পরিচালক সংকটে যেভাবে চলছে বিসিবি
সভাপতিসহ বিসিবিতে পরিচালকসংখ্যা ২৫। খালেদ মাহমুদ ও নাঈমুর রহমান পদত্যাগ করায় ফারুক আহমেদের বর্তমান বোর্ডে সংখ্যাটা তিনিসহ ২৩। তবে তা কাগজে-কলমেই। বাস্তবে বিসিবির এই পরিচালনা পর্ষদে সক্রিয় পরিচালকের সংখ্যা হাতে গোনা ৪ থেকে ৫।
পরিচালনা পর্ষদের সভায় অবশ্য নিয়মিতই কোরাম পূরণ হচ্ছে। সভাগুলোতে যোগ দিচ্ছেন ৯-১০ জন করে পরিচালক। তবে তাঁদের মধ্যেও কেউ কেউ আবার শুধু বোর্ড সভাতেই যোগ দিচ্ছেন, অনেকটা কোরাম পূরণের অলংকার হিসেবে। কার্যত বর্তমান বোর্ডে তাঁদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। বাকি পরিচালকদের মধ্যে সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসানসহ ১০-১১ জন আছেন, যাঁরা ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দৃশ্যপটেই নেই।
পরিচালক সংকটের মধ্যেও চলছে বিসিবি এবং সেটা অনেকটা জোড়াতালি দিয়েই। অনেক কমিটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিতে হাতে গোনা সক্রিয় পরিচালকেরা অলিখিতভাবে দায়িত্ব নিয়ে একাধিক কমিটি তদারকির কাজ করছেন।গতকাল মিরপুরে বোর্ড কার্যালয়ে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভার পর সভাপতি ফারুক আহমেদ অবশ্য বলেছেন, ‘আমরা ডিরেক্টর যারা আছি, তারা কিন্তু ২টি, ৩টি, ৪টি করে বিভাগ দেখছি। কমিটি পুনর্গঠন করতে চেয়ারম্যান, মেম্বার সেক্রেটারি, মেম্বারও দরকার। ওই ধরনের লোকবল এখন নেই। তবে কমিটি না করলেও কাজ থেমে নেই। আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
২১ আগস্ট যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বিসিবির এক জরুরি সভায় বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ। এরপর গত দেড় মাসে পরিচালনা পর্ষদের সভা হয়েছে আরও তিনটি, যেগুলোতে দৃশ্যপটে না থাকা পরিচালকেরা অনুপস্থিত ছিলেন। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো পরিচালক বিনা নোটিশে পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে তাঁর পরিচালক পদ শূন্য হয়ে যাবে। সে অনুযায়ী বেশ কয়েকটি পরিচালক পদই এখন শূন্য বলে ধরে নেওয়া যায়।
তবে জানা গেছে, অনুপস্থিত পরিচালকদের কেউ কেউ ‘সিক লিভ’–এর চিঠি দিয়ে রেখেছেন বোর্ডে। যে কারণে চাইলেই তাঁদের পদ শূন্য ঘোষণা করা যাচ্ছে না। আবার এটাও ঠিক, এভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এর আইনি দিকগুলোও বিশ্লেষণ করে দেখছে বিসিবি। বিসিবি সভাপতি অবশ্য আভাস দিয়েছেন, অনুপস্থিত পরিচালকদের ব্যাপারে শিগগিরই তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, ‘একটা ইমার্জেন্সি মিটিংসহ চারটি মিটিং হয়েছে। এখন সময় এসেছে যারা নেই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।’
কোনো পরিচালকের পদ শূন্য হলে বিসিবিতে নতুন পরিচালক আনার একমাত্র পথ নির্বাচন। কিন্তু সরকার জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কমিটি ভেঙে দেওয়ায় সেই সুযোগও আপাতত নেই। কারণ, বিসিবি নির্বাচনে ভোটারদের একটা বড় অংশই থাকে জেলা ও বিভাগ থেকে। এদিকে ঢাকার অনেক ক্লাবও এ মুহূর্তে অগোছালো অবস্থায় আছে। সব মিলিয়ে বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের শূন্য পদে নির্বাচন এ মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না।
কোনো পরিচালকের পদ শূন্য হলে বিসিবিতে নতুন পরিচালক আনার একমাত্র পথ নির্বাচন।
ফারুকও গতকাল বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে তাদের জায়গায় আমরা কাউকে নিতে পারছি না। কারণ, জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এখন পর্যন্ত নতুন কমিটি করেনি। ক্লাবগুলো এখনো অগোছালো। নির্বাচন করতে চাইলে পদ খালি হতে হবে, নির্বাচন ওভাবেই করতে হবে। ওই জায়গাগুলো পূরণ করার জন্য আরও কিছু সময় লাগবে।’
পরিচালক সংকটের মধ্যে থাকা বিসিবির সামনে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বিপিএলটা ঠিকঠাকভাবে আয়োজন করা। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ফারুক আহমেদের বোর্ড অনেকটাই এগিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সূত্র। আগের সাতটি ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে চারটির খেলা নিশ্চিত ছিল, অনিশ্চয়তা ছিল তিনটি নিয়ে। আজ জানা গেছে, সেই তিন ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্যও নতুন মালিক পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে বিসিবি। বাকি শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
ফারুক অবশ্য বিপিএল নিয়ে আজ অত বিস্তারিত বলেননি। তবে জানিয়েছেন, বিপিএলে এবার ‘টপ ক্লাস উইকেট’ই থাকবে ভেন্যুগুলোতে। সব ঠিক থাকলে ২৭ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা বিপিএল।