মুহূর্তটা শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিলে কিংবা ম্যাচের ফলে প্রভাব ফেললে হয়তো আরও আলোচনা হতো। কিন্তু তেমন কিছু না হওয়ায় জল বেশি দূর গড়ায়নি। তারপরও ক্রিকেটপ্রেমীদের কৌতূহল তো আছেই।
কোন মুহূর্তের কথা বলা হচ্ছে, শিরোনাম পড়েই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। ঘটনাটা গতকাল রাতে কলকাতা নাইট রাইডার্স–রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মধ্যে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচের।
নিজেদের মাঠ ইডেন গার্ডেনে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল কলকাতা। ইনিংসের তখন অষ্টম ওভার চলছে। কলকাতার ওপেনার সুনীল নারাইন ১৬ বলে ১৮ রানে ব্যাট করছিলেন। বেঙ্গালুরুর পেসার রাসিখ সালাম চতুর্থ বলটা করেছিলেন শট লেংথের এবং অফ স্টাম্পের খানিকটা বাইরে। নারাইন তা খেলার চেষ্টা করেননি। বল চলে যায় উইকেটকিপার জিতেশ শর্মার গ্লাভসে। উচ্চতার কারণে বলটি নারাইনের নাগালের বাইরে দিয়ে চলে গেছে মনে হওয়ায় লেগ আম্পায়ার সেটিকে ওয়াইড দেন।
ঠিক সেই সময় নারাইনের ব্যাট স্টাম্পে লেগে একটি বেল পড়ে যায়। স্টাম্প ও বেলের জিং লাইটও জ্বলে ওঠে। বেঙ্গালুরুর বেশির ভাগ ফিল্ডারের তা দৃষ্টিগোচর হয়নি। কিন্তু টিম ডেভিড ও বিরাট কোহলি ব্যাপারটি টের পেয়ে হিট আউটের জন্য মৃদু আবেদন করেন। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া দেননি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তখনই প্রশ্ন ওঠে—ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে আঘাত করে বেল ফেলার পরও নারাইনকে কেন হিট আউট দেওয়া হলো না? এই প্রশ্নের উত্তর আছে ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) ৩৫.১.১.২ থেকে ৩৫.১.১.৪ ধারায়।
আইনের এই ধারাগুলোতে বলা হয়েছে, একজন ব্যাটসম্যান তখনই হিট আউট হবেন, যখন তিনি প্রথম রান নেওয়ার জন্য দৌড় শুরু করতে গিয়ে উইকেট ভাঙবেন অথবা বল ছেড়ে দেওয়ার পর তৎক্ষণাৎ উইকেট ভাঙবেন অথবা বলকে স্টাম্পে লাগা থেকে বাঁচাতে গিয়ে উইকেট ভাঙবেন।
কিন্তু নারাইন ওপরে উল্লিখিত তিনটি ধারার কোনোটিই ভঙ্গ করেননি। আর বল ততক্ষণে উইকেটকিপারের হাতে চলে যাওয়ায় ডেড হয়ে গিয়েছিল (ওই বল আর খেলার মধ্যে ছিল না)। এ কারণেই তাঁকে হিট আউট দেওয়া হয়নি।
নারাইন পরে আউট হন রাসিখ সালামের বলেই ২৬ বলে ৪৪ রান করে। মানে, ওই ঘটনার পর ১০ বলে আরও ২৬ রান করেন তিনি। কিন্তু তাঁর ইনিংসটা কলকাতার কাজে আসেনি। ১৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ফিল সল্ট, বিরাট কোহলি, রজত পতিদার ও লিয়াম লিভিংস্টোনের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে বেঙ্গালুরু ম্যাচটা জিতে নিয়েছে ৭ উইকেট আর ২২ বল হাতে রেখে।
২০২১ সালে প্রায় একই রকম ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডান টেলর। তবে হারারেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই ম্যাচে মাঠের আম্পায়াররা টেলরকে আউট দিয়েছিলেন।
ওই ঘটনায় ক্ষেত্রে এমসিসির আইন অনুযায়ী যে ব্যাখা দেওয়া হয়েছিল, তা এ রকম—বলটি ডেড হয়েছে কি না, সেই সিদ্ধান্ত একান্তই আম্পায়ারের। বলটি তখনই ডেড বিবেচিত হবে, যখন বোলার ও আম্পায়ারের কাছে স্পষ্ট হবে যে ফিল্ডিং দল এবং উইকেটে থাকা উভয় ব্যাটসম্যান বলটিকে খেলার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা বাদ দিয়েছে অথবা পরের বল খেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।