ইবাদতের ফিরে আসার লড়াই ও 'সিলেটি' আড্ডা
টি-টোয়েন্টি দলের অনুশীলন ততক্ষণে শেষ। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের নেটে তখন টেস্ট দলের সম্ভাব্য দুই ক্রিকেটার খালেদ আহমেদ ও জাকির হাসান। যে নেটে এতক্ষণ চার-ছক্কা হাঁকানোর অনুশীলন চলছিল, সেখানেই শুরু হলো খালেদ-জাকিরের লাল বলের অনুশীলন।
ফরচুন বরিশালের হয়ে বিপিএল ফাইনাল জেতার পরদিন থেকেই সাদা বল ফেলে লাল বলে বোলিং শুরু করেছেন খালেদ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ শুরু হবে আগামী ২২ মার্চ। তার আগে আবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের কিছু ম্যাচ খেলতে হবে। আবারও সাদা বলের খেলায় ঢোকার আগে লাল বলে কয়েকটি সেশন করে নিচ্ছেন খালেদ।
জাকিরের একই ভাবনা। প্রিমিয়ার লিগের আগে টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতি নিতে অদ্ভুত কৌশল বের করেছেন জাতীয় দলের এই বাঁহাতি ওপেনার। ব্যক্তিগত অনুশীলন সেশনটাকে তিনি দুই ভাগে ভাগ করেছেন। খালেদের বল খেলে তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন টেস্ট ম্যাচের। আর নেট বোলারের অফ স্পিন খেলছিলেন ওয়ানডে ম্যাচের আবহ কল্পনা করে।
টেস্ট দলের দুই ক্রিকেটারের একান্ত অনুশীলনে হুট করেই হইচই করতে করতে হাজির হলেন ইবাদত হোসেন! জিম করতে সিলেট স্টেডিয়ামে এসেছেন। এসেই দুই সতীর্থের সঙ্গে দেখা, যাঁরা দুজনই আবার সিলেটের। জমে গেল তাঁদের ছোটখাটো আড্ডা, অনুশীলন থেমে থাকল কিছুক্ষণের জন্য।
খালেদ ও জাকিরের সঙ্গে নিজের চোট নিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললেন ইবাদত। মুখে চওড়া হাসি। আড্ডা দিতে দিতেই ইবাদত কোনো এক কারণে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। এদিক–ওদিক তাকিয়ে ক্রিকেট বল খুঁজতে লাগলেন। পেয়েও গেলেন। চোখে রোদচশমা রেখেই পপিং ক্রিজে দাঁড়িয়ে বল করা শুরু করলেন ইবাদত। শুধু তা-ই নয়, জার্সিতে বলের এক পাশ ঘষার রুটিন কাজটাও করছিলেন। বাঁহাতি জাকিরের প্যাডে সুইং করানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্রতিটি বল শেষে তাঁর ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল, যেন দারুণ বোলিং করছেন আর জাকির ব্যাটেই বল লাগাতে পারছেন না। অথচ ইবাদাত বল করছিলেন জায়গায় দাঁড়িয়ে, স্পিনারের গতিতে এবং প্রতিটি বল জাকির খেলছিলেন মাঝব্যাটে।
ইবাদতের অবশ্য তখন এত কিছু দেখার সময় নেই! তিনি একটু বোলিং করতে পেরেই খুশি। হাত ঘোরানোর ফাঁকে খালেদের বোলিংয়ে আম্পায়ারিংয়ের ভূমিকায়ও দেখা গেল ইবাদতকে। সামনের পা ক্রিজ থেকে বের হলেই হাত উঁচিয়ে চেঁচিয়ে ‘নো বল’ ডাকছেন। খালেদের স্পাইকের কতটুকু দাগের বাইরে ছিল, তা দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। নো বল হওয়া না–হওয়া নিয়ে দুই পেসারের মধ্যে তর্কও চলল কিছুক্ষণ। ইবাদত খালেদকে বারবার বলছিলেন, ‘কনফার্ম নো বল, কনফার্ম!’
