টুর্নামেন্ট–সেরা হয়েও কোহলির মুখে আঁধার
বিশ্বকাপ জয়ের জন্য কী কী করা যায়?
এক টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়া যায়। সর্বোচ্চ পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের রেকর্ডও গড়া যায় সেই একই টুর্নামেন্টে। সে পথে আবার ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ শতকের রেকর্ডও গড়া যায়। কিন্তু তবু কি বিশ্বকাপ জেতা যায়? বিরাট কোহলিকে জিজ্ঞেস করুন, অবধারিত উত্তর হলো, ‘না’। ভারতীয় কিংবদন্তি বলতে পারেন, শুধু এসব রেকর্ড কেন, বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়েও তো বিশ্বকাপ জেতা যায় না!
আসলেই তাই। ভারতকে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জেতাতে এবার ব্যাটিংয়ে কী করেননি কোহলি! পরিসংখ্যানেই চোখ বুলিয়ে দেখুন। ১১ ম্যাচে ৬ অর্ধশতক, ৩ শতকসহ ৭৬৫ রান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক টুর্নামেন্টে এটাই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। কোহলি এই পথে ভেঙেছেন ২০০৩ বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকারের গড়া ৬৭৩ রানের কীর্তি। আর এই রেকর্ড ভাঙার পথেই আরও একটি রেকর্ড গড়েন কোহলি।
সেটি বিশ্বকাপের এক টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংসের রেকর্ড—৯টি। ফাইনালসহ এই বিশ্বকাপে ভারত খেলেছে ১১ ম্যাচ, তার মধ্যে ৯ ইনিংসেই পঞ্চাশোর্ধ্ব রান, যেখানে শতক আবার ৩টি। এর মধ্যে শেষটিতে টেন্ডুলকারকে পেছনে ফেলে গড়েছেন ৫০তম শতকের রেকর্ড। বিশ্বকাপ জিততে এর চেয়ে বেশি কিছু করা কি সম্ভব?
কিন্তু তবু তো শিরোপা জেতা হলো না। ব্যক্তিগত ট্রফি জিতলেও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬ উইকেটের হারে আসলে খালি হাতেই ফিরতে হলো কোহলিকে। বিসিসিআই সভাপতি রজার বিনির কাছ থেকে টুর্নামেন্ট–সেরার পুরস্কার নেওয়ার সময় কোহলির মুখে তাই ভর করেছে আঁধার। কোনো কথা বলেননি। ট্রফিটা নিয়ে মাথা নিচু করেই চলে গেলেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতেও দেখা গেছে, টুর্নামেন্ট–সেরার পুরস্কার হাতে ছবি তোলার সময়ও কোহলির মুখে কোথায় যেন দুঃখের ছায়া ঘনিয়েছিল।
ম্যাচের পরিস্থিতি যা–ই হোক, যে খেলোয়াড়টি প্রতিপক্ষের উইকেট পড়লেই বুনো উদ্যাপন শুরু করেন, সেই কোহলি দলকে জেতাতে যারপরনাই চেষ্টা করেও পারেননি; এরপর ব্যক্তিগত পুরস্কারের প্রতি অন্তত তাঁর কোনো মোহ না থাকাই স্বাভাবিক।
অথচ এই কোহলিই সেমিফাইনাল জয়ের পর বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে স্বপ্নের ঘোরে আছি।’ কিন্তু ফাইনালের পর সেই সুখস্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো কোহলির। মনঃকষ্টের এই ঘোর থেকে বের হতে তাঁর নিশ্চয়ই একটু সময় লাগবে। ভারতের হারের পর মাঠে নেমে এসে কোহলিকে সান্ত্বনাও দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা। হয়তো বলেছেন, এবার হয়নি তো কী হয়েছে! পরের বার হবে!
আসলেই কি তাই? কোহলি পঁয়ত্রিশে পা দিয়েছেন। পরের বিশ্বকাপ আসতে আসতে চল্লিশ ছুঁই হবে তাঁর। তখন সেই বিশ্বকাপে তাঁকে না দেখার সম্ভাবনাই বেশি। তাই ফাইনালে ৬৩ বলে ৫৪ রানের ইনিংসটাই হয়ে যেতে পারে বিশ্বকাপে কোহলির শেষ ইনিংস। আর সেই শেষটা দুঃখে মোড়ানো হলেও কোহলিকে নিশ্চয়ই এ জন্য মনে রাখবে না ক্রিকেট!