পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা যেভাবে অসম্মান করেন দেশি কোচদের
মিকি আর্থার ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ‘অনলাইন কোচ’ হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের। তিনি একসঙ্গে কাউন্টি দল ডার্বিশায়ারের দায়িত্ব সামলে পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের ‘পরিচালক’ হিসেবে সময় দেবেন অনলাইনে।
সশরীর পাকিস্তানে যাওয়ার আগে ভিডিও কল বা অন্য যেকোনোভাবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বাবর আজমদের ভুলত্রুটি ঠিক করে দেবেন। কোনো ম্যাচের কৌশল বাতলে দেবেন। এমন অদ্ভুত নিয়মে জাতীয় দলের কোচিং বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে ক্রিকেট দুনিয়ায়। খোদ পাকিস্তানেই সাবেক ক্রিকেটাররা তীব্র সমালোচনা করেছেন এমন পদ্ধতির।
শহীদ আফ্রিদি থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের ‘বিদেশি কোচ প্রীতি’র তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, যেখানে পাকিস্তানেই অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত, জাতীয় দলের কোচ হিসেবে যাঁদের অভিজ্ঞতাও আছে, তাঁদের কেন বিবেচনা করা হবে না, এ নিয়ে ক্ষোভও জানিয়েছেন তাঁরা। তবে পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার সিকান্দার বখত জানিয়েছেন, পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা বিদেশি কোচদের যতটা সমীহ করেন, ভয় পান, দেশি কোচদের ঠিক ততটাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন।
সত্তরের দশকের শেষ থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন সিকান্দার বখত। ছিলেন ডানহাতি ফাস্ট মিডিয়াম বোলার। ২৬টি টেস্ট ও ২৭টি ওয়ানডে খেলেছেন। উইকেট নিয়েছেন যথাক্রমে ৬৭ ও ৩৩টি। তিনি একসময় পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সঙ্গে কাজ করেছেন সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি দেশি কোচদের প্রতি পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আচরণের বর্ণনা দিয়েছেন।
জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিকান্দার বখত নিজের একটা তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাই বলেছেন, ‘আমি যখন পাকিস্তান দলের সঙ্গে কাজ করেছি, তখন আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একদিন আমি এক খেলোয়াড়কে ব্রিফ করছিলাম, সে হঠাৎ করেই বলে, “আপনি নিজে ২৬টা টেস্ট খেলেছেন, আমি খেলেছি ৪০ টেস্ট, আপনি আমাকে শেখাতে এসেছেন?” এই হচ্ছে খেলোয়াড়দের মনোভাব। অথচ এই খেলোয়াড়েরাই বিদেশি কোচের সঙ্গে অন্য রকম। তাদের সমীহ করে চলে, তাদের ভয় পায়। মিকি আর্থারের কথাই ধরুন, সে নিজে একটাও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি, অথচ, তাকেই তারা ভয় পাবে। কারণ সে বিদেশি।’
কিছুদিন আগে পাকিস্তানের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম বলেছিলেন, পাকিস্তান ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়াটা কেবল কঠিনই নয়, ভীতিকরও। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান ক্রিকেট দলে কোচরা শুধু সমালোচনার শিকারই হন না, তাঁরা অসম্মানিতও হয়ে থাকেন প্রতিনিয়ত।
ইতিহাস বলে, পাকিস্তানের কোনো সাবেক তারকা ক্রিকেটারই জাতীয় দলের কোচ বা অন্য কোনো ভূমিকায় পাশের দেশ ভারতের রবি শাস্ত্রী কিংবা রাহুল দ্রাবিড়দের মতো দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করতে পারেননি। সিকান্দার বখত মনে করেন, জাতীয় দলের কোচ হিসেবে যে সাধারণ সম্মানটুকু পাওয়ার দরকার, সেটি খেলোয়াড়দের থেকেও পান না কোনো কোচ।
পাকিস্তানি কোচরা কেন জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে ভয় পান, বখত একটা উদাহরণও দিয়েছেন, ‘অতীতে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়াকার ইউনিস, সাকলায়েন মুশতাক, মোহাম্মদ ইউসুফ, মিসবাহ-উল-হকরা কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁরাও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেননি। আমি একজনের উদাহরণ দিতে পারি, যিনি আমাকে বলেছিলেন, প্রতিদিন তিনি নাকি প্রার্থনা করেন, যেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সঙ্গে কোনো কাজ তাঁকে না করতে হয়। এই কাজটা কঠিন আর প্রতিদিন আপনাকে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে কাজ করে যেতে হবে।’