লজ্জা এড়িয়ে অনন্য কীর্তি মুমিনুল–তাইজুলের
মুমিনুল হক তখন ক্রিজে। চট্টগ্রাম টেস্টে আজ তৃতীয় দিনে পঞ্চম ওভারের খেলা চলছিল। কাগিসো রাবাদার তিন বলের মধ্যে ফিরলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহিদুল ইসলাম। গতকাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে যে স্কোরটি ছিল ৪ উইকেটে ৩৮, সেটাই হয়ে দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ৪৮। বাংলাদেশ তখন নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ঘরের মাঠে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার শঙ্কায়। প্রায় তিন বছর আগে মিরপুর টেস্টের সেই দুঃস্বপ্ন ফিরবে না তো!
পাকিস্তানের বিপক্ষে সেবার নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এবার চট্টগ্রামে সেই শঙ্কা থাকলেও মুমিনুল ও তাইজুল ইসলাম ভেবে রেখেছিলেন অন্য কিছু। তাইজুল দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে নামার পর নবম উইকেটে তাঁর সঙ্গে ১৭২ বলে ১০৩ রানের জুটি গড়েন মুমিনুল।
মুমিনুল–তাইজুলের এই জুটির মধ্য দিয়ে নতুন এক নজিরও দেখল টেস্ট ক্রিকেট। কুলীন এই সংস্করণের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশই প্রথম দল হিসেবে ৫০ রানের কমে ৮ উইকেট হারানোর পর নবম কিংবা তার পরের উইকেট জুটিতে ১০০+ রান তোলার নজির গড়ল।
মধ্যাহ্ন বিরতি পেরিয়ে দ্বিতীয় সেশনে জুটিটি যখন ভেঙেছে, তখন অন্তত নিশ্চিত হারের মধ্যেও ‘পাল্টা লড়াই’ শব্দ দুটি বলার বন্দোবস্ত করে ফেলেন দুজন। ৮ উইকেটে ৪৮ রানে ক্রিজে নামা তাইজুলের এই জুটিতে অবদান ৮৫ বলে ২২, মুমিনুলের ৮৭ বলে ৭২। ইনিংসে ৪৩তম ওভারে মুমিনুল ব্যক্তিগত ৮২ রানে আউট হওয়ায় ভেঙেছে এই জুটি।
মুমিনুল–তাইজুলের এই জুটির মধ্য দিয়ে নতুন এক নজিরও দেখল টেস্ট ক্রিকেট। কুলীন এই সংস্করণের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশই প্রথম দল হিসেবে ৫০ রানের কমে ৮ উইকেট হারানোর পর নবম কিংবা তার পরের উইকেট জুটিতে ১০০+ রান তোলার নজির গড়ল।
এর আগে ৬৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে নবম উইকেট জুটিতে ১০০–এর বেশি রান তোলার নজির দেখা গেছে। ১৯৬৭ সালে ওভাল টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এমন পাল্টা লড়াই করেছিলেন পাকিস্তানের আসিফ ইকবাল ও ইন্তিখাব আলম। জাভেদ বুর্কি দলীয় ৬৫ রানে আউট হওয়ার পর নবম উইকেটে ১৯০ রানের জুটি গড়েছিলেন আসিফ ও ইন্তিখাব।
দলীয় সংগ্রহ ১০০–এর কমে ৮ উইকেট হারিয়ে নবম উইকেট জুটিতে ১০০–এর বেশি রানের নজির আছে আরও একটি। ১৯৮৩ সালে কানপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে ৮ উইকেট হারিয়েছিল ভারত। এরপর নবম উইকেট জুটিতে ১১৭ রান যোগ করেন রজার বিনি ও মদন লাল।
তবে দলীয় ১০০ রানের কমে ৯ উইকেট হারিয়ে দশম উইকেট জুটিতেও ১০০–এর বেশি রান করার নজির আছে। ১৯৮০ সালে ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯২ রানে ৯ উইকেট হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। এরপর দশম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১১৭ রানের জুটি গড়েন পিটার উইলি ও বব উইলিস। ইংল্যান্ড এরপর দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে।
মুমিনুল–তাইজুলের জুটিটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের যেকোনো উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ। টেস্ট এ নিয়ে চতুর্থবার নবম উইকেটে ন্যূনতম ১০০ রানের জুটি দেখল বাংলাদেশ। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে নবম উইকেটে সর্বোচ্চ ১৯১ রানের জুটি গড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিন আহমেদ।
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানে অলআউট হওয়ার পর তাদের ফলো–অন করিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪১৬ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩ উইকেটে ৪২ রান তুলেছে বাংলাদেশ।