ভারতের ক্রিকেট বোর্ডকে কত টাকা দেয় আইসিসি

দুবাইয়ে অবস্থিত আইসিসি সদরদপ্তরআইসিসি

ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার নামের সংক্ষিপ্ত রূপ ‘আইসিসি’, পূর্ণ রূপ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল। তবে আইসিসিতে ভারতের দাপট ও প্রভাব বোঝাতে সমালোচকেরা কখনো কখনো এটিকে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ও বলে থাকেন। সদ্য বিদায়ী আইসিসি চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে তো দায়িত্ব ছাড়ার সময় এমনও বলেছেন, একটা দেশের এত ক্ষমতা ও প্রভাব থাকাটা ক্রিকেট খেলাটিকে বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সহায়ক নয়।

আইসিসিতে ভারতের এই প্রভাবের সবচেয়ে বড় কারণ দেশটির বিশাল বাজার। ১৪০ কোটি মানুষের দেশে ক্রিকেটই সবচেয়ে জনপ্রিয়, আইসিসির আয়ের জন্য যা বড় মাধ্যম। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার সদস্যদেশগুলোকে যে লভ্যাংশ দেয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অংশ পায় ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। এতটাই বেশি যে অন্যদের কেউ ভারতের তিন ভাগের এক ভাগও পায় না।

২০২৩ সালে আইসিসি পরবর্তী চার বছরে তার সদস্যদেশগুলোকে কী পরিমাণ লভ্যাংশ দেবে, তার আর্থিক কাঠামো চূড়ান্ত করে। আইসিসি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে জনপ্রিয় ক্রিকেট পোর্টাল ইএসপিএনক্রিকইনফো সংশ্লিষ্ট নথির বরাতে এ–সংক্রান্ত তথ্য সামনে নিয়ে এসেছিল। পরবর্তী সময়ে বিসিসিআই থেকে তার রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাগুলোকে পাঠানো মেইলের সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্রিকবাজও।

আইসিসিতে বিসিসিআইয়ের প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোড়ন উঠেছে
এএফপি

বিসিসিআইয়ের তৎকালীন সচিব ও বর্তমান আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ জুলাইয়ের ওই মেইলে লিখেছিলেন, আইসিসি থেকে ৩৮.৫ শতাংশ রাজস্ব বরাদ্দ পেয়েছে ভারত। আরও স্পষ্ট করে বললে, আইসিসি তার সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ১০০ টাকা লভ্যাংশ বণ্টন করলে তার সাড়ে ৩৮ টাকা পাবে বিসিসিআই। ভারত বাদে আর কোনো দেশই দুই অঙ্কের টাকা পাবে না। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬.৮৯ টাকা পাবে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি), তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬.২৫ টাকা পাবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)।

আরও পড়ুন

আইসিসি ২০২৪–২৭ সময়ের জন্য মোট ৬০ কোটি মার্কিন ডলার প্রাক্কলন করেছিল। এ অনুসারে ভারত চার বছরে পাবে মোট ২৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, যা ইসিবির ক্ষেত্রে ৪ কোটি ১৩ লাখ, সিএর ক্ষেত্রে ৩ কোটি ৭৫ লাখ। জানিয়ে রাখা ভালো, অন্য বোর্ডগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বিসিবির জন্য ৪.৪৬ শতাংশ বা ২ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার এবং পাকিস্তানের পিসিবির জন্য ৫.৭৫ শতাংশ বা ৩ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার প্রস্তাবের খবর পাওয়া গিয়েছিল। চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় এটি বদলেছে কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কোন দেশের বোর্ড লভ্যাংশ কতটুকু পাবে, সেটির আর্থিক কাঠামো তৈরি করেছিল আইসিসির পরিচালনা পর্ষদের ফিন্যান্স অ্যান্ড কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স কমিটি। মোট চারটি মানদণ্ড ধরে লভ্যাংশের ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের ক্রিকেট ইতিহাস, আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোতে ছেলে ও মেয়েদের আসরে গত ১৬ বছরের পারফরম্যান্স, আইসিসির বাণিজ্যিক আয়ে অবদান এবং আইসিসির পূর্ণ সদস্য হিসেবে নির্ধারিত অর্থ, যেটি সব দেশেরই সমান।

ভারতের বেশি আয়ের কারণ মূলত বাণিজ্যিক। আইসিসির এক নথিতে ক্রিকইনফো দেখেছে, ক্রিকেটের বৈশ্বিক সংস্থাটির বাণিজ্যিক আয়ের ৮৫.৩ শতাংশ বিসিসিআইয়ের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এর পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে আইসিসির আয়ের অন্যতম যে উৎস, সেই সম্প্রচার বা মিডিয়াস্বত্বের প্রধান উৎস ভারত। ২০২৩ সালে পরবর্তী চার বছরের জন্য ভারতের ডিজনি স্টার আইসিসির সঙ্গে সম্প্রচার চুক্তি করে। যার চুক্তিমূল্য ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুন