সেলুনে চুল কাটিয়ে ক্যারির টাকা না দেওয়ার খবর মিথ্যা, দাবি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার
অ্যাশেজে লর্ডস টেস্টে দারুণ বিচক্ষণতায় জনি বেয়ারস্টোকে স্টাম্পিং করার পর ইংলিশদের কাছে যেন ‘জাতীয় ভিলেনে’ পরিণত হয়েছেন অ্যালেক্স ক্যারি। ওই ঘটনার পর ক্যারির খুঁত বের করতে উঠেপড়ে লেগেছে ব্রিটিশ মিডিয়া। তবে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের মাঠের কোনো ঘটনাকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনি। শেষে কিনা মাঠের বাইরের এক ঘটনা সামনে এনে ক্যারিকে বেকায়দায় ফেলার পন্থা অবলম্বন করেছে তারা।
ট্যাবলয়েড পত্রিকা ‘দ্য সান’ কাল এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে লিখেছে, হেডিংলিতে তৃতীয় টেস্ট শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন খেলোয়াড় নাকি লিডসের একটি সেলুনে চুল কাটিয়েছেন। কিন্তু নাপিতকে টাকা না দিয়েই ক্যারি চলে এসেছেন। ওই নাপিতের নাম অ্যাডাম মাহমুদ। তিনি নাকি ক্যারিকে টাকা পরিশোধের জন্য সোমবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
পরশু হেডিংলি টেস্টের প্রথম দিন বিবিসি টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় সেলুনে ক্যারির টাকা না দেওয়ার ঘটনাকে সত্যি দাবি করেন স্যার অ্যালিস্টার কুকও। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক জানান, নাপিত মাহমুদ তাঁর পরিচিত। ঘটনাটিও সত্য। ক্যারি হয়তো এতক্ষণে টাকা দিয়েও থাকতে পারেন।
তবে কুকের কথা ও ‘দ্য সানের’ খবরকে মিথ্যা দাবি করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। নিউজ কর্পের একটি প্রতিবেদনে ক্যারির টাকা দেওয়ার ঘটনাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করে স্রেফ ‘আবর্জনাময় গুজব’ উল্লেখ করেছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
সিএ জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া দলের কয়েকজন সদস্যের সেলুনে যাওয়ার ঘটনা সত্যি। তবে তাঁদের সবাই টাকা পরিশোধ করেছেন। প্রমাণস্বরূপ লেনদেনের রসিদও নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন। সিএ এটাও দাবি করেছে, যাঁরা সেলুনে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ক্যারি নেই। গত মাসে লন্ডনের ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল থেকে এখন পর্যন্ত ক্যারি চুল কাটাননি কিংবা কোনো সেলুনে যাননি।
সতীর্থকে নিয়ে ওঠা গুজবে ‘দ্য সানের’ ওপর ক্ষুব্ধ স্টিভেন স্মিথও। অস্ট্রেলিয়ার সহ–অধিনায়ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, লন্ডনে আসার পর অ্যালেক্স ক্যারি চুল কাটায়নি। দ্য সান, তোমরা সঠিক তথ্য দাও।’
‘দ্য সান’ তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, অ্যাডাম মাহমুদ লিডসের ডক বার্নেট’স নামের একটি সেলুনে কাজ করেন। তৃতীয় টেস্ট শুরুর আগে সেখানে চুল কাটাতে গিয়েছিলেন ক্যারি। কিন্তু ৩০ পাউন্ড (৪ হাজার ১৫০ টাকা) পরিশোধ না করেই চলে এসেছেন।
এ ব্যাপারে মাহমুদ সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘দোকান বন্ধ করার ঠিক আগমুহূর্তে অ্যালেক্স (ক্যারি) এসেছিলেন। আমি তাঁর চুল কেটেছি, হাসি-ঠাট্টায় মজেছি। যাওয়ার আগে তিনি আমাকে বলেছিলেন, তাঁর হাতে টাকা নেই। আর আমরা কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করি না। পাশেই টেসকো ব্যাংকের ক্যাশ মেশিন (এটিএম বুথ) ছিল। তিনি চাইলে সেখান থেকে টাকা তুলে দিতে পারতেন। হোটেলে গিয়েও নিয়ে আসতে পারতেন। কারণ, আমার সেলুন থেকে হোটেলে যেতে পাঁচ মিনিটের বেশি লাগে না। তবে তিনি যাওয়ার আগে বলে গেছেন, টাকা পাঠিয়ে দেবেন। সম্ভবত তিনি ভুলে গেছেন। আমি তাঁকে সোমবার পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এখনো অপেক্ষায় আছি।’
দ্য সানের দাবি, হেডিংলিতে তৃতীয় টেস্ট শুরুর আগে সতীর্থ মারনাস লাবুশেন, ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজাকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদের সেলুনে গিয়েছিলেন ক্যারি। চুল কাটানোর পর লাবুশেন, ওয়ার্নার ও খাজা টাকা পরিশোধ করেছেন ও বেশ কয়েকটি ছবি তুলেছেন। কিন্তু ক্যারি ছবি তুলতে রাজি হননি। পরে টাকা না দিয়েই চলে গেছেন।
এর আগে অ্যালিস্টার কুক বিবিসি টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় জানান, লিডসের ডক বার্নেট’স সেলুনে তিনি একবার চুল কাটিয়েছিলেন। এরপরই নাপিত মাহমুদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন তুলে ধরেন, ‘ক্রিকেট সম্পর্কে ওর (নাপিতের) ভালো ধারণা নেই। শুধু অস্ট্রেলিয়ানদের সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল, ওরা কেমন? সে বলল, সেলুনে আসা অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে একজনের নাম সম্ভবত অ্যালেক্স। “আমি বললাম, অ্যালেক্স ক্যারি, উইকেটকিপার?” সে বলল, “হ্যাঁ। তিনি টাকা না দিয়েই চলে গেছেন।” ওই সেলুনে শুধু নগদ লেনদেন হয়। ক্যারি ওকে বলেছিল, সে টাকা পাঠিয়ে দেবে। এটা সত্যি ঘটনা। আমি বানিয়ে বলছি না। তবে ক্যারি এতক্ষণে হয়তো পরিশোধ করে থাকতে পারে।’