বিপিএলের ‘নতুন’ পাঁচ
লিগ পর্ব শেষ, বিপিএল এখন শেষের কাছাকাছি। টিকে থাকা শেষ চার দল আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নামবে ফাইনালের মিশনে। তার আগে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলমান এই আসরের দিকে ফিরে তাকালে নতুন কী চোখে পড়ছে? খোঁজার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো।
বিদেশিদের আসা-যাওয়া
২০২২-২৩ মৌসুমে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের দুনিয়ায় আবির্ভাব নতুন দুটি লিগের। দক্ষিণ আফ্রিকায় এসএ ২০ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইএল টি-২০—দুটি লিগই শুরু হয় ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে। আগের বছরগুলোতে ডিসেম্বর-জানুয়ারি ছিল বিপিএল ও বিগ ব্যাশের সময়। ফলে টাকা খরচ করলেই ফ্র্যাঞ্চাইজিরা পেয়ে যেত তারকা ক্রিকেটারদের। এবার প্রত্যাশিতভাবেই বড় বাজেটের দুটি নতুন টুর্নামেন্টের দিকেই ঝুঁকেছেন ক্রিকেটাররা, ফলে বিদেশি ক্রিকেটার সংকটে পড়েছে বিপিএল। যে কারণে বিপিএলও এবার ড্রাফটের বাইরের চুক্তিতে কোনো সীমা রাখেনি। দলগুলোও সে সুবিধা নিয়েছে। টুর্নামেন্টজুড়ে বিদেশি ক্রিকেটাররা ছিলেন আসা-যাওয়ার মধ্যে। এতটাই যে, কে কবে আসছেন, সেই খোঁজ রাখাই কঠিন ছিল। কে কোন দলে খেলছেন, তা মনে রাখাও।
অনভিষিক্ত ক্রিকেটারের হিড়িক
বিদেশি ক্রিকেটারের চাহিদা মেটাতে বিপিএলের দলগুলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনভিষিক্ত অনেক ক্রিকেটারকে খেলিয়েছে। পিএসএল, দ্য হানড্রেড, সিপিএলে ভালো খেলা ক্রিকেটাররা বিপিএল খেলার সুযোগ পেয়েছেন, যাঁদের অনেকেই নিজ দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি। পাকিস্তানের উসমান খানের কথাই ধরা যাক। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে এবারের বিপিএলে সেঞ্চুরি করেছেন উসমান। পিএসএলে যিনি খেলেছেন মাত্র দুই মৌসুম, নিজ দেশ পাকিস্তানের হয়ে খেলার ইচ্ছা নেই তাঁর। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাসপোর্টধারী উসমান চান সে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে।
রানপ্রসবা উইকেট
২০ ওভারের খেলার যে আকর্ষণ, সেই চার-ছক্কা থেকে বরাবরই বঞ্চিত ছিলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দর্শক। সারা বছর খেলা হওয়ায় এই মাঠের উইকেট থাকে বিধ্বস্ত। টি-টোয়েন্টিসুলভ ব্যাটিংয়ের জন্য যা মানানসই ছিল না কখনোই। এবার উল্টোটা দেখা গেছে। ক্রিকেটার ও কোচরা মিরপুরের উইকেটের প্রশংসা করেছেন। মিরপুরে বড় স্কোর হয়েছে, সে রান সফলভাবে তাড়াও করেছে দলগুলো। বিপিএলে ঢাকা পর্বের প্রথম ৮ ম্যাচে প্রথম ইনিংস গড় স্কোর ছিল ১৫৭.২৫ রান। চট্টগ্রাম ও সিলেটে তো বরাবরই ভালো রান হয়, এবারও ব্যতিক্রম ছিল না।
স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের দাপট
বিদেশি তারকাদের ভিড় না থাকায় স্থানীয় ব্যাটসম্যানরা এবার টপ অর্ডারে খেলার বেশি সুযোগ পেয়েছেন। উইকেটও ভালো ছিল। সব মিলিয়ে এবার স্থানীয় ব্যাটসম্যানরা দাপট দেখাচ্ছেন শুরু থেকেই। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সাধারণত বিদেশিদের ভিড় বেশি থাকে। গত ৮ মৌসুমের মধ্যে ৬ মৌসুমেই বিপিএলে সর্বোচ্চ রান ছিল বিদেশিদের। দ্বিতীয় আসরে মুশফিকুর রহিম (৪৪০), চতুর্থ আসরে তামিম ইকবাল (৪৭৬) সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। এবার এখন পর্যন্ত বিপিএলে সর্বোচ্চ পাঁচ রান সংগ্রাহকের চারজনই দেশি।
সত্যিকার স্বাগতিক সিলেট স্ট্রাইকার্স
বিভিন্ন জেলার নামে যেহেতু দল, ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ভিত্তিক টুর্নামেন্টে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো নিজ নিজ অঞ্চলের সমর্থন পাবে—এ রকম একটা ধারণা ছিল বিপিএলের শুরুতে। কিন্তু ভেন্যু যেহেতু তিনটি, সে কারণে এক দশকেও বিপিএলে সেই অঞ্চলভিত্তিক সমর্থন এবং ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে’ আবহ তৈরি হয়নি। তবে ব্যতিক্রম এবারের বিপিএলে সিলেট-পর্ব। সিলেট স্ট্রাইকার্স দলকে উজ্জীবিত করতে মাঠে দর্শক গেছেন দল বেঁধে। শহরজুড়ে ছিল মাশরাফিদের নিয়ে উন্মাদনা। নিজেদের দলের জন্য এমন সমর্থন বিপিএলে আগে কখনো দেখা গেছে কি না, মনে পড়ে না।