বিপিএল: সিলেটে কি ‘কালচার’ বদলাবে ব্যাটিংয়ের
‘ওয়াচ ইট! ওয়াচ ইট!’ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ২ নম্বর মাঠ থেকে কিছুক্ষণ পরপর ভেসে আসছিল শব্দ দুটি। খুলনা টাইগার্সের ক্যারিবীয় ওপেনার এভিন লুইস ব্যাটিং করছিলেন। দলের কোচ তালহা জুবায়ের বারবার মাঠের আশপাশে থাকা সবাইকে সতর্ক করছিলেন, ‘সবাই বলের দিকে চোখ রাখো। না হলে কিন্তু…।’ এরপর যে ভঙ্গিটা করলেন, তার অর্থ বিপদ।
আসলে তা–ই। কদিন আগেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২২ বলে ৫৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলা এই ক্যারিবীয় কাল সিলেটের নেটেও যেন ছক্কা–বৃষ্টি নামালেন। দূর থেকে দৃশ্যটা দেখছিলেন টনি হেমিং। বিসিবির এই অস্ট্রেলীয় কিউরেটর কাজ করছিলেন বরিশালে। বিপিএলের জন্য তাঁকে ডেকে আনা হয়েছে সিলেটে। লুইসকে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে দেখে ভালো উইকেট তৈরির তৃপ্তিতে হেমিংকে বেশ পুলকিতই মনে হলো।
আজ শুরু বিপিএলের সিলেট পর্বের খেলাগুলো হবে মূল স্টেডিয়ামে, তবে সেখানেও রানবন্যার মঞ্চই প্রস্তুত করেছেন হেমিং। উইকেটে থাকবে ধারাবাহিক বাউন্স, থাকবে না ‘সাইডওয়েজ মুভমেন্ট’। এককথায় ব্যাটিং–স্বর্গ যাকে বলে, ঠিক তা–ই।
কিন্তু বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা সুষম বাউন্সের উইকেটে রান করতে পারবেন তো? এবারের ঘরোয়া মৌসুমে যা হচ্ছে, সে ধারা বজায় থাকলে উত্তরটা নেতিবাচকই হওয়ার কথা। গত অক্টোবরে জাতীয় ক্রিকেট লিগ দিয়ে শুরু হয় এবারের ঘরোয়া মৌসুম। ২৪ ম্যাচের জাতীয় লিগে মাত্র ৮টি ইনিংস রান ৪০০ ছাড়িয়েছে। অন্য চার দিনের ম্যাচের প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) ৬ ম্যাচে ৪০০ হয়েছে মাত্র ১ ইনিংসে।
বিপিএলের ঢাকা পর্বে উইকেট ভালো ছিল। কিন্তু রান–খরা থেকে বের হতে পারেননি স্থানীয় টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। ইনিংস শুরু হতে না হতেই ২-৩ উইকেট পড়ে গেছে নিয়মিত। অবশ্য একই রোগ বাসা বেঁধেছে জাতীয় দলেও। ইনিংসের শুরুতে নতুন বল সামলানোটা যেন জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের জন্যও বিরাট চ্যালেঞ্জ।
জাতীয় লিগ ও বিসিএলের অভিজ্ঞতা থেকে এক কোচ হতাশ হয়ে বলছিলেন, ‘আমাকে কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারছে না। আমি কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেছি, কেন আমরা ব্যাটিংয়ে নামলেই ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারাচ্ছি! এটা তো কালচার হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় দল থেকে শুরু করে একদম গোড়া পর্যন্ত একই কালচার। সকালে মাঠে আসতে না আসতেই খেলা শেষ!’ জাতীয় দলের কোচদেরও সমালোচনা করলেন তিনি, ‘এত বড় বড় কোচ, এত খরচ করে তাঁদের আনা হয়েছে, তাঁরা কী করছেন? তাঁদের কাজের মূল্যায়নটা কী হচ্ছে?’
জাতীয় লিগে আমাদের ৮টি প্রথম শ্রেণির দল, ১৬ জন ওপেনার। কিন্তু আপনাকে চারজন ওপেনারের নাম জিজ্ঞেস করলেও ঠিক করে বলতে পারবেন না। কারণ, তারা রান করে না।বাংলাদেশ দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার
বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশার অবশ্য আঙুল তুললেন খেলোয়াড়দের সামর্থ্যের দিকেই, ‘কোয়ালিটি, আর কোনো কারণ নেই। কোয়ালিটি ওপেনার আসছে না। এখন উইকেট ভালো, কন্ডিশন ভালো, অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা ভালো। সবকিছুই অনেক উন্নত। ভালো না করার কোনো কারণ নেই। জাতীয় লিগে আমাদের ৮টি প্রথম শ্রেণির দল, ১৬ জন ওপেনার। কিন্তু আপনাকে চারজন ওপেনারের নাম জিজ্ঞেস করলেও ঠিক করে বলতে পারবেন না। কেন? কারণ, তারা রান করে না। রান করলে নাম বলা যায়।’
প্রতিবার বিপিএলে উইকেটকেই বাজে ব্যাটিংয়ের কারণ হিসেবে দাঁড় করানো হয়। এবার ক্রিকেটারদের সে সুযোগও নেই। হাবিবুল বলছিলেন, ‘এখন কেউ বলতে পারবে না উইকেট ভালো নয়। মিরপুরে উইকেট একটু ভেজা ছিল হয়তো। কিন্তু এত খারাপ বলা যাবে না, যেমনটা আগে ছিল। একটা বলও টার্ন করছে না, নিচু হয়নি। ভালো বাউন্সও আছে।’ ব্যাটসম্যানরাও অবশ্য নিজেদের ব্যর্থতার দায় মাথা পেতে নিচ্ছেন। বাজে ব্যাটিংয়ের আত্মগ্লানি আছে তাঁদেরও।
বিপিএল এখন সিলেটে বলে ব্যাটসম্যানদের রানে ফেরার আশাটা বাড়ছে। সঙ্গে উইকেট নিয়ে টনি হেমিংয়ের তৃপ্তিও নিশ্চয়ই সাহস জোগাবে তাঁদের।