সাকিব-তামিমদের নিয়ে তাওহিদ হৃদয়: একসময় আমরাও থাকব না
বাংলাদেশ দলে কে কে নেই, এই আলোচনাটা ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকেই চলছে। তামিম ইকবাল বিশ্বকাপের আগে থেকেই দলে নেই। চোটের কারণে সাকিব আল হাসানও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ খেলেননি, নেই চলমান নিউজিল্যান্ড সফরেও। মাহমুদউল্লাহও দলের বাইরে। তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেনের মতো নিয়মিতদেরও চোটের কারণ পাচ্ছে না বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ছুটিতে ছিলেন লিটন দাসও। তিনি আবার চোটে পড়ে চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজে দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলতে পারেননি। শঙ্কা আছে তাঁর শেষ ম্যাচে খেলা নিয়েও।
এত ‘নেই’–এর ভিড়েও বাংলাদেশ দল এমন কীর্তি গড়েছে, যা আগে বাংলাদেশের কোনো দলই করতে পারেনি। সাকিব-তামিমদের নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজাও বাংলাদেশের সম্ভাব্য সেরা দল নিয়ে নিউজিল্যান্ডে সফর করেছেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে হারের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেননি। নাজমুল হোসেনের দল এবার প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জিতে তা করে দেখিয়েছেন। মুমিনুল হকের টেস্ট দল গত বছর তো কিউইদের তাদের মাটিতে টেস্টেও হারিয়েছে।
দুই প্রজন্মের ক্রিকেটারদের দুই রকম অর্জন আজ নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাংলাদেশ দলের তরুণ ব্যাটসম্যান তাওহিদ হৃদয়ের সামনে তুলে ধরেছিলেন সংবাদকর্মীরা। সেসব শুনে হৃদয় বলেছেন, ‘আমাদের বড় ভাই যাঁরা ছিলেন, তাঁরা আমাদের দেশের জন্য অনেক কন্ট্রিবিউট (অবদান) করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে তাঁদের মধ্য থেকে কয়েকজন এখানেও খেলতেন। তাঁদের ব্যাপারে আসলে আমি কিছু বলব না। এটা এমন একটা জায়গা, সবাই সব সময় থাকবে না। এখন আমরা আছি, একসময় আমরা থাকব না, এটাই স্বাভাবিক।’
তবে জাতীয় দলের হয়ে যখন যে-ই খেলুক, সবাই জেতার জন্যই খেলে। হৃদয় তা মনে করিয়ে দিলেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে যখন যে খেলোয়াড়ই খেলতে নামুক, চেষ্টা করে দেশকে দেওয়ার এবং দায়িত্ব নেওয়ার। আমরা খেলোয়াড়েরা জেতার জন্যই মাঠে নামি। কে আছে, কে নেই, এত কিছু দেখি না। আমাদের মধ্যে ওই শরীরী ভাষা থাকে, যেন জিততে পারি। আমাদের সবার বিশ্বাস আছে, ভালো করব।’
বাংলাদেশ দল ভালো করছেও। ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হারলেও শেষ ম্যাচে জিতে ধবলধোলাই এড়িয়ে সে ছন্দ ধরে রেখেছে টি-টোয়েন্টিতেও। সিরিজের প্রথম ম্যাচ জেতার পর দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতেও ভালো অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টির কারণে গতকালের সেই ম্যাচ পরিত্যক্ত না হলে হয়তো কিউইদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ইতিহাসটা কালই রচিত হতো। সে জন্য আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে আগামীকাল সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলবে দুই দল।
তৃতীয় ও শেষ ম্যাচের আগে দলের আবহটা জানা গেল হৃদয়ের কথায়, ‘দলের পরিবেশ ভালো আলহামদুলিল্লাহ। দল ভালো করলে সবকিছুই ভালো থাকে, এটাই স্বাভাবিক। সবচেয়ে ভালো জিনিস হলো সবাই সবাইকে সমর্থন করছি। কোচ থেকে শুরু করে সবার এই বিশ্বাস আছে যে আমরা পারব। গত কিছুদিন এই ফরম্যাটে ভালোও করছি।’
এ বছর বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি রেকর্ডও তা-ই বলছে। ২০২৩ সালে ১০টি টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ৮টি, ১টি পরিত্যক্ত। আগামী জুনেই যেহেতু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এই জয়ের ধারা নিশ্চয়ই বজায় রাখতে চাইবে বাংলাদেশ। হৃদয়ও তা–ই বললেন, ‘আমাদের সবগুলো ম্যাচই এখন গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বেশি সময় নেই। আর আমাদের হাতে অনেক ম্যাচ আছে, সেটাও না। সামনে হয়তো বিপিএল আছে, এরপর সিরিজ আছে।’
সে জন্য প্রতিটি ম্যাচই এখন খেলোয়াড়দের জন্য বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ। হৃদয় জানান, ক্রিকেটাররাও সেভাবেই ভাবছেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের জন্য ম্যাচগুলো অনেক বড় সুযোগ। আমরা চেষ্টা করব সুযোগ কাজে লাগানোর। সামনে যেহেতু বিশ্বকাপ, আমার মনে হয়, সবাই এটা জানে। সেভাবে সবাই কাজ করছে।’
শেষ কথাটায় হৃদয়ের নিজের ভাবনার কথাও ফুটে উঠল। ওয়ানডে বিশ্বকাপটা তাঁর ভালো কাটেনি। ৭ ম্যাচ খেলে ৬ ইনিংসে ব্যাট করে হৃদয়ের রান ৩২.৮০ গড়ে ১৬৪। আরও একটি বিশ্বকাপের আগে ২০ ওভারের খেলা দিয়ে ছন্দে ফিরতে চাইবেন ২৩–এর এই তরুণ। গত বিপিএল দিয়ে আলোচনায় আসা হৃদয় দেশের হয়ে এখন পর্যন্ত ১০টি টি-টোয়েন্টিতে ৮ ইনিংসে ব্যাট করে রান করেছেন ১৭৫। ২৫ গড় ও ১৩১ স্ট্রাইক রেট। আরও একটি বিপিএল যখন দুয়ারে, তার আগে সেই হার্ড হিটার হৃদয়কে দেখতে পাবে তো বাংলাদেশ?