রউফের ৫ উইকেটের পর আইয়ুবের ৬ ছক্কা, অস্ট্রেলিয়াকে পাত্তা দিল না পাকিস্তান

৮২ রানের ইনিংস খেলেছেন সাইম আইয়ুবএএফপি

অ্যাডাম জাম্পার টানা দুটি বল সাবধানে খেলে খেলে একটু যেন বিরক্তই হলেন বাবর আজম। ম্যাচ সমতায় রেখে এতটা রক্ষণাত্মক খেলার মানে আছে নাকি! জাম্পার ঠিক পরের ডেলিভারিতেই কিছুটা জায়গা বানিয়ে বলকে উড়িয়ে মেরে পাঠালেন মিড উইকেট দিয়ে গ্যালারিতে।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তান ম্যাচটা জিতল ১৪১ বল আর ৯ উইকেট হাতে রেখে দিয়ে। দাপট দেখানো যে জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১  সমতাও এনেছে মোহম্মদ রিজওয়ানের দল।

অ্যাডিলেড ওভারের ম্যাচটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণই নিতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নে আগের ম্যাচে জয়ের পথে পাকিস্তানকে ২০৩ রানে অলআউট করে দিয়েছিলেন মিচেল স্টার্করা।

হয়তো এ কারণেই আজ ১৬৩ রানের পুঁজি নিয়েও কিছুটা হলেও আশাবাদী ছিল প্যাট কামিন্সের দল। কিন্তু আবদুল্লাহ শফিক ও সাইম আইয়ুবের উদ্বোধনী জুটিই অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়।

দুজনের শুরুটা ছিল সতর্ক। দশম ওভারের শেষ দুই বলে জশ হ্যাজলউডকে টানা দুই চার মেরে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের শুরুটা করেন শফিক।

তবে ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান নন, পাকিস্তানের রানের গতি বাড়ানোর মূল কাজটি করেন আইয়ুব।

আরও পড়ুন

এগারতম ওভারে প্যাট কামিন্সকে মারেন ছক্কা। এর পরের ওভারে মিচেল স্টার্ককে মারেন এক ছক্কা ও দুই চার। এর মধ্যে ফাইন লেগ দিয়ে ফ্লিকে মারা ছয়টি চোখে লেগে থাকতে বাধ্য। দিনের সেরা শট হিসেবে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ার মতো।

আইয়ুব সেখানেই থামেননি, এরপর তাঁর ব্যাটে ছয় হজম করতে হয়েছে অ্যারন হার্ডি ও জাম্পাকেও। দুজনের বলেই দুটি করে ছয় মেরেছেন মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা এই বাঁহাতি।

বল থামানোর চেষ্টা সাইম আইয়ুবের। বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান খেলতে পেরেছেন নিজের মনমতোই
এএফপি

আইয়ুবের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সুবাদে পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে ১০০ রান উঠে যায় ১৬তম ওভারেই। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাকিস্তানের যে কোনো উইকেটে এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি জুটি। এর আগে ১৯৮৪–৮৫ মৌসুমে মহসিন খান–মুদাসসর নজররা এমসিজিতে গড়েছিলেন আগের জুটিটি।

আইয়ুব এক পর্যায়ে সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও জাগিয়ে তোলেন। তবে জাম্পার বল ওড়াতে গিয়ে হ্যাজলউডের ক্যাচ হয়ে থামতে হয় ৮২ রানে। ৭১ বলের ইনিংসে ৬টি ছক্কার সঙ্গে ছিল ৫টি চার।

১৩৭ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর পাকিস্তানের জয় ছিল সময়ের ব্যাপার। শফিকের সঙ্গে জুটি বেঁধে যা সহজেই এনে দেন বাবর।

ব্যাটসম্যানদের আগে পাকিস্তানের বোলাররাও ছিলেন ছন্দে। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার কোনো জুটিই বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। সর্বোচ্চ ৩৮ রান যোগ হয় স্টিভ স্মিথ–জশ ইংলিসের চতুর্থ উইকেট জুটিতে। স্মিথ খেলেন সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস।

৫ উইকেট নেন হারিস রউফ
এএফপি

অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে মূল ধসটা নামান হারিস রউফ। ডানহাতি এ পেসার ২৯ রানে নেন ৫ উইকেট, শাহিন আফ্রিদির শিকার ২৬ রানে ৩টি। উইকেটের পেছনে ৬ ক্যাচ নিয়ে এক ম্যাচে উইকেটকিপারদের সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ডে ভাগ বসান রিজওয়ান।

ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচের বিশ্ব রেকর্ডও নিজের একার করে নিতে পারতেন। কিন্তু জাম্পার ক্যাচ মিস করে নিজেই রেকর্ডটা ফসকে ফেলেন। তবে ফিল্ডিং শেষে রিজওয়ান মাঠ ছেড়েছেন খুশি মনেই। আজকের আগে আর কখনোই যে অস্ট্রেলিয়াকে ১৬৩ রান বা এর কমে অলআউট করতে পারেনি পাকিস্তান।

অস্ট্রেলিয়াকে সর্বনিম্ন রানে অলআউট করার পরই মূলত ম্যাচটা পাকিস্তানের দিকে হেলে যায়। আইয়ুব–শফিকরা যার সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন।

ছক্কা মেরে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন বাবর আজম
এএফপি

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৩৫ ওভারে ১৬৩ (স্মিথ ৩৫, শর্ট ১৯, জাম্পা ১৮, ইংলিস ১৮; রউফ ৫/২৯, আফ্রিদি ৩/২৬)।
পাকিস্তান: ২৬.৩ ওভারে ১৬৯/১ (সাইম ৮২, শফিক ৬৪*, বাবর ১৫*; জাম্পা ১/৪৪)।
ফল: পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: হারিস রউফ।