মিড অন দিয়ে ড্রাইভে বাউন্ডারি, ছন্দে থাকলে নাজমুল হােসেনের ব্যাটে এই শট দেখা যেতে পারে ইনিংসের শুরুতেই। আজও তাই হলো। ওপেনার জাকির হাসান বাংলাদেশ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আউট হলে ক্রিজে আসেন এই বাঁহাতি। নিজের ইনিংসের চতুর্থ বলেই নাজমুল পেয়ে যান ড্রাইভের জন্য আদর্শ এক বল। আফগানিস্তানের পেসার ইয়ামিন আহমেদজাইর ফুল লেংথের বল মিড অন দিয়ে পাঠিয়ে দেন বাউন্ডারিতে। পরের বলেও ওই শটেরই কার্বন কপি।
নাজমুল যে আজ বড় ইনিংস খেলবেন, সে বার্তাই যেন ছিল ওই দুটি শটে। ড্রাইভের সঙ্গে এরপর যোগ হয়েছে পুল, স্কয়ার কাট, লেট কাট। তাতে তাঁর রানটাও বেড়েছে তরতরিয়ে। যে গতিতে রান তুলেছেন, তার সঙ্গে যেকোনো ওয়ানডে ইনিংসের তুলনা করা যায়। ৫৮ বলে ১০টি চারে ফিফটি করা নাজমুল সেঞ্চুরি করেছেন ১১৮ বলে, ১৮ চারের ইনিংসের স্ট্রাইক রেট ৮৪.৭৫। টেস্টে এটি নাজমুলের তৃতীয় সেঞ্চুরি, ঘরের মাঠে প্রথম। এ প্রতিবেদন লেখার সময় নাজমুল ১০৯ রান নিয়ে খেলছিলেন।
নাজমুলকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আফগানদের সাদামাটা বোলিং। ইয়ামিন ও নিজাত মাসুদের পেস বোলিংয়ে ছিল না কোনো সুইং। খুব বেশি সিম মুভমেন্টও পেয়েছেন বলা যাবে না। তাঁদের কারও মিডিয়াম পেসই নাজমুলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না।
স্পিনারদের ধরা হয় আফগানদের মূল বোলিং শক্তি, নাজমুল তাঁদেরও খেলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। বাঁহাতি স্পিনার আমির হামজার জন্য মিরপুরের সবুজ উইকেটে কিছুই ছিল না। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার জহির খানের নিশানায় ছিল সমস্যা। ভালো জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বল করতে পারেননি। সেটার মাশুল দিয়েছেন ওভার প্রতি ৭-এর বেশি রান দিয়ে।
আফগানদের ফিল্ডিংটাও ঠিক দৃষ্টি সুখকর হচ্ছে না। তবু লাল বলের ক্রিকেটে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার কিছু চিরায়ত চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। সেটা সামলে নিতে দরকার মনঃসংযোগ। সেদিক থেকে নাজমুল লেটার মার্কই পাবেন। তিনি জানতেন, অপেক্ষা করলে বাজে বল আসবেই। শুধু শট নির্বাচনটা ঠিক থাকতে হবে। নাজমুল সেটি করেছেন ঠিকঠাকভাবেই। সেঞ্চুরি করতে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৮টি চার। তার মানে ১০০-এর মধ্যে ৭২ রানই বাউন্ডারি থেকে।
এর মধ্যে ৫৩ রান এসেছে অফ সাইড দিয়ে। বিশেষ করে, কাভার ও মিড অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছেন তিনি। এতে বোঝা যায় কতটা ফুল লেংথে বল করেছেন আফগান বোলাররা। প্রচুর শর্ট বলও পেয়েছেন নাজমুল। সুযোগ পেয়ে খেলেছেন পুল শট। স্কয়ার লেগ ও মিড উইকেট দিয়েই নিয়েছেন ৪২ রান।
উইকেটের চারপাশে নাজমুলের এই দাপুটে ব্যাটিং বাংলাদেশকে এমন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে, যেখান থেকে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখতেই পারেন লিটনরা। নাজমুলের ইনিংস কতটা দীর্ঘ হয়, এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।