‘মাথা গরম’ হয়ে যাওয়ার পর ‘মাথা ঠান্ডা’ রাখতে বলছেন শোয়েব
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মাঠে যতটা উত্তাপ ছড়িয়েছে, তার চেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাতে অংশ নিয়েছেন শোয়েব আখতারও। ম্যাচের আগেই টুইটারে (বর্তমান এক্স) বিতর্ক ছড়িয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার। যেখানে খেলোয়াড়ি জীবনের একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘আগামীকাল (আজ) ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে।’ সে পোস্টে শোয়েব আসলে কী বুঝিয়েছিলেন, সেটি স্পষ্ট না হলেও ভারতীয়রা তাঁকে বিশ্বকাপে দুই দলের ইতিহাস মনে করিয়ে দিতে সময় নেননি। এরপর তো পোস্টটি সরিয়েই নেন শোয়েব।
পোস্ট মুছলেও ভারত-পাকিস্তানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শোয়েব ছিলেন সরব। পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের শুরুতে শোয়েব উচ্ছ্বসিত থাকলেও ম্যাচ যতই সামনে এগিয়েছে, তাঁর হতাশা বেড়েছে। তবে রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের দুর্দান্ত জয়ের পর শোয়েব বলেছেন, ভারত এখন বিশ্বকাপ শিরোপার দাবিদার, তারা হয়তো ২০১১ সালের স্মৃতি আরেকবার ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে।
পাকিস্তানের ব্যাটিং শুরুর পর এক ভিডিও বার্তায় রোহিতের টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সমালোচনা করেন শোয়েব। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, রোহিত কেন টসে জিতে ফিল্ডিং করছে। পাকিস্তান দারুণ শুরু করেছে। ৩ চার মেরে ১৬ রানও করে ফেলেছে। এমন সোজা উইকেটে টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিং করানো আমার মনে হয় না বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে। আমার মনে হয়, তারা পাকিস্তানকে একটা সুযোগ দিয়েছে। দেখা যাক কী হয়। আমার মতে, এটা ভুল সিদ্ধান্ত।’
কিন্তু রোহিত নন, ভুল প্রমাণিত হয়েছেন শোয়েব নিজে। ৬ উইকেট যাওয়ার পর আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেন সাবেক এই ফাস্ট বোলার। যেখানে তিনি বলেন, ‘কী সুন্দর উইকেট ছিল। কী দারুণ প্ল্যাটফর্ম পেয়েছিল সবাই। আবদুল্লাহ শফিক, ইমাম-উল-হক ও বাবর আজম সবাই দারুণ শুরু পেয়েছিল। কিন্তু সে সুযোগ পাকিস্তান কাজে লাগাতে পারেনি। পাকিস্তানের লম্বা সংগ্রহ করার সামর্থ্য ছিল না। খুব ভালো উইকেটে পাকিস্তান ম্যাচ হারতে যাচ্ছে, এটা খুবই হতাশার।’
পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে আগ্রাসন না থাকার কথা মনে করিয়ে দিয়ে আরেকটি পোস্টে শোয়েব লেখেন, ‘সোয়া লাখ মানুষকে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য আগুনের দরকার হয়। এটা তখনই সম্ভব হয়, যখন আপনার ভেতরে সে আগুনটা থাকে।’ অন্য এক টুইটে লিখেছেন, ‘মাথা এই মুহূর্তে অনেক গরম। কিন্তু আমার নিজেকে বলতে হবে, মাথা ঠান্ডা রাখ।’
এরপর রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির ব্যাটিংয়ের সামনে অসহায় শাহিন আফ্রিদি-হাসান আলীদের দেখে শোয়েব লিখেছেন, ‘আমি নিশ্চিত রোহিত-কোহলি নেটে ব্যাটিং করার সময়ও এর চেয়ে বেশি চাপে থাকে।’ আর ম্যাচ শেষে শোয়েব হতাশা প্রকাশ করেন এভাবে, ‘আপনারা ম্যাচ দেখেছেন। হতাশাজনক পারফরম্যান্স। আমাদের অধিনায়ক ফিফটি করেছে আর ওদের অধিনায়ক ক্লাস এবং বড় হৃদয়টা দেখিয়েছে। সে রীতিমতো পাকিস্তানের মন ভেঙে দিয়েছে। পাকিস্তানকে দেখিয়েছে যে সে কোন মাপের খেলোয়াড়।’
ভারতকে বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার উল্লেখ করে শোয়েব আরও বলেছেন, ‘ভারতের ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং—সবকিছু দেখা ছিল দারুণ আনন্দের। ভারত খুব সহজেই ম্যাচটা জিতেছে। আর ভারত এখন নিজেদের বিশ্বকাপ জয়ের দাবিদার ভাবতেই পারে। হয়তো ২০১১ বিশ্বকাপের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে।’
বিশ্বকাপে টানা দুই জয়ের পর এই প্রথম ম্যাচ হারল পাকিস্তান। তাই এখনই হতাশ না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন শোয়েব, ‘পাকিস্তান ম্যাচটা হেরেছে, তবে আশা হারানো উচিত হবে না। কারণ, টুর্নামেন্ট এখনো বাকি আছে। পাকিস্তানের সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ আছে। আপনাদের মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।’