মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়া পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন, বর্তমানে র্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বর দলও। নিউজিল্যান্ড আছে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের তৃতীয় স্থানে, দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ নম্বরে। নবম স্থানে থাকা বাংলাদেশের ঠিক ওপরে শ্রীলঙ্কা। হঠাৎ করে মেয়েদের টি-টোয়েন্টির এই পাঁচটি দলের ফিরিস্তি দেওয়ার একটাই কারণ—এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাঁচ দল পড়েছে এক গ্রুপে।
সব জানার পর কী মনে হয়, এ গ্রুপে শীর্ষ দুই দলের মধ্যে থেকে বাংলাদেশ কি সেমিফাইনালে খেলতে পারবে! ভাবনাটা বাস্তবসম্মত হলে সেটা ‘না’-ই হওয়ার কথা। এ কারণেই কি না বিশ্বকাপ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের বড় কোনো স্বপ্ন দেখায়নি দল। তবে যেকোনো টুর্নামেন্ট থেকেই কিছু পাওয়ার আশা তো থাকেই। বাস্তবতা মেনে বাংলাদেশের দলের সেই আশা, অন্তত একটি হলেও জয় নিয়ে ফেরা। সেই জয়ের আশাটা কোন দলের বিপক্ষে বেশি, সেটাও র্যাঙ্কিং থেকে অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। শ্রীলঙ্কা!
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রেখে সেই আশার পালটা একটু বেশি ফুলিয়েছেন। আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে বাংলাদেশের মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-অভিযান। এর আগে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে নিগার সুলতানা বলেছেন, স্বপ্নের পরিধিটা গ্রুপপর্বের সীমানা পেরিয়ে সেমিফাইনালে উঁকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তাঁর দল।
এটাও বাস্তবতা যে মানুষ আশা নিয়েই ঘর করে, আশাতেই পকেট ভরে। কিন্তু ছেলেদের হোক বা মেয়েদের—বাংলাদেশের ক্রিকেটে পকেট থেকে কোনো এক ফাঁকে চেনা আধুলি পড়ে যাওয়ার গল্প কম নয়! ছেলেদের ক্রিকেটে বিশ্বকাপ আর এশিয়া কাপে এমন গল্প অনেক আছে। মেয়েদের ক্রিকেটে ঘরের মাঠে সর্বশেষ এশিয়া কাপেও অমন হতাশার গল্পই লেখা হয়েছে। প্রথম পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে ডিএলএস পদ্ধতিতে ৩ রানে হেরে যাওয়ায় আর সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
কিন্তু এবার যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে হারাতে চায়, সেটা কতটা বাস্তবসম্মত, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যান আর সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলের পারফরম্যান্সের আলোকে বিচার করে দেখা যাক।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের অভিষেক ২০১৪ সালে। ঘরের মাঠের সেই টুর্নামেন্টে গ্রুপপর্বের প্রথম তিন ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড ও ভারতের কাছে হারে বাংলাদেশ। তবে চতুর্থ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেয় ৩ রানে। পরে স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকেও হারায় বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্য বলতে ওই দুটি জয়।
২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাওয়া জয়টাই বাংলাদেশকে আরেকবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর প্রেরণা জোগাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এর পরের তিন বিশ্বকাপের দুটিতে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একই গ্রুপে পড়েছিল। দুবার মুখোমুখি হয়ে দুটি ম্যাচেই হেরেছে তারা।
বিশ্বকাপের ওই দুঃস্মৃতি নিগার সুলতানারা মনে করতে চাইবেন না, সেটিই স্বাভাবিক। তাহলে প্রেরণা খুঁজতে কোথায় তাকাবেন নিগাররা? বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের মেয়েরা প্রেরণা খুঁজতে পারেন নিজেদের গত বছরের পারফরম্যান্স থেকে।
২০২২ সালে ১৭টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১০টিতেই জিতেছে নিগাররা, বাকি ৭টিতে হার। এই ৭টির মধ্যে আছে সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে ৩ ম্যাচের সিরিজের সবকটিতে হারও। আজ যেহেতু প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, তাই ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিগারদের পারফরম্যান্সের দিকে তাকানো যায়। সেখানে অবশ্য আশার আলো নেই। দুটি ম্যাচেই যে হেরেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ২০২২ সালে ২১টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে ১১টিতে হেরেছে তারা, জিতেছে ১০টিতে।
পরিসংখ্যানের আলোকে কি বুঝলেন—টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আজ নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের আশা কি শুধুই দুরাশা!