৪৬ বছরের বিবাদ টিভিতে পুনরুজ্জীবিত করলেন বোথাম–চ্যাপেল
ক্রিকেটের ধ্রুপদি শত্রুতার কথা উঠলে দুই ইয়ানের বিবাদের প্রসঙ্গ আসবেই। অ্যাশেজ নিয়ে ৪৬ বছর ধরে তাঁদের কথার লড়াই চলছে। ওহ, এই দুই ইয়ানের পরিচয়ই তো দেওয়া হয়নি। দুজনই কিংবদন্তি—ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম ও অস্ট্রেলিয়ার ইয়ান চ্যাপেল। অস্ট্রেলিয়ার টিভি চ্যানেল নাইনে প্রচারিত তথ্যচিত্রে আবারও বাগ্যুদ্ধে মেতেছেন দুই কিংবদন্তি।
এবারের অ্যাশেজ নিয়ে কেভিন পিটারসেন কিছুদিন আগে দাবি করেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রতি একটু বেশিই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখাচ্ছে ইংল্যান্ড দল। তবে এসবই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা কথা। অ্যাশেজে যদি ব্যক্তিগত বিবাদের প্রসঙ্গ তোলা হয়, তাহলে বোথাম–চ্যাপেল দ্বৈরথকে পেছনে ফেলার কোনো সুযোগই নেই। অ্যাশেজে তাঁদের বিবাদটাই দীর্ঘতম, যা ফিরে এসেছে চ্যানেল নাইনের তথ্যচিত্রে।
চ্যাপেল ও বোথামের মধ্যে সম্পর্কটা শত্রুতায় পরিণত হয় ১৯৭৭ সালে মেলবোর্নে পানশালায় একটি ঘটনার জেরে। ৭৯ বছর বয়সী চ্যাপেল তখন অভিযোগ করেছিলেন, বোথাম তাঁকে বিয়ারের গ্লাস দিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন। এখন ৬৭ বছর বয়সী বোথাম সেই অভিযোগ অস্বীকার করছেন। সে সময় বোথাম ছিলেন ২১ বছর বয়সী তরুণ আর ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর দোরগড়ায়। কিংবদন্তি এই অলরাউন্ডার তখন অস্ট্রেলিয়ায় ক্লাব ক্রিকেট খেলছিলেন। আর চ্যাপেল? অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি এই অধিনায়ক আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখছিলেন।
চ্যানেল নাইনের ‘দ্য লংগেস্ট ফিউড’ নামের এই তথ্যচিত্রের ক্ষুদ্র একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বোথাম ও চ্যাপেল সামনাসামনি বসে আছেন। দুজনের পা একদম হাতছোঁয়া দূরত্বে। তবে দুজন একই কক্ষে বসেছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হাজার হোক ৪৬ বছরের বিবাদ; তা ভুলে দুজন একই কক্ষে বসে খোশগল্প করবেন, সেটি এত অল্পেই ভেবে নেওয়া বাড়াবাড়িও হতে পারে!
না, এই তথ্যচিত্রে খোশগল্প তাঁরা করেননি। দুজনের বাক্য বিনিময় শুনলে মনে হবে, পুরোনো সেই বিবাদের একটা হেস্তনেস্ত করতেই যেন দুজন মুখোমুখি হয়েছিলেন।
বোথামকে তাক করে চ্যাপেল বলেন, ‘ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কাজ করেছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বাজে—এই কথার বাইরে আমি যেসব ভালো কথা বলতে পারি তা হলো, কাপুরুষ ও মেরুদণ্ডহীন।’ কথাটা শুনেই বোথাম পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কাপুরুষ? কেন আমাকে কাপুরুষ বলা হচ্ছে?’ বরাবরই সোজা কথাটা সোজা করে বলতে সিদ্ধহস্ত চ্যাপেল উত্তরে তুলে আনেন ১৯৭৭ সালে পানশালার সেই ঘটনা, ‘তুমি একটা খালি বিয়ারের গ্লাস দিয়ে কাউকে হুমকি দিয়েছিলে; এটা কাপুরুষোচিত আচরণ।’
বোথাম এবার একটু দম নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে যেন কামান দাগলেন, ‘এভাবে বলতে থাকলে আমি তোমাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই কী করতে পারি! কাপুরুষ? আমি আর যা–ই হই, কাপুরুষ নই।’ এরপর বোথামকে বলা হয়েছিল ইয়ান চ্যাপেলকে তিন শব্দে বর্ণনা করতে। তিন শব্দে বোথাম বলেন, ‘বিষাদগ্রস্ত এবং নিঃসঙ্গ।’ এভাবে কথার লড়াই চলতে চলতে বোথাম ইংলিশ ক্রিকেটের মান নিয়েও সমালোচনামূলক কথা বলেছেন। এরপর বলেছেন, তিনি চ্যাপেলকে বাগ্যুদ্ধে ‘সম্পূর্ণ পরাস্ত’ করেছেন। আর চ্যাপেলের দাবি, বোথাম তাঁকে উসকে দিয়েছেন। এরপর একটি গ্লাস বোথামের মুখে ধরে হুমকি দেন, এই কান থেকে ওই কান পর্যন্ত কেটে দেবেন!
চ্যাপেল কিন্তু এখানেই থামেননি। বোথাম একবার বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ান বিয়ার অতটা শক্তিশালী নয়, বেশ দুর্বল। চ্যাপেল সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন। বোথামও কম যাননি। ইটের জবাবে পাটকেল ছুড়ে বলেছেন, ‘আমি জানি তুমি কেন ইংল্যান্ডে যাচ্ছ না। কারণ, সেখানে ইংল্যান্ডের সব ফাস্ট বোলার তোমার ডিফেন্স উড়িয়ে দিতে চায়।’
তথ্যচিত্রে এভাবেই দুজনে বাগ্যুদ্ধ চালিয়েছেন। তবে উসকানিটা কে দিয়েছেন, আর ঘটনাটাই বা কী, সে বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। অ্যাশেজ নিয়ে যা হয় আরকি! বাগ্যুদ্ধ করতে কোনো কারণ লাগে না!
তবে বোথাম আর চ্যাপেল কিন্তু ১৯৭৭ সালের সেই ঘটনার পর একসঙ্গে ধারাভাষ্য দিয়েছেন। ১৯৯৮–৯৯ অ্যাশেজে চ্যানেল নাইনে ধারাভাষ্য দিয়েছেন দুজন। কিন্তু বিবাদটা মেটেনি। ২০১০–১১ অ্যাশেজেও দুজনের প্রায় হাতাহাতির গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। অ্যাডিলেড ওভালের কার পার্কে সেই ঘটনা নিয়ে চ্যাপেল শুধু বলেছিলেন, ‘কিছু বাক্য বিনিময় হয়েছে।’
২০০৭ সালে বোথাম যখন নাইটহুড পেলেন, তখনো তাঁকে ছেড়ে কথা বলেননি চ্যাপেল, ‘বোথামের জীবনে কুকীর্তির অভাব নেই। ড্রাগ নেওয়া থেকে শুরু করে গুন্ডামির গল্পও আছে। আর সে যদি এভাবে মিথ্যা বলা চালিয়ে যায়, তাহলে এমন আরও ঘটনা বেরিয়ে আসার সব রকম ঝুঁকিই আছে। তখন তাকে নাইটহুড দেওয়ার জন্য কাউকে না কাউকে অনুশোচনা করতে হবে।’
বোথামকে নিয়ে এরপর আর কোনো বিতর্ক শোনা যায়নি।