসের ওয়ানডে অভিষেক ১৯৯৬ সালের ৯ জানুয়ারি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩২৮ ম্যাচে ৩১৪ ইনিংসে ব্যাট করেছেন। ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অবসর নেওয়ার আগপর্যন্ত ২৫১ ওয়ানডেতে ২৩৯ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪,০৫৭টি সিঙ্গেল নিয়েছেন ক্যালিস।