দিনের শুরুটাই হলো দুঃসংবাদ দিয়ে। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ে দেশে ফিরে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা। গতকাল বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শেষ হওয়ার আগেই আরেক দুঃসংবাদ। একই চোটে পড়ে আজকের শেষ ওয়ানডে থেকে ছিটকে গেছেন বাংলাদেশের পেসার তানজিম হাসান।
চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেই হয়েছে শিশিরবিঘ্নিত। পরে বোলিং-ফিল্ডিং করা দলের বল হাতে রাখতেই সমস্যা হচ্ছিল। আজ সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচটা দিনের বেলায় বলে এদিক দিয়ে দুই দলই একটু স্বস্তিতে।
এর আগে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং কোচ থিলিনা কান্দাম্বি কথাটা বলেছিলেন, কাল বললেন তাদের সহকারী কোচ নাভিদ নেওয়াজও, ‘একটা ব্যাপার আমি নিশ্চিত, শিশিরের সমস্যা আর থাকবে না। দুই দলের জন্য একই কন্ডিশন থাকবে।’ অনুশীলনের পর গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা মেহেদী হাসান মিরাজেরও একই আশা, ‘দিনের ম্যাচে অবশ্যই একটা বাড়তি সুবিধা থাকবে। রাতের খেলা অনেকটাই টসের ওপর নির্ভর করে। টসে জিতলে সুবিধা থাকে।’
তবে গত দুই দিন দিনের বেলায় চট্টগ্রামে যে রকম গরম পড়ছে, সেটা একটা সমস্যা হলেও হতে পারে। আর তা হলে রোজার মধ্যে বাংলাদেশ দলই হয়তো বেশি ভুগবে। তবে ‘ফাইনালের’ আগে চোটের ধাক্কা দুই দলের স্বস্তিতেই কিছুটা চিড় ধরিয়েছে।
বিশেষ করে তানজিমকে হারানোটা বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতিই। প্রথম ওয়ানডেতে তাঁর ৩ উইকেটই ম্যাচে বাংলাদেশকে ফিরিয়েছিল। চট্টগ্রামের উইকেটে স্পিনারদের জন্য বিশেষ কিছু নেই বলে এখানে বোলিংয়ে পেস আক্রমণই মূল ভরসা। শরীফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও তানজিম তাঁদের কাজটা ভালোভাবে করছিলেনও। এর মধ্যেই এল তানজিমকে হারানোর ধাক্কা।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই তাঁর ডান পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়েছিল। নিজের নবম ওভারের দ্বিতীয় বল করেই চোটে পড়ে উঠে যান মাঠ থেকে। আর বোলিং না করলেও পরে ফিল্ডিংয়ে ফিরে নিয়েছিলেন দুর্দান্ত একটা ক্যাচ। এরপর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তানজিম বল করেছেন পুরো ১০ ওভারই, ৬৫ রানে নেন ১ উইকেট।
কিন্তু কাল অনুশীলনে এসেও তানজিম আর পারলেন না। দুপুরের পর বিসিবির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘ডান হ্যামস্ট্রিংয়ে ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভব করছেন তানজিম। আজ (গতকাল) অনুশীলনেও তিনি ভালো বোধ করেননি। কালকের (আজ) ম্যাচের জন্য তিনি ফিট নন।’
তানজিমের বিকল্প হিসেবে কালই দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরেক পেসার হাসান মাহমুদ। দলে তানজিম ছাড়াও পেসার আছেন তাসকিন, শরীফুল ও মোস্তাফিজুর রহমান। তারপরও হাসানের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনের ব্যাখ্যা, ‘দলের সঙ্গে আরও তিন পেসার থাকলেও ঝুঁকিমুক্ত থাকতে আমরা হাসান মাহমুদকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এর আগে প্রথম দুই ম্যাচে কোনো রান না করা লিটন দাসকে বাদ দেওয়া হয়েছে তৃতীয় ওয়ানডের দল থেকে। তাঁর জায়গায় এসেছেন জাকের আলী।
হাসান মাহমুদ বা জাকের আলী, কারোরই অবশ্য আজ খেলার তেমন সম্ভাবনা নেই। লিটনের পরিবর্তে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে পারেন তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান। অবশ্য স্কোয়াডে আছেন আরেক ওপেনার এনামুল হকও। আর পেস বোলিংয়ে তানজিমের জায়গা নিতে পারেন মোস্তাফিজুর রহমান।
শেষ ওয়ানডের দলে যদি আর কোনো পরিবর্তন হয়, সেটা হতে পারে স্পিন বোলিংয়ে। তাইজুল ইসলামের জায়গা নিয়ে দলে আসতে পারেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। চট্টগ্রামের উইকেটে প্রথম দুই ম্যাচে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি বাঁহাতি তাইজুল। দুই ম্যাচে ১৩ ওভার বোলিং করেছেন, ৯৭ রান দিয়ে পেয়েছেন মাত্র ১ উইকেট। আর মোস্তাফিজের ফর্ম বিবেচনা করে টিম ম্যানেজমেন্ট যদি দুই পেসার নিয়ে খেলার কথা ভাবে, তাহলে হয়তো মিরাজ ও রিশাদের সঙ্গে একাদশে থেকে যাবেন তাইজুল।
তাইজুল ও রিশাদের মধ্যে একজন খেললে রিশাদের সম্ভাবনা বেশি তাঁর ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে। সিলেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩০ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলে এসেছেন। সুযোগ পেলে দলের প্রয়োজনে চট্টগ্রামের উইকেটেও তাঁর কাছ থেকে সে রকম কিছুর আশা। সংবাদ সম্মেলনে মিরাজও বলছিলেন, ‘অনেক দিন ধরেই একজন লেগ স্পিন অলরাউন্ডার খুঁজছিল বাংলাদেশ দল। রিশাদের ক্যারিয়ার মাত্র শুরু। আমার মনে হয়, এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে তার। যত বেশি ম্যাচ খেলবে, ততই অভিজ্ঞ হবে। যত্ন নিতে পারলে রিশাদ বাংলাদেশকে ভালো কিছুই দেবে।’
লিটনের বাজে ফর্ম আর তানজিমের চোটের কারণে কিছু অদলবদলের দিকে যেতে হলেও সেটা বাংলাদেশ দল নিশ্চিন্তেই করতে পারছে। কারণ, বেঞ্চে এখন নির্ভরযোগ্য মুখের অভাব নেই। রিশাদও হতে পারেন সে রকমই এক নতুন আশা।