পন্তের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা: ‘ভেবেছিলাম, দুনিয়াতে আমার সময় শেষ’
৩০ ডিসেম্বর, ২০২২। সেদিন গাড়ি দুর্ঘটনায় জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন ঋষভ পন্ত। দুর্ঘটনার পর তাঁর মাথায় প্রথম যে ভাবনাটা এসেছিল, ‘দুনিয়াতে আমার সময় শেষ।’
ভারতের এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান অবশ্য ‘দ্বিতীয় জীবন পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান’ মনে করেন। দুর্ঘটনাটি পন্তকে জীবন নিয়ে একটি শিক্ষাও দিয়েছে—সব সময় নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখতে হয়। ২২ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া আইপিএলের নতুন মৌসুম দিয়ে মাঠে ফেরার অপেক্ষায় এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
স্টার স্পোর্টসের সঙ্গে ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন পন্ত। সব সময় নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখার যে শিক্ষাটা পন্ত পেয়েছেন, তার ওপর ভিত্তি করেই অনুষ্ঠানটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিলিভ: টু ডেথ অ্যান্ড ব্যাক।’ আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবে। ২৬ বছর বয়সী ক্রিকেটার সেখানে অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন। দুর্ঘটনা তো আছেই, মানসিক অবস্থা, ২০২৩ অ্যাশেজ দেখার আনন্দ এবং আর কখনো গাড়ি চালাবেন কি না—এসব বিষয়ে মন খুলে কথা বলেছেন পন্ত।
ভারতের হয়ে ৩৩ টেস্ট, ৩০ ওয়ানডে ও ৬৬টি–টোয়েন্টি খেলা পন্তের এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে গত বছর ২৪ আগষ্ট বেঙ্গালুরুতে। তার ৮ মাস আগে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি থেকে গাড়ি চালিয়ে রুর্কি যাচ্ছিলেন পন্ত। সড়কে ডিভাইডারের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয় তাঁর গাড়ির। তা নিয়ে পন্ত বলেছেন, ‘জীবনে প্রথমবারের মতো সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম দুনিয়াতে আমার সময় শেষ।’
দুর্ঘটনায় শরীরে বড় আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। তবে আরও বড় কিছু না হওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবানও মনে করেন পন্ত, ‘জীবনে প্রথমবারের মতো ওই রকম (মৃত্যু) কিছু মনে হয়েছিল। সেই দুর্ঘটনার সময় শরীরে কতটা আঘাত পেয়েছি, সেটা জানতাম। তবে আরও খারাপ হতে পারত, সেটি না হওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।’
দুর্ঘটনার পর দেরাদুনের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় পন্তকে। সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে তাঁকে মুম্বাই নিয়ে গিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করে তাঁর ডান হাঁটুর তিনটি লিগামেন্ট পুনঃ স্থাপন করা হয়।
এরপর বেঙ্গালুরুতে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে পুনর্বাসন সারেন পন্ত। সেরে ওঠার প্রক্রিয়া নিয়েও কথা বলেছেন পন্ত, ‘দুনিয়ার অন্য বিষয় থেকে নজর সরিয়ে আমি সেরে ওঠায় মনোযোগী ছিলাম। বড় কোনো আঘাতে এমন মানসিকতা সেরে ওঠায় সাহায্য করে। সে জন্য প্রতিদিনই আপনাকে একই কাজ করতে হয়, যেটা বিরক্তিকর ও হতাশার। কিন্তু সেরে উঠতে হলে করতেই হবে।’
পন্ত দ্রুত সেরে ওঠায় আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। চিকিৎসক তাঁকে বলেছিলেন, পুরোপুরি সেরে উঠতে ১৬ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে। পন্ত তখন চিকিৎসককে বলেছিলেন, যে সময়ই বেঁধে দেওয়া হোক না কেন, আরও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি ভাবতে চাই না। চিকিৎসকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম সেরে উঠতে কত দিন লাগবে? তাকে বুঝিয়ে বলেছিলাম, সবাই এ নিয়ে নানা কথা বলছে। আপনি আমাকে সঠিক তথ্য দিন। তখন চিকিৎসক বলেছিলেন, ১৬ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে। আমি তাঁকে বলি, আপনি যে সময়ই বেঁধে দেন না কেন, আমি সেখান থেকে ছয় মাস সময় কমিয়ে ফেলব।’
দুর্ঘটনার পর পন্তের এসইউভি গাড়িতে আগুন ধরার আগে তাঁকে বের করেছিলেন রজত কুমার ও নিশু কুমার নামে দুই ব্যক্তি। গত জানুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে পন্ত বলেছিলেন, তিনি তাদের কাছে ‘চিরকালের জন্য কৃতজ্ঞ ও ঋণী।’ দুর্ঘটনার পর পন্ত বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর ডান হাঁটু ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে স্থানচ্যুত হয়েছে এবং মুখ থুবড়ে পড়ে ছিলেন গাড়িতে, ‘আশপাশে কাউকে বলেছিলাম, আমার হাঁটুটা জায়গামতো বসাতে পারবে কি না। তারা হাঁটুকে সঠিক জায়গায় বসিয়ে দেন।’
সে সময় ব্যথায় কাতর ছিলেন পন্ত। পরে বুঝতে পেরেছিলেন, সৌভাগ্যবশত জীবনটা বেঁচেছে এবং পা–ও হারাতে হয়নি, ‘কোনো স্নায়ু বিকল হলে অঙ্গহানির সম্ভাবনাও থাকে। এটা ভাবার পরই ভয় পেয়েছিলাম।’ পন্ত বরাবরই মজার মানুষ এবং কৌতুকপ্রিয়। দুর্ঘটনার পর গাড়ির আকৃতি পাল্টে যাওয়া নিয়ে মজাও করেছেন, ‘আমি এসইউভি নিয়ে বের হয়েছিলাম। পরে দেখি সেটা সেডান হয়ে গেছে।’