টানা তিন দিন বিছানায়, ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে মাঠে নেমে দিল্লিকে ‘ব্যথা’ দিলেন পরাগ
২০২৩ আইপিএলে ৭ ইনিংসে ৭৮ রান। ১৩ ব্যাটিং গড়ে স্ট্রাইকরেট ১১৮.১৮। আগের বছর নিলামে ৩ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে কেনার পর রিয়ান পরাগের কাছে মোটেও এমন পারফরম্যান্স আশা করেনি রাজস্থান রয়্যালস। এবার আইপিএলে দুই ইনিংসে পরাগের রান ১২৭। স্ট্রাইকরেট ১৭১.৬২। এর মধ্যে গতকাল জয়পুরে কঠিন উইকেটে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ৪৫ বলে অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংসও আছে। টি-টোয়েন্টিতে এটাই পরাগের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
২২ বছর বয়সী পরাগ নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করেই এবার আইপিএলে ভালো শুরু পেয়েছেন। এ মৌসুমে ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে সর্বোচ্চ ৫১০ রান (১০ ইনিংস) এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। ৮৫ ব্যাটিং গড়ে স্ট্রাইকরেট ১৮৩ এর কাছাকাছি। আর এই পথে টানা সাতটি ফিফটি তুলে নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে গড়েছেন টানা সর্বোচ্চ ইনিংসে ফিফটির রেকর্ডও।
গতকাল ম্যাচ শেষে পরাগ জানিয়েছেন, তাঁর এই পাল্টে যাওয়ার পেছনে রয়েছে প্রচুর অনুশীলন, ‘কে বল করছে সেটা নয়, কী বল করছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ, আর সেগুলোই বেশি বেশি অনুশীলন করেছি। আজ রাতে (গতকাল) তার কিছু কাজে লাগাতে পেরেছি।’
পরাগ কেমন কাজে লাগিয়েছেন, তার একটা ছোট্ট উদাহরণ হচ্ছে রাজস্থান রয়্যালসের ইনিংসে শেষ ওভারটা। বোলিংয়ে ছিলেন দিল্লির পেসার আনরিখ নর্কিয়া। বিশ্বের অন্যতম গতিময় এই পেসারের কাছ থেকে পরাগ একাই তুলেছেন ২৫ রান। অথচ শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থও ছিলেন না। আগের তিন দিন বিছানায় পড়েছিলেন। ম্যাচের দিন সকালে ব্যথানাশক ওষুধ (পেইন কিলার) খেয়ে ম্যাচটা খেলতে নেমেছিলেন।
কিন্তু মাঠে দেখা গেল পরাগের উইলো-বাজিতে হারের ব্যথাটা দিল্লিই পেল। ম্যাচ-পরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পরাগ বলেছেন, ‘গত তিন দিন অনেক ধকল গেছে। বিছানায় পড়ে ছিলাম। অসুস্থ ছিলাম। ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে আজ (গতকাল) উঠে দাঁড়িয়েছি। এরপর ঠিকঠাকমতো সব করতে পেরেছি। তাই নিজের জন্য ভালো লাগছে।’
নর্কিয়ার বাউন্সার এবং ইয়র্কার পাত্তাই দেননি পরাগ। হাত খুলে মেরেছেন। ম্যাচসেরা পরাগ এই দক্ষতা নিয়ে বলেছেন, ‘উইকেটের দুই প্রান্তেই রান করা নিয়ে শেষ দিকে কাজ করেছি। আমি জানি শর্ট বলে ছক্কা কিংবা ইয়র্কারও মেরে দেওয়ার মতো শক্তি ও ক্ষমতা আমার আছে। তাই সুযোগ পেলেই এটা করি। কখনো বাউন্ডারি মারতে পারি, কখনো আবার পারি না।’
ষষ্ঠ ওভারে রাজস্থানের স্কোর ২ উইকেটে ৩০ থাকতে চারে ব্যাটিংয়ে নামেন পরাগ। একপর্যায়ে তাঁর রান ছিল ২৬ বলে ২৬। কিন্তু নিজের খেলা শেষ ১৯ বল থেকে তুলেছেন ৫৮ রান। পরাগ জানিয়েছেন, রাজস্থান রয়্যালস কোচ কুমার সাঙ্গাকারা এবং সঞ্জু স্যামসন তাঁকে ‘ইনিংসটা লম্বা করতে’ বলেছিলেন। পরাগের ভাষায়, ‘আমি জানতাম, ইনিংসটা লম্বা করতে পারলে অনেক রান পাব।’
রান পাওয়ার এই ম্যাচে একটি রেকর্ডও গড়েছেন পরাগ। ভারতের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০০ ম্যাচ খেলার মাইলফলক ছুঁয়েছেন গতকাল রাতের ম্যাচে। ২২ বছর ১৩৯ দিন বয়সে পরাগ রেকর্ডটি গড়ার পথে পেছনে ফেলেছেন তাঁর ফ্র্যাঞ্চাইজি দলেরই অধিনায়ক স্যামসনের রেকর্ড। ২২ বছর ১৫৭ দিন বয়সে রেকর্ডটি গড়েছিলেন স্যামসন।