নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে অবিশ্বাস্য হারের পর স্যামি—এটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের আসল চিত্র
ড্যারেন স্যামির মুখে হাসি। কথা বলার সময়ও সেই হাসিটা থাকছিল অনেক সময়। তবে যে কথাগুলো বললেন, তাতে স্পষ্ট—মুখের হাসির আড়ালে ঝড় বয়ে যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচের মনে। জিম্বাবুয়েতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নেদারল্যান্ডসের কাছে সুপার ওভারে অবিশ্বাস্য হারের পর ভারতে যাওয়ার সমীকরণটা শুধু কঠিনই নয়, বলতে গেলে অসম্ভব করে তুলেছে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এই ম্যাচের পরই সংবাদ সম্মেলন। যাতে অনেক কথাই হলো, যার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকল একটা কথাই—এই ম্যাচই আসলে ফুটিয়ে তুলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের বর্তমান চিত্র।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটি জিততে পারেনি ৩৭৪ রান করার পরও। এর আগে কখনোই এত রান করে জিততে ব্যর্থ হয়নি তারা। জিম্বাবুয়ের পর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও পয়েন্ট হারানোয় সুপার সিক্সে উঠলেও ফাইনালে যাওয়ার পথটা এখন বেশ জটিল। জিম্বাবুয়ে-নেদারল্যান্ডসও সুপার সিক্সে ওঠায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সেখানে শুরু করতে হচ্ছে শূন্য হাতে। ২০১৯ বিশ্বকাপে যেতে বাছাইপর্বে ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়েছিল তারা, এবার প্রয়োজন আরও বেশি কিছুর।
তবে আপাতত নেদারল্যান্ডস ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিতে বলছেন কয়েক দিন আগে দলটির দায়িত্ব নেওয়া স্যামি, ‘ম্যাচের মাঝপথে ৩৭৫ (৩৭৪) রান স্কোরবোর্ডে, ব্যাটসম্যানরা দারুণ করেছে বলে মনে হয়েছে। তবে আমরা দল হিসেবে কোথায়, সেটি বোঝা যাচ্ছে। কৌশলগত দিক দিয়ে আমরা বাজে ছিলাম, পরিকল্পনায় স্থির থাকতে পারিনি। আমরা ভেবেছি, ৩৭৪ রান আছে, আমাদেরই জেতা উচিত। তবে ক্রিকেট খেলা এভাবে হয় না। এটি আমাদের জন্য শিক্ষা যে আপনি জিতবেনই, কখনোই এটা ধরে নিতে পারেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে স্যামির জ্যাকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের লোগোর ওপর জ্বলজ্বল করছে দুটি তারা। বিশ্বকাপের ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুটি শিরোপার প্রতীক। এবারের বাছাইপর্বের আর কোনো দলের আর কারও এমন সাফল্য নেই। বিশ্বকাপজয়ী আর একটা দলই আছে, তবে শ্রীলঙ্কা জিতেছে একবার। প্রথম দুটি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন, তৃতীয় বিশ্বকাপের রানার্সআপ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কিনা এখন বিশ্বকাপে খেলাই ঘোর সংশয়াচ্ছন্ন।
কেন এই অবস্থা, সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘আপনি যদি ম্যাচের দিকে তাকান, ৩৭৫ (৩৭৪) রান করেছি। এরপর ক্যাচ মিস করেছি, ম্যাচ শেষ পর্যন্ত গেছে। তখন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে আপনি ভাবতেই পারেন, এটা কী হচ্ছে! যেমন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যখন খেলেছি, বিশেষ করে ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে অমন প্রদর্শনীর পর আসলে জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল না। আজ (গতকাল) অবশ্যই নেদারল্যান্ডসকে কৃতিত্ব দিতে হবে।’
সামনে এগোতে হলে বড় পরিবর্তন আনতে হবে বলেই মনে করেন স্যামি, ‘আমরাই নিজেদের এখানে এনেছি। নিজেদেরই দোষ। দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আমরা বেশ ভালো অবস্থানে ছিলাম, ম্যাচ এরপর হাত থেকে ফেলে দিয়েছি। আবারও বলছি, এটি আসলে আমাদের এখনকার অবস্থাটা ফুটিয়ে তোলে। সামনে এগোতে গেলে অনেক কিছুই বদলাতে হবে।’
২০১৬ সালের পর থেকে সীমিত ওভারের বৈশ্বিক ট্রফিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
৩৭৪ রান করার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে রানিং বিটুইন দ্য উইকেট নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। প্রথম পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিঙ্গেল নিয়েছে মাত্র তিনটি। সেটিতে তেমন কোনো সমস্যা না দেখলেও স্যামি আলাদা করে বলেছেন ফিল্ডিংয়ের কথা, ‘অনেক বছর ধরেই লোকে বলে, আমরা বাউন্ডারি মারা দল। তবে আমাদের সবখানেই উন্নতি করতে হবে। ক্ষুধার্ত থাকতে হবে মাঠে থাকলে। এখন পর্যন্ত আমি বলব, টুর্নামেন্টে আমরা সবচেয়ে বাজে ফিল্ডিং দল। আমি ছেলেদেরও বলেছি, এভাবে চলতে পারে না, ক্রিকেট মাঠে ফিল্ডিংয়ের এমন প্রদর্শনী। আন্তর্জাতিক দল বলতে পারি না নিজেদের। যেগুলো পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের এমনি এমনিই করার কথা, সেগুলোই হচ্ছে না। আবারও বলছি, এটি আসলে আমাদের চিত্রটা ফুটিয়ে তোলে। সামনে এগোতে হলে কী করতে হবে, সেটি বোঝায়।’
স্যামি নিজেই বলছেন, তিনি বেশ ইতিবাচক চিন্তার মানুষ। তবে হতাশাটা লুকাতে পারেননি তিনিও, ‘আমি আসলে চেষ্টা করি, প্রতিদিনের থেকে ইতিবাচক কী নিতে পারি। অবশ্যই ড্রেসিংরুমে যারা আছে, তাদের মতো আমিও হতাশ। আমি খুবই ইতিবাচক চিন্তার একজন মানুষ। এই দলের সঙ্গে কী পথ পাড়ি দিতে হবে, সেটা আমি বুঝি। মাঝেমধ্যে এমন হয়, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আপনাকে একেবারে তলানিতে নেমে যেতে হয়। সামনে কী চ্যালেঞ্জ আছে, আমি তা বুঝি। এটিও বুঝি, আপনি রাতারাতি সব বদলাতে পারবেন না। আমাদের ক্রিকেট এ মুহূর্তে কোথায়, এটি আসলে তারই প্রতিফলন। আমাদের অনেক কাজ বাকি।’
২০১৬ সালে ড্যারেন স্যামির নেতৃত্বেই দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর পর থেকে যেন ছুটেছে উল্টো পথেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিপ্লব আনা দলটির অবস্থা সেই সংস্করণেও সুবিধার নয়। সবশেষ বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে। তবে এবার বাছাইপর্বে যা হচ্ছে, তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সম্ভবত তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের তলানিতেই পৌঁছে গেছে।