ক্রিকেটার না হলে পেট্রলপাম্প দিতেন ওয়াসিম আকরাম
ওয়াসিম আকরাম যদি ক্রিকেটার না হতেন তাহলে কী হতো!
কী আর হতো! বিশ্ব ক্রিকেট তাঁর মতো অসাধারণ এক ক্রিকেটারের খেলা থেকে বঞ্চিত হতো! পাকিস্তান ক্রিকেট দল বঞ্চিত হতো ২০ বছর ধরে পাওয়া সেবা থেকে। আকরাম নিজে অবশ্য জানিয়েছেন, ক্রিকেটার না হলে তিনি কানাডার টরন্টোতে পেট্রলপাম্প দিয়ে ব্যবসা করতেন!
ভারতের সংবাদমাধ্যম স্পোর্টস কীডাকে দেওয়া এক একান্ত ভিডিও সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের কিংবদন্তি এই ফাস্ট বোলার জানিয়েছেন, ছোটবেলায় পড়াশোনার প্রতি তাঁর তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না, সারাক্ষণ খেলা নিয়ে থাকতেন। পড়াশোনায়ও তিনি তেমন ভালো ছিলেন না, ‘আমার পুরো মনোযোগ ছিল খেলাধুলার প্রতি। আমি স্কুলের বাস্কেটবল দলে থাকতাম, ক্রিকেট দলে থাকতাম, টেবিল টেনিস খেলতাম। কিন্তু পড়াশোনার ব্যাপারে আমি সব সময়ই ব্যাকবেঞ্চার ধরনের ছিলাম।’
ক্রিকেটার না হলে তিনি কী করতেন এমন প্রশ্নের জবাবে আকরামের মন্তব্য, ‘যদি আমি ক্রিকেটার না হতাম, তাহলে হয়তো টরন্টোতে আমার একটা পেট্রলপাম্প থাকত। কী জানি! আমি জানি না। দেখুন, আমি ছাত্র হিসেবে খুব বাজে ছিলাম।’
কোনো কারণে ক্রিকেটে সাফল্য না পেতেন, তাহলে তার কোনো বিকল্প পরিকল্পনা ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আকরাম বলেন, ‘আমি পাকিস্তান দলে সুযোগ পেয়েছিলাম মাত্র ১৭ বছর বয়সে। তখন তো আমি বাচ্চাই। বিকল্প কোনো পরিকল্পনা বলে যে কিছু থাকতে পারে, সেটিই আমি জানতাম না। আল্লাহ সহায় ছিলেন আমার প্রতি।’
শুধু নিজের ক্যারিয়ার নয়, আকরাম কথা বলেছেন এখনকার ক্রিকেট নিয়েও। ২০০৮ সালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) আইপিএল চালু করেছিল। এই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য আখেরে দারুণ একটা ব্যাপার হয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটের দিগন্তরেখাই বদলে দিয়েছে এই আইপিএল। গত ১৬ বছরে এই আইপিএল বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি লিগ হিসেবেই স্বীকৃতি পেয়েছে। আকরামও মনে করেন আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছে, ‘আমার মনে আছে ২০০৮ সালে যখন আইপিএল শুরু হয়, তখন আমি অস্ট্রেলিয়াতে ইএসপিএন-স্টারের ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করি। আইপিএল শুরু হচ্ছে দেখে সবাই খুব রোমাঞ্চিত ছিল। আইপিএল না হলে ভারতীয় ক্রিকেট এখনকার অবস্থায় থাকত না। ভারতীয় ক্রিকেটের চাহিদা হয়তো অনেক কম থাকত। কোনো দল যখন জিততে থাকে, তখন পৃষ্ঠপোষকেরা সে দলের প্রতি আকৃষ্ট হয়। অর্থের প্রবাহ বেড়ে যায়। এ ব্যাপারটি আইপিএলের কারণে ঘটেছে ভারতীয় ক্রিকেটে।’
আকরাম নারী আইপিএল নিয়েও আশাবাদী, ‘ভারত তো নারীদের আইপিএলও খুব জাঁকজমকের সঙ্গে শুরু করেছে। প্রথম মৌসুমেই এটি আয়োজন করে সাফল্য এসেছে। আমি এই নারী আইপিএলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানাতে চাই।’
মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্বের ভক্ত আকরাম। তিনি বলেছেন, ‘আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু কমপক্ষে তিনবার শিরোপা জিততে পারত, যদি মহেন্দ্র সিং ধোনি তাদের অধিনায়ক হতো। এখন পর্যন্ত বেঙ্গালুরু কোনো শিরোপা জেতেনি। তাদের সমর্থনের অভাব নেই। দলে আছে আধুনিক সময়ের সেরা ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, তারা আইপিএল জিততে পারেনি।’
আকরাম মনে করেন ধোনির অধিনায়কত্ব অন্যদের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা। পাকিস্তানি তারকার পর্যবেক্ষণ, ‘মাঠে ধোনির শান্ত স্বভাবটা পুরোপুরি ওপর দিয়ে। এটা পুরোপুরি তাঁর খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস জোগাতে, যেন তারা মাঠে ভালো করতে পারে।’ ক্রিকেটে অধিনায়কত্বকে একধরনের অভ্যাসই মনে করেন আকরাম, ‘অধিনায়কত্ব একধরনের অভ্যাস। ধোনির অধিনায়কত্ব করার এই অভ্যাসটা আছে। এমনকি বিরাটের মধ্যেও এত দিনে এই অভ্যাসটা গড়ে ওঠা উচিত।’
কোহলি অধিনায়ক হিসেবে বেঙ্গালুরুকে শিরোপা জেতাতে পারেননি। আকরামের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল অধিনায়ক হিসেবে কোহলির দুর্বলতা কোন জায়গায়, ‘আমি জানি না কোহলির দুর্বলতা কোথায় অধিনায়ক হিসেবে। কোহলি খুবই পরিশ্রমী একটা ছেলে। আমার মনে হয়, কোহলি ভারতীয় দল নিয়ে বেশি মনোযোগী। আইপিএলে অনেক সময়ই অধিনায়কত্বটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং কোহলির অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়াটা ভালোই হয়েছে। সে এখন অনেক বেশি নিজের পারফরম্যান্সে মনোযোগ দিতে পারছে। মনে হচ্ছে, এখন সে ক্রিকেটটা উপভোগ করছে।’