সাংবাদিক বোনের প্রশ্নে যা বললেন জাকের
‘আপু…।’
কোনো সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব এভাবেও শুরু করা যায়! যায় বোধ হয়। অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পর জাকের আলীই তো এমনটাই করলেন। উপায় কী বলুন! পুরো জীবনের অভ্যাস, এক মুহূর্তে পরিবর্তন হয় নাকি! আর ক্রিকেট জীবনের অংশ হলে পরিবার তো পুরো জীবনই।
ব্যাট-বলের এই খেলা পারে কাছের মানুষকে নতুন করে নতুন পরিচয়ে উপস্থাপন করতে। আজ যেমন জাকেরের সামনে তাঁর বোন ধরা দিলেন নতুন পরিচয়ে। জাকের নিজে ক্রিকেটার এবং তাঁর বোন সাংবাদিক।
জাকেরের বোন শাকিলা ববি আগে থেকেই একটি জাতীয় দৈনিকের সিলেট প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। সাংবাদিক পরিচয়টা তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। তবে জাকেরের জন্য সংবাদকর্মী বোনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অভিজ্ঞতা তো নতুন।
বোন কী প্রশ্ন করলেন, সেটা শোনা যাক, ‘যেহেতু সিলেটের ছেলে আপনি, ঘরের মাঠে আপনি পারফর্ম করলেন; যারা দর্শক ছিল, সবাই আপনার নাম ধরে চিৎকার করছিল, কেমন উপভোগ করেছেন?’
ভাইয়ের (জাকের) উত্তর, ‘আমি সব সময় সিলেটের মাঠে খেলতে পছন্দ করি। আমার প্রথম শ্রেণির অভিষেকও এখানে। উইকেট খুব ভালো ছিল। সবকিছুই ঠিক ছিল, যদি ম্যাচটা জিততে পারতাম আরও ভালো লাগত।’
জাকেরের আপু বলে সম্বোধনে প্রেসবক্সে সবাই ততক্ষণে জেনে গেছেন, যিনি প্রশ্ন করেছেন, তিনি জাকেরের আপন বোন। বোন প্রশ্ন করলেন, ভাই দিলেন উত্তর—এমন ঘটনায় জাকের কতটা গর্বিত জানতে চেয়েছিলেন আরেক সাংবাদিক। জাকের বলেছেন, ‘এটা গর্বের বিষয়। সবই আল্লাহর মেহেরবানি।’
ঘরের মাঠে ‘আসল’ অভিষেকে জাকের আজ খেলেছেন ৩৪ বলে ৬৮ রানের ইনিংস। মাত্র ৩ বল বাকি থাকতে আউট হয়েছেন। যখন আউট হন, বাংলাদেশের তখন প্রয়োজন ৩ বলে ১০। আর যখন নেমেছিলেন, তখন প্রয়োজন ছিল ৬৭ বলে ১৩৯। হাতে ৬ উইকেট। সেখান থেকেই জাকের খেলেছেন এমন ইনিংস। ৬টি ছক্কা মেরে গড়েছেন ছক্কার রেকর্ড। বাংলাদেশি কোনো ব্যাটসম্যানের ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা এখন জাকেরেরই।
নিজের ইনিংস জাকের বলেছেন, ‘বিপিএলের আত্মবিশ্বাসটা কাজে দিয়েছে। বিপিএল দুই দিন আগেই শেষ হয়েছে। আর যেহেতু আমার ঘরের মাঠ, আমি মাঠ সম্পর্কে জানি, ভালো ধারণা রাখি, সেটা কাজে দিয়েছে।’ যে বলে আউট হয়েছেন, সে বিষয়ে পরে যোগ করেছেন, ‘বিশ্বাস ছিল পারব। কিন্তু কানেক্ট (ব্যাটে ঠিকমতো বল লাগেনি) হয়নি।’
বিপিএলে ফর্মে থাকলেও জাকেরকে শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রাথমিক দলে সুযোগ পাননি। আলিস আল ইসলাম চোটে পড়ায় শেষ মুহূর্তে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়। আর সুযোগটা যে আসবে, তা জাকের আগেই জানতেন, ‘আসলে দেখুন…আমি এই জিনিসটা সবাইকে বলি, আমার যখন সময় আসবে, তখনই আমি সুযোগটা পাব। মানসিকভাবে আমি সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত রেখেছি। আলিস যখন চোটে পড়ে, তখন শান্ত আমাকে বলেছিল, “তোর কিন্তু যাওয়ার সুযোগ আছে।” তখন থেকেই আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম।’
জাকেরের বোন শাকিলা ববি আজ কন্যাসন্তানকে নিয়ে প্রেসবক্সে বসেই ভাইয়ের খেলা দেখেছেন। শাকিলার স্বামী মামুন হোসেন একটি পত্রিকার ফটোসাংবাদিক। শাকিলার আরেকটি পরিচয়ও আছে। তিনি হবিগঞ্জ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। খেলাধুলা অবশ্য জাকেরের রক্তেই। পাঁচ-ভাই বোনের পরিবারের মধ্যে চারজনই খেলাধুলা করেছেন। তাঁর স্ত্রী নাফিসা তাবাসসুম জাতীয় পর্যায়ের আর্চার।