শুধু আম্পায়ারের ভূমিকায় নন। ইবাদত হয়ে উঠলেন ধারাভাষ্যকারও। নেটে নিজের ছোড়া বলে নিজেই ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন। খালেদের বলেও ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে চিৎকার করছিলেন, ‘ওয়েল বোল্ড, কাট, ফোর’, ‘ওয়ান বাউন্স ফর ফোর’, ‘দেয়ার ইজ আ চান্স, অ্যান্ড আউট’।
তিন ক্রিকেটারকে মজা করতে দেখে এগিয়ে এলেন আম্পায়ার মাসুদুর রহমান। ইবাদতকে বোলিং করতে দেখে তাঁরও বোলিং করার ইচ্ছে হলো। তাঁর বোলিংয়ের সময়ও ইবাদত মজা করে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন, ‘অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে একটা বাজে বল করলেন মুকুল ভাই।’
দূর থেকে তিন ক্রিকেটারকে মজা করতে দেখে এগিয়ে এলেন আম্পায়ার মাসুদুর রহমান। ইবাদতকে বোলিং করতে দেখে তাঁরও বোলিং করার ইচ্ছে হলো। তাঁর বোলিংয়ের সময়ও ইবাদত মজা করে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন, ‘অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে একটা বাজে বল করলেন মুকুল ভাই।’
শুনে মাঠের সবাই হেসে উঠলেন। ইবাদতের কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছিল না তিনি বাংলাদেশের হয়ে ২০ টেস্ট খেলেছেন। যেন ক্রিকেটপাগল কোনো ছেলে দীর্ঘদিন পর খোলা মাঠে এসেছেন! শিশুসুলভ পাগলামিটা আছে বলেই হয়তো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময়েও ইবাদতের মুখে চওড়া হাসি।
স্ট্রেংথ ফিরে পাওয়া নিয়ে কাজ করছি। পায়ের স্ট্রেংথ প্রায় ৬০% ফিরে পেয়েছি। আরও ২০% করতে পারলেই, দুই পায়েই যখন ৯০ বার ১০০–এর কাছাকাছি যেতে পারব, তখন রানিং শুরু করতে পারব। আশা করি, আগামী সপ্তাহ থেকেই রানিং করতে পারব।ইবাদত হোসেন, বাংলাদেশের পেসার
গত বছর জুলাই মাসে ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে থাকা অবস্থায় বাঁ হাটুতে চোট পান ইবাদত। এর পর থেকেই খেলার বাইরে। গত বছর আগস্টে ইংল্যান্ডে তাঁর হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করানো হয়। এখন চলছে পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া। সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহ থেকে দৌড়ানো শুরু করবেন ইবাদত। যে মুহূর্তটার জন্য ইবাদত গত ছয় মাসের বেশি সময় অপেক্ষা করছিলেন, তা আর বেশি দূরে নেই।
অনুশীলনে দুষ্টুমির ফাঁকেই ইবাদত জানালেন পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ার অবস্থা, ‘স্ট্রেংথ ফিরে পাওয়া নিয়ে কাজ করছি। পায়ের স্ট্রেংথ প্রায় ৬০% ফিরে পেয়েছি। আরও ২০% করতে পারলেই, দুই পায়েই যখন ৯০ বার ১০০–এর কাছাকাছি যেতে পারব, তখন রানিং শুরু করতে পারব। আশা করি, আগামী সপ্তাহ থেকেই রানিং করতে পারব।’
শেষ কথাটা বলতে গিয়ে ইবাদতের চোখ জ্বলজ্বল করছিল। এ মুহূর্তে দৌড় শুরু করতে পারলে যেন আকাশে ওড়ার অনুভূতি পাবেন তিনি। জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নের পালেও হাওয়া লাগবে।