প্রথম ইনিংসটা যদি হয় আজম খানের, তাহলে দ্বিতীয় ইনিংসটা পাকিস্তানের আরেক ব্যাটসম্যান উসমান খানের। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও খুলনা টাইগার্সের ম্যাচের নায়ক বলতে গেলে এ দুজনই। দুজনই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে নিজ দলের ইনিংসটাকে টেনেছেন। তবে শেষ হাসিটা হেসেছে উসমানের চট্টগ্রামই। তাঁর ৫৮ বলে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে খুলনার ১৭৮ রান ৯ উইকেট হাতে রেখে তাড়া করেছে চট্টগ্রাম। এবারের বিপিএলে এটি চট্টগ্রামের প্রথম জয়। আর দুটি ম্যাচ খেলে দুটিতেই হেরেছে খুলনা।
এবারের বিপিএলে চট্টগ্রামের প্রথম ম্যাচের ওপেনার ছিলেন ডারউইস রাসুলি ও মেহেদী মারুফ। প্রথম ম্যাচের ব্যর্থতায় দ্বিতীয় ম্যাচেই ব্যাটিং অর্ডার ঢেলে সাজায় দলটি, সেটি কাজেও দিয়েছে। খুলনার বড় রান তাড়া করতে নেমে চট্টগ্রাম ১৪১ রান পেয়ে যায় উদ্বোধনী জুটি থেকেই। ম্যাক্স ও’ডাউড ও উসমান মিরপুর স্টেডিয়ামের রাতের কন্ডিশনের সুবিধাটা নিতে পেরেছেন দুই হাত ভরে। ও’ডাউড ৫০ বলে ৫৮ রানের ধীরগতির ইনিংস খেললেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে রানরেটের চাহিদা পুষিয়ে দিয়েছেন উসমান একাই।
৩৪ বলে প্রথম ফিফটি পূর্ণ করেন। পরের ফিফটিটি এসেছে আরও দ্রুত, ২১ বলে। ১৯তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ওয়াইড ইয়র্কারে অবিশ্বাস্য এক ছক্কায় তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন উসমান। এর পরের ওভারেই ১০টি চার ও ৫টি ছক্কার সৌজন্যে ১০৩ রানে অপরাজিত থেকে ব্যাট উঁচিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। সব মিলিয়ে বিপিএলের ২৭তম সেঞ্চুরি এটি। পাকিস্তানের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই টুর্নামেন্টে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন ২৭ বছর বয়সী উসমান।
বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি করেছেন খুলনা টাইগার্সের আজম খানও। সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক মঈন খানের ছেলে আজমের জন্য লেগ সাইডের বিশাল বাউন্ডারি অতটা বড় মনে হচ্ছিল না। তাঁর সেঞ্চুরিটা এসেছে শেষ ওভারে। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর শেষ ওভারের চতুর্থ বলেই মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে আজম পৌঁছে যান ৯৭ রানে। পরের বলটি উড়ে গেল স্কয়ার লেগ বাউন্ডারির ওপর দিয়ে। বিশাল ছক্কায় স্কোরবোর্ডে সংখ্যাটা পাল্টে গেল ১০৩–এ। সঙ্গে সঙ্গে ভাবলেশহীন চেহারা নিয়ে আজম হাঁটু গেড়ে বসেন ঠিক উইকেটের মাঝখানে। দুই হাত দুই পাশে ছড়িয়ে দিয়ে সেঞ্চুরি উদ্যাপন করলেন ২৪ বছর বয়সী পাকিস্তানি। অপরাজিত ইনিংসে স্রেফ ৫৮ বলে ১০৯ রান করেছেন আজম। ৯টি চারের সঙ্গে ৮টি ছয়ে সাজিয়েছেন নিজের সেঞ্চুরি।
অথচ টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনার শুরুটা তেমন ভালো ছিল না। চার ওভারের মধ্যে স্রেফ ১২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে ছিল তারা। আজমের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে দল পায় লড়াই করার বড় পুঁজি। ৪ নম্বরে নেমে শুরু থেকেই তিনি ছিলেন বাউন্ডারির খোঁজে। ১৪তম ওভারে ব্যক্তিগত ফিফটিতে পৌঁছান আজম। ৩৩ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল আজমের প্রথম ফিফটিতে। এরপর রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন আজম, তাতে দ্রুতই দৃষ্টিসীমায় চলে আসে সেঞ্চুরি। পরের পঞ্চাশ রান করতে তাঁর লাগে স্রেফ ২৪ বল। তবে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছে আরেক সেঞ্চুরিয়ান উসমানের হাতে। পুরস্কার নিতে এসে উসমান জানালেন, ‘আমাদের কোচ জুলিয়ান উড বলেছে, যে রানই হোক, ম্যাচটা যেন শেষ করে আসি। আমরা শুরুতে ধীরে খেললেও শেষ পর্যন্ত সেটা করতে পেরেছি। কারণ, উইকেটে যত সময় কাটিয়েছি, ব্যাটিং তত সহজ হয়েছে।’