চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: পাকিস্তানে না যেতে বোর্ডগুলোকে লোভনীয় অফার ভারতের
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় দলগুলো সাম্প্রতিক বছরে পূর্ণশক্তির স্কোয়াড নিয়ে পাকিস্তানে নির্বিঘ্নে খেলেছে। অথচ নিরাপত্তাশঙ্কাকে কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়ে ১৬ বছর ধরে পাকিস্তান সফর করে না ভারত।
নিজেরা তো যাবেই না, অন্য দলগুলোও যেন পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে অনীহা দেখায়, সে জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) টুর্নামেন্টে অংশ নিতে চলা বাকি ৬ দেশের বোর্ডকে নাকি গোপনে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। সূত্রের বরাত দিয়ে এমনটাই দাবি করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘ক্রিকেট পাকিস্তান’।
পাকিস্তান ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক হওয়ায় বেশ কিছু দিন ধরে নানা টালবাহনা করছে ভারত। নরেন্দ্র মোদির সরকার কদিন আগে জানিয়েও দিয়েছে, তারা রোহিত–কোহলি–বুমরাদের পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পাঠাবে না। এর পরিবর্তে বিসিসিআই পাকিস্তানের বাইরে অথবা ২০২৩ এশিয়া কাপের মতো ‘হাইব্রিড’ মডেলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এবার কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয়। তাদের ইচ্ছা, যে করেই হোক চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিজেদের দেশে আয়োজন করার। যেহেতু ভারত ছাড়া বাকি সব দল পাকিস্তানে খেলতে রাজি, তাই ভারতের পরিবর্তে শ্রীলঙ্কাকে সুযোগ দিয়ে পাকিস্তানেই আসর বসতে পারে।
এদিকে সূচি ঘোষণার সময়সীমাও ঘনিয়ে এসেছে। আগামীকালের মধ্যেই আইসিসিকে সূচি চূড়ান্ত করতে হবে। সময়মতো সূচি ঘোষণা না করলে তা সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি লঙ্ঘনের মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে, যা আইসিসি–বিসিসিআই উভয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
অবস্থা বেগতিক দেখে এবার ভিন্ন পথ অবলম্বন করছে ভারত। ক্রিকেট পাকিস্তান তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, পাকিস্তানে খেলতে যেতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে বিসিসিআই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা প্রকাশ্যে বলছে। কিন্তু ‘তলেতলে’ তারা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হাইব্রিড মডেলে অথবা ভারতে স্থানান্তরিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এ জন্য তারা অন্য ক্রিকেট বোর্ডগুলোর সমর্থন পাওয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
আইসিসির রাজস্ব থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পায় বিসিসিআই, তা সবার জানা। বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড যদি বিসিসিআইয়ের এই প্রস্তাবে রাজি হয়, তাহলে আইসিসির রাজস্ব থেকে ভারত যে অর্থের ভাগ পায়, সেখান থেকেও বড় অংশ পাবে দলগুলো।
বিসিসিআই অন্যান্য ক্রিকেট বোর্ডকে একটি হাইব্রিড মডেল বা টুর্নামেন্টটি ভারতে স্থানান্তরিত করতে সমর্থন করার জন্য রাজি করাতে কাজ করছে। এর বাইরে আর্থিক প্রণোদনা, লাভের অংশ এমনকি ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ভারতের বিপক্ষে আরও বেশি ম্যাচ খেলার প্রতিশ্রুতিও নাকি দিয়ে চলেছে বিসিসিআই।
ক্রিকেট–বিশ্লেষকেরা এরই মধ্যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে বিসিসিআইয়ের অবস্থানের কিছু অসংগতি তুলে ধরেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ২০২১ সালে রমিজ রাজা পিসিবির চেয়ারম্যান থাকাকালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজনের জন্য পাকিস্তানের বিডকে সমর্থন জানিয়েছিল ভারত। কয়েক মাস আগেও তারা কোনো ধরনের আপত্তি জানায়নি। হঠাৎ পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজনের বিরোধিতা শুরু করায় বিশ্লেষকেরা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য দেখছেন।
এদিকে উপযুক্ত সমাধান খুঁজতে অংশগ্রহণকারী দেশের বোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে আইসিসি। বিশ্ব ক্রিকেটের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা অবশ্য জোর দিয়ে বলেছে, তারা শুধু বিসিসিআইয়ের কথায় প্রভাবিত হবে না। অংশগ্রহণকারী সব দল ও বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।