যে কারণে বিশ্বকাপের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে নেই রাসেল–নারাইন
ডোয়াইন ব্রাভো, কাইরন পোলার্ড, ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইন—তাঁদের কাউকে ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল। এর আগে কখনোই এমন হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে নতুন যুগের শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা মনে হয় এই দল দিয়েই হলো।
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকেই এই পথে পা বাড়িয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। পরিকল্পনাও করেছিল টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের ‘বিগ ফাইভ’কে ছাড়া, যা চূড়ান্ত রূপ পাচ্ছে আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আধিপত্যের প্রতীক বলা যায় এই পাঁচ ক্রিকেটারকে। প্রত্যেকেই জিতেছেন বিশ্বকাপ, সেই জয়ে রেখেছেন বড় ভূমিকা। বিশ্বব্যাপী টি–টোয়েন্টির ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও তাঁদের নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। এ কারণেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে নিয়মিত খেলুন না খেলুন, যেকোনো সিরিজের দল ঘোষণার আগে তাঁদের নিয়ে আলোচনা হয়েই থাকে। তবে এবারের বিশ্বকাপের আগে অবশ্য আলোচনা হয়েছে শুধু আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইনকে নিয়ে। কারণ, কাইরন পোলার্ড ও ডোয়াইন ব্রাভো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আগেই সরে দাঁড়িয়েছেন।
অবসর না নিলেও ২০২১ বিশ্বকাপের পরে ক্রিস গেইলকে যে আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যাবে না, তা–ও অনেকটাই নিশ্চিতই ছিল। রাসেল, নারাইন আলোচনায় থাকলেও শেষমেশ বিশ্বকাপে জায়গা আর হয়নি। এই দুই ক্রিকেটারের বিশ্বকাপ দলে না থাকার কারণটা অবশ্য ভিন্ন। রাসেল বাদ পড়েছেন ফর্মের কারণে আর নারাইন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আর খেলতে চান কি না, তা নিয়েই সংশয় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের।
গত আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আবার খেলার ইচ্ছার পাশাপাশি আরও বিশ্বকাপ জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছিলেন রাসেল। ইংল্যান্ডের দ্য হান্ড্রেড-এ খেলার সময় ধারাভাষ্যকার ড্যারেন স্যামির সঙ্গে কথোপকথনে জানিয়েছিলেন, আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চান তো বটেই, জিততে চান আরও একটি-দুটি বিশ্বকাপ।
তবে রাসেলের এ স্বপ্ন পূরণে জন্য শর্ত দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক ডেসমন্ড হেইন্স। সেই শর্ত ছিল, ক্যারিবিয়ান বোর্ডের কোনো টুর্নামেন্টে ভালো করলে তাঁকে জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করা হবে। সে শর্ত পূরণ করতে পারেননি রাসেল। এবারের সিপিএলে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের হয়ে এখন পর্যন্ত বলার মতো তেমন কিছু করতে পারেননি।
হেইন্স তাই স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, রাসেলের টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্স নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নন। সে জন্যই দলে রাসেলকে রাখা হয়নি। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ চলাকালীন ইয়ান বিশপকে হেইন্স বলেছেন, ‘আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে আমাদের একটি বৈঠক হয়েছিল। আমরা তার পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নই, যেভাবে আমরা তাকে দেখতে চাই, সে ততটা ভালো পারফর্ম করছে না। রাসেলের এই অবস্থায় আমরা ঠিক করেছি (তাকে ছাড়াই) সামনে এগিয়ে যাব। এমন কাউকে নিতে চাই, যে টি-টোয়েন্টিতে ভালো ফর্মে আছে।’
রাসেল ফর্মে না থাকলেও দারুণ ফর্মে ছিলেন সুনীল নারাইন। এখন পর্যন্ত সিপিএলে ৪.২৫ ইকোনমিতে ৬ উইকেট নিয়েছেন। পাশাপাশি ব্যাট হাতেও খেলেছেন কয়েকটি কার্যকরী ইনিংস। এমন পারফরম্যান্স করলেই–বা কি, যদিও জাতীয় দলের হয়ে খেলার আগ্রহই না থাকে!
অধিনায়ক নিকোলাস পুরানও দলে চেয়েছিলেন নারাইনকে। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে মেরুন জার্সিতে আবারও খেলার আগ্রহও নাকি প্রকাশ করছিলেন এই বোলিং অলরাউন্ডার। তবে সেই আগ্রহের কথা নারাইন বোর্ডকে জানাননি। এক সংবাদ সম্মেলনে হেইন্স এই দাবিই করেছেন, ‘নারাইন খেলতে চায়, এমন কিছু আমাকে বলেনি। অধিনায়কের সঙ্গে ওর কথা হয়েছিল, তবে আমার মনে হয়েছে ও আর খেলতে চায় না। পুরান বলেছিল, নারাইনের সঙ্গে ওর কথা হয়েছে, কিন্তু আমি আসলে নিশ্চিত নই ও খেলতে চায় কি না!’