তামিমকে আপাতত কেপিজেতেই থাকার পরামর্শ

হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তামিম ইকবাল এখন হাসপাতালে ভর্তিশামসুল হক

তামিম ইকবাল এখন ভালো আছেন। তাঁকে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও কমেছে। হাঁটছেন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করাতে নেওয়া হয়েছিল কেবিনেও। তবে আগামী কয়েক দিন তামিমকে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে।

গতকাল বিকেএসপিতে মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। পরে তাঁর হার্টে ব্লক ধরা পড়ে, পরানো হয় রিংও। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলার অবস্থা না থাকায় চিকিৎসা চলছে বিকেএসপির কাছেই গাজীপুরের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালে।

আজ দুপুরে তামিমকে দেখতে আসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর ও হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী। এরপর তামিমের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘আজকে সকালে তাঁর ইকো কার্ডিওগ্রাফ করে হার্টের ফাংশন দেখা হচ্ছিল। দেখে মনে হয়, কোনো সমস্যাই নেই, তরতাজা। মনে রাখতে হবে এটা কিন্তু একটা ছদ্মবেশ। আবারও এবনরমাল বিট হতে পারে। ঝুঁকিটা কিন্তু কম। এক শতাংশেরও কম। কিন্তু যদি হয়ে যায়, তাহলে ওই রোগীর জন্য তো শতভাগ ঝুঁকি। তামিম তো তামিম। আমাদের জাতীয় সম্পদ। ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা তাঁর (কেপিজে হাসপাতালে) একটু থাকা উচিত। তারপর তিনি মুভ করতে পারবে।’

তামিম ইকবালের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে ব্রিফিং করছেন চিকিৎসকেরা
প্রথম আলো

ঝুঁকির শঙ্কা এখন অবশ্য অনেকটাই কমে গেছে বলে জানান আবদুল ওয়াদুদ। তবে তামিমের পরবর্তী চিকিৎসা কী হবে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাঁদের পরামর্শ তামিম যেন সাভারের কেপিজে হাসপাতালেই থেকে যান।

এ নিয়ে আবদুল ওয়াদুদ বলেছেন, ‘ক্ষীণ শঙ্কা আছে সে জন্য আমরা তাঁকে বলেছি, ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত একটা জটিল সময়, যেন আর কোনো সমস্যা না হয়। কথাবার্তা একটু কম বলা উচিত। একটু বিশ্রামে থাকা উচিত। কোনো রকম উত্তেজিত হওয়া উচিত নয়। শুরুর সময়টা এখানে একটু থেকে স্টেবল হয়ে তারপর তাঁর পুনর্বাসনের জন্য ভালো কোনো জায়গায় যেতে চায়, যেতে পারবে।’

আরও পড়ুন

তামিমের পরিবারও তাঁর পরবর্তী চিকিৎসার ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানা গেছে। তাঁর এক চিকিৎসক আত্মীয়ের সঙ্গে এ নিয়ে পরামর্শ করা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর জানিয়েছেন, তামিমকে নিয়ে শঙ্কা অনেকটা কেটে গেলেও এখনো জটিলতা কাটেনি।

হাসপাতালে তামিম ইকবালের পরিবারের সদস্যরা
প্রথম আলো

মো. আবু জাফর বলেছেন, ‘তামিম ইকবালের সার্বিক অবস্থা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু যে প্রাথমিক পিসিআই হয়েছে, এটা একটা ফরেইন বডি। এখানে কখনো কখনো অ্যাকশন-রিঅ্যাকশন হতে পারে। যে রিংটা লাগানো হয়েছে, সেটা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমরা থম্ব্রোসিস বলি। যদিও শঙ্কা খুবই কম। তবে সেই ঝুঁকিটা রয়েছে। আশঙ্কা রয়েছে। সেই ব্যাপারে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।’

আরও পড়ুন
৪৮ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত হলো ঝুঁকিপূর্ণ। আর তার (তামিম) স্বাভাবিক কার্যক্রম অর্থাৎ খেলাধুলায় ফিরতে ৩ মাস সময় দিতে হবে। এ ছাড়া উনি বাসায় স্বাভাবিক কাজকর্ম, হাঁটাচলা করবেন। তবে বিশ্রামেই থাকতে হবে।
আবদুল ওয়াদুদ, হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক

তাদের এই পরামর্শ তামিমকেও জানানো হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক জাফর, ‘এই মুহূর্তে মুভ করাটা তাঁর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই জিনিসটা তামিম ইকবালের সঙ্গেও আলাপ করেছি। এটাই স্বাভাবিক যে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা যেখানে আছে, সবাই সেখানেই যেতে চাইবে। তবে তার জন্য যাওয়াটা কতটা নিরাপদ, সেটা আলাপ করেছি। যদিও এটা তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে আমাদের চিকিৎসকদের নির্দেশনাকে সম্মানস্বরূপ মেনে না চললে যে আশঙ্কাটা থাকে, সেটা সম্পর্কে আমরা তো আসলে ভবিষ্যৎ বলতে পারব না।’

তামিম ইকবালের সুস্থ হওয়ার প্রতীক্ষায় পুরো দেশ
প্রথম আলো

পরিবারের সর্বশেষ বক্তব্য কী, জানতে চাইলে হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের কিছু বিষয় থাকে। সেগুলো সবার কাছে বলা সমীচীন নয়। এ ছাড়া সাধারণভাবে যেসব পরামর্শ আমরা দিয়েছি, সেগুলো জানালাম। আজকে সময় যাচ্ছে। ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত হলো ঝুঁকিপূর্ণ। আর তাঁর (তামিম) স্বাভাবিক কার্যক্রম অর্থাৎ খেলাধুলায় ফিরতে ৩ মাস সময় দিতে হবে। এ ছাড়া উনি বাসায় স্বাভাবিক কাজকর্ম, হাঁটাচলা করবেন। তবে বিশ্রামেই থাকতে হবে।’

আরও পড়ুন