মোস্তাফিজ এখন পিএসএলেও দল পান না, দিন কি তবে শেষ
টি-টোয়েন্টিতে সেরা ডেথ বোলার কে?
আপনার হাতে অপশন দুটি—যশপ্রীত বুমরা নাকি মোস্তাফিজুর রহমান। ভোট না দিয়ে প্রশ্নকর্তার প্রতি রাগও হতে পারেন। ভাবতে পারেন, এ আবার কেমন তুলনা! বুমরার সঙ্গে মোস্তাফিজের নামটা যায় নাকি? বর্তমান বাস্তবতায় তুলনার কোনো সুযোগ নেই।
একজন নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য পর্যায়ে আর অন্যজনের ভালো করতে হলে দিনটা নিজের হতে হয়। তবে একটা সময় এই দুজনের তুলনা বেশ ঘটা করেই হতো। সেটা আবার আইপিএলেই।
২০১৬ সালের আইপিএলের কথা। মোস্তাফিজুর রহমান সানরাইজার্স হায়দরাবাদের। অন্যদিকে যশপ্রীত বুমরা খেলছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে। দুজনেই তখন উঠতি তারকা। টি-টোয়েন্টিতে কে ভালো, বিশেষ করে ডেথ ওভারে, তা ছিল আলোচনার বিষয়।
হায়দরাবাদ বনাম মুম্বাইয়ের ম্যাচে আইপিএল কর্তৃপক্ষই এই প্রশ্নের উত্তর দর্শকদের কাছেই জানতে চেয়েছিল। তাতে কে কত শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, জানেন? না, মোস্তাফিজ জিততে পারেননি। তবে ভোট পেয়েছিলেন ৪৮ শতাংশ। এত শতাংশ ভোটের মধ্যে নিঃসন্দেহে অসংখ্য ভারতীয়ও তাঁকে ভোট দিয়েছেন। এখন কি একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে?
ভারতীয়দের কথা বাদ দিন। এমন কোনো ক্রিকেট–সমর্থকও কি আছেন, যিনি বলতে পারবেন, বুমরার সঙ্গে মোস্তাফিজের তুলনা চলে। কী তুলনা দেবেন, মোস্তাফিজ যে এখন পাকিস্তান সুপার লিগেও দল পান না। গতকাল হওয়া ড্রাফটে তাকে নেয়নি কোনো দল। এর আগে তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আইপিএলের দলগুলোও। জাতীয় দলেও সেই আগের ঝাঁজটা নেই। মোস্তাফিজ ৪ ওভার বোলিং করে দেন, তাতে ভীতিকর কিছু থাকে না।
সর্বশেষ আইপিএল মৌসুমে মোট ছক্কাই হয়েছে ১২৬০টি, যেখানে বিপিএলে এখন পর্যন্ত ২০ ম্যাচে ছক্কা হয়েছে ৩৪২টি। বাকি আছে ২৬টি ম্যাচ, সেখানে ধরে নিন আরও ৪০০ ছক্কাই হবে। তাতেও আইপিএল থেকে বেশ দূরেই থাকবে।
এবারের বিপিএলের কথা ধরুন। ৭ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৭টি। বোলিং দিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছেন, এমন কোনো উদাহরণ নেই। ঢাকার বোলিং আক্রমণ এমনিতেই ভয়ংকর কিছু নয়, এরপর যদিও মোস্তাফিজও অসাধারণ কিছু না করতে পারেন, তাহলে ঢাকা জিতবে কী করে! বিপিএলের মতো মানের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা টুর্নামেন্টেও মোস্তাফিজ চমক দিতে পারছেন না। অন্য লিগে কীভাবে পারবেন?
বলতে পারেন, এবারের বিপিএলে রান উৎসব হচ্ছে। বোলারদের জন্য উইকেটে কিছুই নেই। তাতে পাল্টা প্রশ্ন আসবে, কোন টি-টোয়েন্টি লিগে বোলারদের জন্য উইকেটে বাড়তি সহায়তা থাকে?
সর্বশেষ আইপিএল মৌসুমে মোট ছক্কাই হয়েছে ১২৬০টি, যেখানে বিপিএলে এখন পর্যন্ত ২০ ম্যাচে ছক্কা হয়েছে ৩৪২টি। বাকি আছে ২৬টি ম্যাচ, সেখানে ধরে নিন আরও ৪০০ ছক্কাই হবে। তাতেও আইপিএল থেকে বেশ দূরেই থাকবে। আইপিএলে ব্যাটসম্যানদের সমন্বিত স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫০.৫৮, যেটা এবারের বিপিএলে ১৪০.৪৩। আর আইপিএলে যেভাবে বলেকয়ে ২০০ রান তাড়া করা হয়, বিপিএলে তা চিন্তাও করা যায় না।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও এই ছাপ পড়ছে জোরেশোরে। ঘরের মাঠে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত যে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে, সেটাই এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আসল বিজ্ঞাপন। যে সিরিজের একটি ম্যাচে ২৯৭ রানও তুলেছিল ভারত। ৩ ম্যাচের সেই সিরিজে ৬৬টি বল করে ১২৪ রান দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। ইকোনমি রেট ছিল ১১.২৭! উইকেট মাত্র ৪টি। মোস্তাফিজকে আইপিএলে কেন নেবে?
বাঁহাতি পেসার হিসেবে মোস্তাফিজ কিছুটা বাড়তি গুরুত্ব পেতেন। দিন শেষে ইমপ্যাক্ট না থাকলে আর কত দিন? দেশে নাহয় বাঁহাতি পেসারের ঘাটতি আছে। ক্রিকেট–বিশ্বে তো নেই। এবারের পিএসএল ড্রাফটেই বেশির ভাগ দল মোস্তাফিজকে ছাড়াই বাঁহাতি পেসার খুঁজে পেয়েছে।
আইপিএল, পিএসএল কোথাও নেই। মোস্তাফিজ খেলবেন কোথায়? সারা দুনিয়ায় অবশ্য টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের অভাব নেই। মান নিয়ে যা একটু প্রশ্ন। তবে মোস্তাফিজ খুব বেশি বাইরের লিগ খেলেননি।
বাঁহাতি পেসার হিসেবে মোস্তাফিজ কিছুটা বাড়তি গুরুত্ব পেতেন। দিন শেষে ইমপ্যাক্ট না থাকলে আর কত দিন?
আইপিএলের বাইরে পিএসএল, এলপিএল ও কাউন্টিতে খেলেছেন। এখন হয়তো অন্য লিগগুলোর দিকেও চোখ দিতে হবে। আর সেসব দ্বিতীয়, তৃতীয় সারির টুর্নামেন্টে কারও নিয়মিত হওয়া মানেই ধরে নেওয়া যায় তাঁর শেষের খুব বেশি দেরি নেই। ২৯ বছর বয়সী মোস্তাফিজও কি সেই পথে হাঁটছেন না?
জানিয়ে রাখতেই হচ্ছে, সর্বশেষ বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফির সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন বুমরা।