সিরাজের শাস্তি চাইলেন অস্ট্রেলিয়ার ‘দুই ক্লার্ক’
রিকি পন্টিংয়ের মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়া দলের পরিচিত মুখ ছিলেন মাইকেল ক্লার্ক ও স্টুয়ার্ট ক্লার্ক। দুই ক্লার্ক অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একসঙ্গে খেলেছেন ৬৬ ম্যাচ। ২০০৭-০৮ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জয়ের সুখস্মৃতিও আছে দুজনের।
১৬ বছর পর যখন আরেকটি বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি চলছে, দুই ক্লার্ক আবারও আলোচনায়। আইসিসির কাছে ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজের শাস্তি দাবি করেছেন মাইকেল ক্লার্ক ও স্টুয়ার্ট ক্লার্ক। সিরাজকে এখনো জরিমানা না করায় তাঁরা কিছুটা বিস্মিতও।
অনেকে হয়তো ভাবছেন, অ্যাডিলেডে গোলাপি বলের টেস্টে ট্রাভিস হেডকে বোল্ড করার পর সিরাজ তাঁকে ড্রেসিং রুমের দিকে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত করায় চটেছেন দুই ক্লার্ক।
কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। তাঁরা সিরাজের শাস্তি চেয়েছেন এলবিডব্লিউর আবেদন করার সময় আম্পায়ারের দিকে না তাকিয়ে উদ্যাপন শুরু করে দেওয়ার কারণে। সিরিজের অন্যতম সম্প্রচারকারী চ্যানেল ‘সেভেন নেটওয়ার্ক’ সিরাজের এ ধরনের আচরণের নাম দিয়েছে ‘সেলিব্রাপিলস’। অর্থাৎ উদ্যাপন করতে করতে আবেদন।
ইদানীং ব্যাটসম্যানের প্যাডে বল লাগলেই একই সঙ্গে উদ্যাপন ও আবেদন করতে করতে দৌড়াতে থাকেন সিরাজ। আম্পায়ারের দিকে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন মনে করেন না। তাঁর ‘ভাবখানা’ দেখে মনে হয়, ব্যাটসম্যান নিশ্চিত আউট হয়েছেন। চলমান বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির প্রথম দুই টেস্টেই এমন করেছেন ৩০ বছর বয়সী ভারতীয় পেসার।
পার্থে ট্রাভিস হেডের বিপক্ষে সিরাজ এভাবে আবেদন জানালে আম্পায়ার সাড়া দেননি। এরপর তাঁরই চাওয়ায় ভারত রিভিউ নিলে দেখা যায়, মাঠের আম্পায়ার সঠিক ছিলেন। অ্যাডিলেডে মারনাস লাবুশেনের বেলাতেও একই কাণ্ড করেন সিরাজ। এবারও আম্পায়ার ব্যাটসম্যানকে নট আউট দেন। তবে এ দফায় ভারত রিভিউ নেয়নি। রিভিউ নিলে তা নষ্ট হতো। কারণ, টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লাবুশেনের ব্যাটের কিনারা ছুঁয়ে প্যাডে লেগেছে।
আম্পায়ারের দিকে না তাকিয়েই সিরাজের এমন আবেদনের বিষয়টি সবার আগে সামনে আনেন ‘সেভেন নেটওয়ার্ক’-এরই সাংবাদিক ও ধারাভাষ্যকার অ্যালিস্টার নিকোলসন। ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় নিকোলসন বলেন, ‘আবেদন করার সময় সিরাজ আম্পায়ারকে ন্যূনতম সম্মানটুকুও দেখাচ্ছে না।’
সেই সময় রিকি পন্টিং বলেন, ‘এটা (সিরাজের আচরণ) আম্পায়ারদের সত্যিই হতাশ করতে পারে। তুমি আম্পায়ারের কাছে আউটের আবেদন জানাচ্ছ, অথচ তাঁর দিকে ফিরে তাকাচ্ছ না।’
সিরাজের এমন অসম্মানজনক আচরণের কারণে তাঁর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মাইকেল ক্লার্ক। স্কাই স্পোর্টসের ‘বিগ স্পোর্টস ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক বলেছেন, ‘আম্পায়ারের দিকে না তাকিয়েই এভাবে এলবিডব্লুর আবেদন করতে থাকায় সিরাজকে জরিমানা করা উচিত। সে ব্যাটসম্যানের প্যাডে বল লাগিয়েই দৌড়াতে থাকে, যেন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেছে। আইসিসি এখনো তাকে জরিমানা না করায় আমি বিস্মিত। আমার মনে আছে, যখন আমি খেলতাম, তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটলে জরিমানা করা হতো।’
সাবেক সতীর্থ ও অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ব্রেট লির উদাহরণ টেনে মাইকেল ক্লার্ক বলেছেন, ‘এতে সবচেয়ে খারাপ ছিল ব্রেট লি। তাকে বলাও হয়েছিল যে, “তুমি যদি আম্পায়ারের দিকে ফিরে না তাকিয়ে আবেদন করো, তাহলে তোমাকে জরিমানা করা হতে পারে।” আমি তার (ব্রেট লি) ও ট্রাভিস হেডের চেয়ে সিরাজের ব্যাপারটি নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। সিরাজ প্রথম টেস্টেও এমন করেছে। তুমি যেকোনো কিছুতে আবেদন জানাতেই পারো। কিন্তু তোমাকে আম্পায়ারের দিকে ঘুরে তাকাতে হবে।’
মাইকেল ক্লার্কের সঙ্গে একমত স্টুয়ার্ট ক্লার্কও। ‘বিগ স্পোর্টস ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠানেই অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই পেসার বলেছেন, ‘ট্রাভিস হেডের সঙ্গে যা হয়েছে, এটা তার চেয়েও খারাপ। ব্যাপারটি সামনে আসার পর এ নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, তুমি এটা করতে পারো না। আম্পায়াররা এ ব্যাপারে স্বচ্ছ, নিয়মও তা-ই বলছে যে তোমাকে ঘুরে তাকাতে হবে এবং আম্পায়ারকে সম্মান জানাতে হবে। এটা মোটেও ভালো দৃশ্য ছিল না। সে দৌড়াতেই থাকে এবং আউটের দাবি করে। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ব্যাটসম্যানদের ব্যাটের কিনারা ছুঁয়ে প্যাডে লেগেছে।’
স্টুয়ার্ট ক্লার্ক আরও বলেছেন, ‘আমি যদি ম্যাচ রেফারি হতাম বা ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকতাম, তাহলে সিরাজকে ডেকে বলতাম, “তোমাকে এটা থামাতে হবে। কারণ, এটা দেখতে ভালো লাগে না। তুমি অনুপযুক্ত উপায়ে আম্পায়ারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছ।’
দুই ক্লার্কের চাওয়ায় সিরাজের জরিমানা হোক বা হোক, ট্রাভিস হেডকে বোল্ড করার পর তাঁকে ড্রেসিং রুমের দিকে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত করায় আইসিসির কাছ থেকে শিগগিরই দুঃসংবাদ শুনতে পারেন সিরাজ। ‘সেভেন নেটওয়ার্ক’ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আউট হওয়ার পর সিরাজকে কিছু একটা বলায় শাস্তি হতে পারে হেডেরও।